ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

সহিংসতা নয় সমঝোতার রাজনীতিই কাম্য

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী

প্রকাশিত: ২০:৩৯, ২৮ অক্টোবর ২০২২

সহিংসতা নয় সমঝোতার রাজনীতিই কাম্য

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে প্রায় বিপর্যস্ত পুরো বিশ্বের আর্থ

আমাদের সকলের জানা করোনা অতিমারী অতিক্রান্তে সমুদয় প্রাক্কালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে প্রায় বিপর্যস্ত পুরো বিশ্বের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যবস্থা। উন্নত-উন্নয়নশীল-অনুন্নত প্রতিটি দেশেই ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি জনজীবন-জীবিকা নির্বাহে দুঃসহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এর প্রবল আঘাত প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকেও অনেকাংশে করছে আতঙ্কিত। সামগ্রিক অর্থনীতিতে চলমান অস্থিরতা খুব সহজে কাটবে না বলেই অনুমেয়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার চাপে থাকা অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের মূল্য জনগণের উপার্জনের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষায় নানামুখী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নতুন করে আশঙ্কা ছড়াচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। বিশেষজ্ঞদের মতে রাজনৈতিক সংঘাত ছড়িয়ে পড়লে দেশের অর্থনৈতিক সংকট অধিকতর ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহ করবে, যা কারও জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে না।

দেশের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর সহনশীল ভূমিকা প্রত্যাশিত। ইতোমধ্যে বিরোধী দলের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সংঘাত-সংঘর্ষসহ হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। আগামী ডিসেম্বর মাসকে ঘিরে উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে রাজনীতির মাঠ। ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের মাঠ দখলের ঘোষণায় দেশের আপামর জনমনে গভীর উৎকণ্ঠা নির্মিত হচ্ছে।  
অর্থনীতিবিদদের মতে অর্থনীতির বিপর্যস্ততায় রাজনীতি বিপন্ন হয়ে পড়ে। অর্থনীতি যদি ভালো থাকে, মানুষের আয়ের উপায় ও ক্ষুধা নিবারণ নিশ্চিত করা যায় তখন রাজনৈতিক সহিংসতা হালে খুব একটা পানি পায় না।

বিজ্ঞজনের মতানুসারে  যে কোনো জাতিরাষ্ট্রের ক্রান্তিকালে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তা সর্বাধিক। কোন ধরনের অনর্থক ইস্যুকে কেন্দ্র করে সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় শুধু রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে অরাজক পরিবেশ সৃষ্টির অপতৎপরতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। জনগণের মঙ্গলের জন্য রাজনীতির বুলি উচ্চারণে জীবন বিপদগ্রস্ত করার অপরাজনীতির আশ্রয় গ্রহণ মোটেও সমীচীন নয়। বিশ্বব্যাপী সম্ভাব্য মহামন্দার পূর্বাভাসকে ন্যূনতম আমলে না নিয়ে রাজপথ দখলের হুমকি-পাল্টা হুমকি বা ক্ষমতার বলয়কে কুক্ষিগত করার অপকৌশল সর্বত্রই প্রত্যাখ্যাত।

বাংলাদেশ ও জনগণের সর্বোচ্চ ত্যাগ-অর্জনের মাস হচ্ছে বিজয়ের ডিসেম্বর। স্ব স্ব দলের পক্ষে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ সম্মেলন-সমাবেশ অবশ্যই রাজনৈতিক সংস্কৃতির ইতিবাচক পরিচায়ক। মহান স্বাধীনতার বিজয় গৌরবে উদ্দীপ্ত মাসে কিঞ্চিৎ পরিমাণ রাজনৈতিক বিরোধ-বিচ্ছেদ জনগণকে হতাশাগ্রস্ত করবেই। ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’ অমূল্য-পবিত্র সাংবিধানিক বিধানবার্তায় বিশ্বাসী সকল রাজনৈতিক দল-উপদলের কর্মযজ্ঞের মৌলিক উদ্দেশ্য হওয়া উচিত জনগণের জীবনমান-সম্পদ-নিরাপত্তা অক্ষুণ্ণ রাখার প্রায়োগিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন।

