ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান

প্রকাশিত: ২০:১২, ৩ মার্চ ২০২৪

ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান

সম্পাদকীয়

দৈনিক জনকণ্ঠের শনিবারের তৃতীয় পৃষ্ঠায় প্রকাশিত একটি খবর যেমন কৌতূহল উদ্দীপক, তেমনি উদ্বেগজনকও বটে- ‘ধানমণ্ডিতে এক ভবনে ১৮ রেস্তোরাঁ’। কাগজে কলমে ধানম-ি একটি আবাসিক এলাকা হিসেবে স্বীকৃত বহু আগে থেকেই। তাই বলে একটি আবাসিক ভবনে এত হোটেল-রেস্তোরাঁ একসঙ্গে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি কর্তৃপক্ষের কোনরকম অনুমোদন ছাড়াই, তাই বা কি করে সম্ভব? বাস্তবে তাই হচ্ছে এবং তা শুধু ধানম নয়, বরং রাজধানীজুড়েই।

সত্যি বলতে কি, ঢাকার অলিগলি সদর-অন্দরে অগণিত হোটেল-রেস্তোরাঁ রয়েছে। যেগুলো গড়ে উঠেছে সময় ও চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে। অধুনা নগরজীবনে ‘ইটিং আউট’ বা বাইরে সপরিবারে দুপুর কিংবা রাতের খাবার গ্রহণ পেয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। যেমন- রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র বেইলি রোড একদা নাটকপাড়া হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেলেও পরবর্তীতে শাড়ি-পোশাকসহ বর্তমানে পরিণত হয়েছে ফুড কোর্ট বা ফুড ইয়ার্ড হিসেবে। এরকম হয়েছে রাজধানীর অন্যত্রও। যেমন- ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকা, খিলগাঁও, গুলশান, বনানী-উত্তরা, বারিধারা ও অন্যান্য স্থানে।

এসব হোটেল-রেস্তোরাঁ অত্যন্ত আলো ঝলমলে দৃষ্টিনন্দন সুন্দর সুন্দর নামে নামাঙ্কিত এবং নানাবিধ রসনালোভন খাবারদাবারে সমৃদ্ধ বিধায় ভোজনরসিকদের নিয়মিত আকর্ষণের জন্য যথেষ্ট বিবেচিত হওয়ার দাবি রাখে। তবে প্রদীপের নিচে গাঢ় অন্ধকারের মতো যে প্রশ্নটি অনিবার্য উঠে আসে তা হলো- কতটা নিরাপদ অথবা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ এসব হোটেল-রেস্তোরাঁ? সর্বশেষ, বেইলি রোডের গ্রীন কোজি কটেজ ভবনে সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড আমাদের প্রত্যেকের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যে, প্রকৃতপক্ষে অপরিণামদর্শিতার চূড়ান্ত পরিণতি কি মর্মান্তিক হতে পারে?

ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকায় কমপক্ষে অর্ধ শতাধিক হোটেল-রেস্তোরাঁ রয়েছে। অনেক বহুতল ভবনে রয়েছে একাধিক রেস্তোরাঁ। দুঃখজনক হলো, কোনোটিরই ট্রেড লাইসেন্স পর্যন্ত নেইÑ আনুষঙ্গিক অন্যান্য অনুমোদন বা ছাড়পত্র তো দূরের কথা! সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে আবাসিক এলাকায় অবাধে চলছে বাণিজ্যিক কার্যক্রম বছরের পর বছর ধরে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নাকের ডগায়। আর এর অনিবার্য খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে অর্থের বিনিময়ে রসনাবিলাস করতে গিয়ে। কোনো একটি দুর্ঘটনা ঘটলে সবাই নড়েচড়ে বসে। কিছুদিন হৈচৈ, লেখালেখি হয় গণমাধ্যমে।

টিভিতে দেখানো হয় মর্মন্তুদ লাইভ সিনারিও। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তরফে দেওয়া হয় কঠোর সতর্কবার্তা ও হুঁশিয়ারি। গঠন করা হয় একাধিক তদন্ত কমিটি। ভবন মালিকসহ সংশ্লিষ্ট হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিকদের জেল-জরিমানাসহ ক্ষতিপূরণ আদায়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। অচিরেই সব মিলিয়ে যায় সময়ের আবহে বিস্তৃতির আড়ালে। 
ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবন মার্কেট, হোটেল-রেস্তোরাঁর অন্যতম সমস্যা প্রায় সর্বত্র জরুরি নির্গমন পথের অভাব, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার অনুপস্থিতি, ফায়ার এলার্ম বা স্মোক ডিটেক্টর না থাকা, বিল্ডিং কোড না মেনে অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ। তদুপরি লিফট, বিদ্যুতের লাইন, গ্যাস সিলিন্ডার, আবাসিক ভবনে গুদাম ইত্যাদি।

সে অবস্থায় আমাদের প্রত্যাশা, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করে রাজধানীর সব আবাসিক ভবন, বিশেষ করে যেসব স্থানে রয়েছে হোটেল-রেস্তোরাঁসহ বাণিজ্যিক কার্যক্রম, সেগুলো যাচাই-বাছাই করে ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়া হোক। অগ্নিদুর্ঘটনায় আমরা আর কোনো মৃত্যুর মিছিল দেখতে চাই না।

×