ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

বর্ষা-বন্যায় জনদুর্ভোগ

প্রকাশিত: ১৮:০৯, ১৩ জুলাই ২০২৫

বর্ষা-বন্যায় জনদুর্ভোগ

ঋতুবৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের প্রাণ-প্রকৃতি। প্রতিটি ঋতুর সঙ্গে রয়েছে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব। দেশে বর্তমানে বর্ষা মৌসুম চলছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মৌসুমি বন্যা। অতিবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ফেনীর দুটি নদীর বেড়িবাঁধের কয়েকটি স্থান ভেঙে যাওয়ায় অনেক গ্রাম ও জনপদ প্লাবিত হয়েছে। মাত্র এক বছরের কম সময়ে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লাসহ চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা পুনরায় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে অতি বর্ষণজনিত ভোগান্তিতে দেশের কয়েক লক্ষ উপকূলীয় মানুষ। আক্রান্ত জেলাগুলোর বাড়িঘর পানির নিচে, বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, সবচেয়ে বড় দুর্ভোগ পানীয়জলের অভাব এবং অপ্রতুল চিকিৎসা ব্যবস্থা। গত বছর ফেনীর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার পর সরকারের তরফ থেকে বাঁধ সুরক্ষার অঙ্গীকার করা হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড গতানুগতিক ধারায় বাঁধ সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করেছে। এমন প্রতিবেদন উঠে এসেছে গণমাধ্যমে।
বাঁধ ভাঙনের পর পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রভাবশালী ঠিকাদার  মহল স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না করে কোটি টাকা ব্যয়ে অতি দ্রুত অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে, যার অন্তর্নিহিত কারণ হলো যেন পরের বছর পুনরায় সংস্কার কাজ প্রাপ্তি সহজ হয়। প্রতিবারই সুনির্দিষ্ট কিছু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রাষ্ট্রের অর্থ তছরুপ করা হয়। জনগণের যেই ভোগান্তি সেই ভোগান্তিই থাকে। অতি বর্ষণে বন্যার ফলে জনপদগুলোর পুকুর ও খামারের মাছ ভেসে যায়, ফসলি জমি ও আমনের বীজতলা হয় প্লাবিত। সড়ক ও জনপথ জলমগ্ন হওয়ায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চরমভাবে হয় ব্যাহত। 
উল্লেখ্য, ফেনীর বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে ২০০৬ সালে সূচিত ১৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া বন্যানিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প ২০১০ সালে শেষ হওয়ার পর কয়েক বছর ফেনীবাসী বন্যামুক্ত ছিল। ২০১৩ সালে আকস্মিক বন্যায় বাঁধের তিনটি স্থান ভাঙার পর প্রতিবছরই বাঁধ ভাঙছে। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প কিংবা বেড়িবাঁধ নির্মাণ কোথাও নেই কোনো টেকসই রূপ ও জবাবদিহির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। প্রতিবছর বাঁধ নির্মাণে ত্রুটি ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও অনিয়ম-অনাচারে হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়; কিন্তু বাঁধ টেকে না, মানুষের ভোগান্তিও কমে না। জান-মালের ক্ষতি অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে।
দেশে বন্যানিয়ন্ত্রণে টেকসই বাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন, অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তারা নিজেদের আখের গোছাতে অস্থায়ী কাজে থাকে তাদের মনোযোগ বেশি। এই সাধারণ সংস্কার ও মেরামতে ছোট আকারের বন্যানিয়ন্ত্রণ করা গেলেও গত বছরের আগস্টের ন্যায় বিস্তৃত বন্যানিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। বন্যা পূর্বাভাস, নদী খনন, বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার, দ্রুত ত্রাণ বিতরণ এসব মৌলিক কাজে অনেক বড় ধরনের দুর্নীতি হয়। দেশের প্রান্তিক নাগরিকদের সুরক্ষায় আমাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আরও বিজ্ঞানভিত্তিক, সমন্বিত ও দ্রুতগতির হওয়া প্রয়োজন।

প্যানেল/মো.

×