রাজনৈতিক শোডাউনের নামে জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও দেশপ্রেমিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ শক্তিকে অযথা প্রশ্নবিদ্ধ করার যৌক্তিকতা আছে বলে মনে হয় না। বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে নানামুখী হুঙ্কার মোকাবিলায় ইতোমধ্যেই আগাম ব্যবস্থা গ্রহণে মাঠপর্যায়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাসহ জোরদার করা হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। প্রাসঙ্গিকতায় বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমরা আইন ও বিধি অনুযায়ী আমাদের দায়িত্ব পালন করব। পুলিশ এখন ইন্টেলিজেন্সনির্ভর কাজ করে। আগাম তথ্যের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়। এ কারণে গত কয়েক বছর ধরে দেশে তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

ডিসেম্বর মাসে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে বলে আমাদের কাছে তথ্য এসেছে। ঐ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা আমাদের প্রস্তুতি শুরু করেছি। যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি না হয় সে ব্যাপারে আগাম ব্যবস্থা নিতে মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা যেহেতু আগে থেকেই ব্যবস্থা নিচ্ছি, তাই আশা করছি সব ধরনের আশঙ্কা দূর হয়ে যাবে। তারপরও যদি কেউ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে চায় তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে কে কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী আমরা তা বিবেচনা করব না।’    
অতিসম্প্রতি বিরোধী দলের নেতারা দলীয় নেতা-কর্মীদের লাঠি ও লাইসেন্স করা অস্ত্র নিয়ে কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার নির্দেশনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ রাজধানীর মিরপুর এলাকায় বিরোধী দলের সমাবেশে হাতে রড-লাঠিসহকারে সহস্রাধিক নেতা-কর্মীর উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়েছে। ২৬ সেপ্টেম্বরও হাজারীবাগে লাঠির মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে শোডাউন করে বিরোধী দল। ১৫ অক্টোবর ২০২২ সম্মানিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লাঠিসোঁটাসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের সমাবেশে আসা নিয়ে সতর্ক এবং বিষয়টি আইনসিদ্ধ নয় বলেও মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা লক্ষ্য করেছেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের ঘোষণা দিয়ে বলে দেয়া হয়েছিল তারা যেন লাঠিসোঁটা নিয়ে আসে।

এটা কী ইঙ্গিত বহন করেছিল আমরা সেটা জানতাম না, জানিও না। আমরা লক্ষ্য করেছি ঢাকা শহরে বিভিন্ন জায়গায় পেছনে লাঠি এবং সামনে লাঠির ওপরে তাদের দলীয় পতাকা উড়িয়ে এসেছে। এগুলো কী মিন করে আপনারা নিজেরাও বোঝেন এবং জানেন। আমরা তাদের বলি, আপনারা নির্বঘেœ আপনাদের পলিটিক্যাল অ্যাক্টিভিটিস করুন, সেখানে আমাদের কিছু ভাবার নেই; কিন্তু লাঠিসোঁটা ক্যারি করা আইনগত সিদ্ধ নয়।’  
ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নীতিনির্ধারকের মতে জাতীয় নির্বাচনের এখনো এক বছরের বেশি সময় বাকি। বিরোধী দল যেসব কর্মসূচি পালন করছে তা তাদের চূড়ান্ত কর্মসূচি নয়। ফলে এখনই পালটাপালটি কর্মসূচি দিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত না করে তারা সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখার বিষয়ে অবহিত করেন। বিরোধী দল চূড়ান্ত আন্দোলনে গেলে বা ‘সহিংস কর্মকা-’ শুরু করলে পালটা কর্মসূচি দেওয়ার এবং এর আগ পর্যন্ত সারাদেশের নেতাকর্মীদের উস্কানিতে পা না দিতে সতর্ক অবস্থানে থাকার জন্য দলের পক্ষ থেকে ঘোষণা-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

