
“ফ্যাসিবাদ রোধে নির্বাচনী সংস্কার: সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি কি সমাধান?”—এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত হলো জাতীয় পর্যায়ের সংলাপ। আজ ১৭ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে পলিসি রিসার্চ অ্যান্ড স্টাডিজ ফাউন্ডেশন আয়োজিত সংলাপে দেশের বিশিষ্ট রাজনীতি বিশ্লেষক, শিক্ষাবিদ, মানবাধিকারকর্মী ও রাজনৈতিক নেতারা অংশ নেন।
সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়ে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলা এই সংলাপে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুর রব। সূচনা বক্তব্য দেন ড. আবদুল মান্নান। কোরআন তেলাওয়াত করেন সাজেদুর রহমান।
প্রধান কী-নোট উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওয়ারেসুল করিম। তিনি বলেন, “বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্ররা শুধু চাকরির জন্য নয়, ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন করেছিল। পিআর (Proportional Representation) পদ্ধতি আমাদের সংবিধান ও গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।” তিনি বিভিন্ন দেশের প্রেক্ষাপটে পিআর পদ্ধতির কার্যকারিতা তুলে ধরেন।
ড. মহিউদ্দীন সরকার বলেন, “বর্তমানে নেতৃত্ব নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর। এতে কেন্দ্র দখল, রাতের ভোট, ও সন্ত্রাস কমে আসবে। বহুদলীয় গণতন্ত্র বাঁচাতে হলে এই পদ্ধতি জরুরি।”
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামীমা তাসমিম বলেন, “আমি ১৭ বছর ধরে ভোট দিইনি। কারণ, ভোটের কোনো মূল্য নেই। পিআর পদ্ধতিই এই মূল্য ফিরিয়ে আনতে পারে।”
সিটিজেন ইনিশিয়েটিভের কো-ফাউন্ডার মোহাম্মদ তালহা বলেন, “গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে হলে এমন একটি পদ্ধতি দরকার যেখানে মানুষের ভোট সত্যিকারের প্রতিফলন পাবে।”
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, “নির্বাচন সঠিক পদ্ধতিতে হওয়া এখন সময়ের দাবি। পিআর পদ্ধতি গ্রহণ করলে সব দল অংশগ্রহণে আগ্রহী হবে।”
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, “ভারতীয় আধিপত্য ও ফ্যাসিবাদ রোধ করতে হলে আমাদের পিআরের মতো কাঠামোগত সংস্কারের পথে এগোতে হবে।”
নয়াদিগন্তের নির্বাহী সম্পাদক মাসুমুর রহমান খলিলী বলেন, “তুরস্কসহ অনেক দেশে পিআর সিস্টেম আছে এবং এর মাধ্যমে নেতৃত্বের বিকাশ হয়।”
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লা আমীন বলেন, “আমরা মিশ্র পদ্ধতি চাই—৩০০ আসন প্রচলিতভাবে, ৩০০ আসন পিআর পদ্ধতিতে; নিউজিল্যান্ডে যেমন আছে।”
ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা শাহ ইফতেখার তারিক বলেন, “পিআর বিএনপির জন্য নয়, দেশের জন্য প্রয়োজনীয়। এটি একটি সময়োপযোগী ব্যবস্থা।”
সাংবাদিক ও লেখক শাহ আবদুল হালিম বলেন, “ফ্যাসিবাদ মানে কালো টাকার রাজত্ব। আমাদের পিআরের মাধ্যমে এই দুষ্টচক্র ভাঙতে হবে।”
এনসিপি’র মুজাহিদ ইসলাম সাহিন বলেন, “দলীয় গণতন্ত্র নেই, প্রার্থী মনোনয়ন হয় অর্থের ভিত্তিতে। পিআর পদ্ধতিই পারে এই চিত্র বদলাতে।”
বিআইআইটির মহাপরিচালক ড. মোহা. আবদুল আজিজ বলেন, “৩০০ আসনের সঙ্গে আরও ১০০ পিআর আসন সংযোজন করা যেতে পারে।”
মানবাধিকার কর্মী মাহবুব হক বলেন, “৫০-৫০ ভিত্তিতে দুটি পদ্ধতির সংমিশ্রণে নির্বাচন হোক। মানুষের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে।”
সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন ড. জুলফিকার হাসান বলেন, “বিশ্বের ৯৯টি দেশে পিআর রয়েছে। বাংলাদেশেও এটা চালু হওয়া জরুরি।”
ইনপ্যাক ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এনায়েত হোসাইন জাকারিয়া বলেন, “সঠিক গণতন্ত্রের জন্য এই মুহূর্তটাই উপযুক্ত সময়।”
সমাপনী বক্তব্যে অধ্যাপক ড. আবদুর রব বলেন, “ফ্যাসিবাদ নির্মূল করতে পিআর পদ্ধতি অপরিহার্য। সময় এসেছে জনগণের মতামতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার।”
সংলাপে আলোচকবৃন্দ পিআর পদ্ধতির পক্ষে একজোট হয়ে বলেন, দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থায় বিশ্বাস ফেরাতে, ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়াতে এবং ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি (পিআর) চালু করাই এখন সময়ের দাবি।
Jahan