
সড়ক-মহাসড়কে বিচিত্র অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে। চুরি-ডাকাতি, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, যাত্রীদের অজ্ঞান করে সব কিছু লুটে নেওয়া- অপরাধের শেষ নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপরাধ দমনে কতটা তৎপর সেটি নিয়ে নানা সময়েই প্রশ্ন ওঠে। তবে একটা কথা না মানলেই নয় যে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে পুলিশ বাহিনীতে জনবল সংকটসহ নানা সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার প্রেক্ষিতে সমাজে অপরাধ হঠাৎ করেই বেড়ে গিয়েছিল। মাঝে যার কিছুটা উন্নতি পরিলক্ষিত হলেও আবার সেই একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অন্যদিকে মহাসড়কের মহা অপরাধসমূহ, বিশেষ করে ডাকাতি কমানো যাচ্ছে না।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত খবর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশের এমন কোনো মহাসড়ক বাদ নেই যেখানে ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। সকল মহাসড়কে ডাকাতি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ সময়ে ডাকাত দলের হানায় আহত হওয়ার সংখ্যাও কম নয়। তবে ডাকাতির ঘটনা অনেক হলেও মামলা এবং গ্রেপ্তারের সংখ্যা খুবই নগণ্য। বলা চলে মহাসড়কগুলোতে এখন দিনে-রাতে ডাকাতির ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সড়ক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যেসব বিষয় নিয়ে বেশি আলোচনা হয় তার ভেতর লুণ্ঠনের ব্যাপারটি সেভাবে এখন আর আসে না। তাই বিষয়টি বিশেষভাবে আমলে নিয়ে আগামী দিনগুলোয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা চাই। বাসের সব যাত্রীকে জিম্মি করে কয়েক ঘণ্টা ধরে ডাকাতি দেশের সড়ক নিরাপত্তার বড় ধরনের দুর্বলতাকেই তুলে ধরে। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সড়ক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ও নিরাপত্তা বাহিনী সিসি ক্যামেরা স্থাপনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, যা আশ্বস্ত হওয়ার মতোই।
গাজীপুরের শ্রীপুরের ব্যস্ততম মাওনা-কালিয়াকৈর আঞ্চলিক সড়ক এখন সাধারণ মানুষের জন্য এক আতঙ্কের নাম। যেখানে সড়কপথ হওয়ার কথা নিরাপদ যাতায়াতের মাধ্যম, সেখানে তা পরিণত হয়েছে ডাকাতদের আখড়ায়। সম্প্রতি এই সড়কে গজারি গাছ ফেলে ডাকাতির ঘটনা জনমনে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। গত বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় হাশিখালি সেতুর পশ্চিম পাশে এক ভয়াবহ ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন দুই যাত্রী। সড়কের ওপর দুটি বিশাল গজারি গাছ ফেলে পথরোধ করে দা হাতে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসে একদল ডাকাত। ভাগ্যক্রমে দ্রুত অটোরিক্সা ঘুরিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন তাঁরা। এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়; এর আগেও গত ৩ মার্চ একই সড়কে ডাকাতদের হামলায় পুলিশের দুই সদস্য আহত হয়েছিলেন। একটি জনবহুল ও ব্যস্ত আঞ্চলিক সড়কে যদি রাতের বেলায় মানুষ নির্ভয়ে চলাচল করতে না পারে তবে তা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির গুরুতর অবনতিকেই নির্দেশ করে।
মাওনা-কালিয়াকৈর আঞ্চলিক সড়ক আবারও নিরাপদ হয়ে উঠুক এবং মানুষ নির্ভয়ে যাতায়াত করতে পারুক- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। পুলিশের সদিচ্ছা, সক্রিয়তা এবং গতিময়তাও জরুরি। আশা করা যায় মহাসড়কের অপরাধ দমনে আগামী দিনগুলোয় কর্তৃপক্ষ আরও সফলতার পরিচয় দেবে।
প্যানেল/মো.