গণমাধ্যমে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের এ সম্পর্কে বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তাদের মতে, এখন পরিস্থিতি যাই হোক না কেন তা শেষ পর্যন্ত আরও সহিংস হওয়ার আশঙ্কা নেই। নির্বাচনের অনেক বাকি। ভোটের আগে রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ অনেক পাল্টে যাবে। আরও অনেক সমীকরণ আছে। একটি ভালো নির্বাচনের জন্য সবদিক থেকে সরকার এবং সব দলের ওপর চাপ রয়েছে। আওয়ামী লীগ বা বিএনপির কারুরই ২০০৬ সাল বা ২০১৪ সালের মতো পরিস্থিতি তৈরি করার অবস্থা আছে বলে মনে হয় না। বিএনপি রাস্তায় শোডাউন করে এখন তাদের শক্তিমত্তা দেখাতে এবং সরকারের টেম্পারটাও বুঝতে চাচ্ছে।

আর সরকারের ধারণা বিএনপি যদি এভাবে মাঠে নেমে তাদের জনপ্রিয়তা দেখাতে পারে তাহলে সরকারকে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত একটা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। সরকার তা চায় না বলেই এখন এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। তবে এটা অরও বাড়বে বলে এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে না, এভাবেই চলবে। বিষয়টি পর্যালোচনায় এটি সুস্পষ্ট যে, সকল দলই দেশের স্বার্থে সংযত-বিদ্বেষবিহীন কর্মকৌশল বাস্তবায়নে তৎপর থাকবে।
১৩ নভেম্বর ২০২১ প্রকাশিত তথ্যসূত্রে দেখা যায়, ১১ নভেম্বর ২০২১ অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন উপজেলাতে বিজয়ী ও পরাজিত বা পরাজিত দুই প্রার্থীর মধ্যে নির্বাচনপরবর্তী সংঘাত-সংঘর্ষ পরিলক্ষিত হয়েছে। এসব ঘটনায় পালটাপালটি হামলা, ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। শুধু নির্বাচনের দিন ভোটগ্রহণের সময় বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে ভোটের আগে-পরে সহিংসতায় মোট ৬২ জন নিহত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে।

স্থানীয় পর্যায়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এবারের ইউপি নির্বাচনে সহিংসতার চরম রূপ পরিগ্রহ করেছে। নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে অযোগ্য ও অজনপ্রিয় ব্যক্তিদের প্রার্থী করায় প্রতিদ্বন্দ্বী দলের দ্বন্দ্বে এ সহিংসতার মাত্রা আরও বেড়ে যায়। স্বমূল্যায়নে ত্যাগী নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় ভোটযুদ্ধ সংঘাত-সহিংসতার স্বরূপ নানামুখী কদর্যতায় উন্মোচিত হয়।
২৪ জানুয়ারি ২০২০ প্রকাশিত আসকের অন্য তথ্যসূত্রে ২০১৪-২০১৯ সময়কালে দেশে মোট ৩ হাজার ৭১০টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। যাতে নিহত ৬৩৫ জন এবং আহত হয়েছে ৪১ হাজার ৩৪৫ জন। ২০১৯ সালে সংঘটিত ২০৯টি সংঘাতে ৩৯ জন নিহত ও ২ হাজার ৬৮৯ জন আহত হয়। ২০১৭, ২০১৬, ২০১৫ ও ২০১৪ সালে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটে যথাক্রমে ৩৬৪, ৯০৭, ৮৬৫ ও ৬৬৪টি। উল্লেখ্য সময়ে মৃত ও আহতের সংখ্যা যথাক্রমে ৫২ জন ও ৪ হাজার ৮১৬ জন, ১৭৭ জন ও ১১ হাজার ৪৬২ জন, ১৫৩ জন ও ৬ হাজার ৩১৮ জন এবং ১৪৭ জন ও ৮ হাজার ৩৭৩ জন।

বিগত বছরগুলোর মধ্যে ২০১৩ সালে রাজনৈতিক সংঘাতে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়। ঐ সময়ে মৃত্যুমুখে পতিত হয় ৫০৭ জন এবং আহত ২২ হাজার ৪০৭ জন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ও পরে ব্যাপক সহিংসতা এবং ২০১৩ ও ২০১৪ সালে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের নামে যানবাহন-স্থাপনায় সবচেয়ে বেশি আগুন সন্ত্রাসের অরাজক দৃশ্যাদৃশ্য এখনো অমলিন। ২০১৩ সালের সহিংসতায় অগ্নিদগ্ধ হয়েছিলেন ৯৭ জন। তাদের মধ্যে নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করেন ২৫ জন। উক্ত সংস্থার ৩০ জুন ২০২১ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১ সালের এই সময়ে ১০৩টি রাজনৈতিক সহিংসতা ঘটে, যাতে নিহত ১৪ ও আহত হয়েছে ১ হাজার ২৭৫ জন। এর মধ্যে ১৩টি অভ্যন্তরীণ সহিংসতায় নিহত ৯ এবং অন্যান্য সহিংসতায় ৫ ও আহতের সংখ্যা ২৮২ জন।
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ গণমাধ্যমে প্রকাশিত আসক-এর হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি বছরের নয় মাসে দেশে ৩৮৭টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় ৫৮ জন নিহত হয়েছে। যার মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘাতে প্রাণ গেছে ৪৮ জনের। পক্ষান্তরে এই ৪৮ জনের মধ্যে ৪৪ জনই নিহত হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকেন্দ্রিক সংঘাতে। নিহতদের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের আছে ১৮ জন, বিরোধী দলের ৬ জন এবং রাজনৈতিক পরিচয়হীন রয়েছে ৩৪ জন।

উক্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ্য সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতায় ৫ হাজার ৪০০ জন আহত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। সংস্থাটির মতে, বিরোধী দল বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘাতের ৩৭টি ঘটনায় ৪ জন নিহত এবং ৯২৯ জন আহত হয়েছে। এছাড়াও রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ সংঘাতে হতাহতের বিবরণে বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীন দল ও এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের অন্তর্কোন্দলে ৭৩টি সংঘর্ষের ঘটনায় ৮ জন নিহত এবং ৮৯৫ জন আহত হয়েছে। বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ১৭টি ঘটনায় নিহত ও আহত হয়েছে যথাক্রমে ১ ও ২১১ জন।

রাজনৈতিক সংঘাত-সহিংসতার মাধ্যমে সৃষ্ট সংকটে দেশের গণতন্ত্র বিপর্যস্ত হলে কতিপয় ক্ষমতালিপ্সু স্বৈর-সেনা শাসকদের বশংবদ সামরিক-বেসামরিক আমলা অশুভ যোগসাজশে জনগণকে বিপথগামী করার কদর্য চক্রান্তে লিপ্ত হতে পারে। অবশ্যই এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, দেশের জনগণ যে কোনো সময়ের তুলনায় অধিকমাত্রায় সচেতন। উন্নয়ন-অগ্রগতির তুলনামূলক দৃশ্যপট বিবেচনায় তাদের যুক্তি-জ্ঞাননির্ভরতা অনেক প্রখর। শত প্রলোভন বা প্রতিশ্রুতি আপামর দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার তেমন কোনো সুযোগ নেই।

তবুও অভিশপ্ত নাগ-নাগিনীর ছলচাতুরী-অভিনয়শৈলী, পদ-পদায়ন-পদক দখলের পারদর্শিতা এবং অনৈতিক অর্থ লেনদেন-লবিং তদবির বাণিজ্যের আড়ালে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে দেশকে আবদ্ধ করার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া সঠিক হবে না। জনশ্রুতি মতে, উচ্চশিক্ষা থেকে শুরু করে সরকারের অধীনস্থ সকল প্রতিষ্ঠান-সংস্থার কর্তাব্যক্তি-ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্ণাশ্রীত আবেগের অনুকম্পা সংবলিত হাতেগোনা উপদেষ্টা-এমপি-মন্ত্রী ও কথিত রাজনীতিকদেরও কঠোর নজরদারিতে রাখা অনিবার্য।

বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার একার পক্ষে প্রতিটি বিষয়ে তদারকি কিছুতেই সম্ভব নয়। বর্ণচোরাদের মুখোশ উন্মোচন ও চিহ্নিত নষ্ট চরিত্র-বোল পাল্টানো ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে বিতাড়ন অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে। সময়ক্ষেপণ না করে পর্যাপ্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে সরকার ও দলের প্রতি বিনীত নিবেদন পেশ করছি।


লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

×