ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

ডাক বিভাগের নতুন উদ্যোগ স্টোরেজ, প্যাকেজিং ডেলিভারি সব এক জায়গায়

ই-কমার্সে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে ফুলফিলমেন্ট সেন্টার

জনকণ্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০০:১৮, ১৮ জুলাই ২০২৫

ই-কমার্সে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে ফুলফিলমেন্ট সেন্টার

অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) মো. হারুন-অর-রশিদ

দেশের ক্রমবর্ধমান ই-কমার্স এবং এফ-কমার্স খাতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন এক যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ। এবার তারা নিয়ে এসেছে ‘ফুলফিলমেন্ট সেন্টার’ নামে একটি স্মার্ট, বাস্তবমুখী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক মডেল। এর মাধ্যমে ডাক বিভাগের অবকাঠামো ব্যবহার করে ই-কমার্সের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা পণ্য সংরক্ষণ ও প্যাকেজিংসহ আরও দ্রুততম সময়ে গ্রাহকের কাছে মালামাল পৌঁছাতে পারবেন।
এই ব্যবস্থা সম্পর্কে ডাক বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) মো. হারুন-অর-রশিদ জনকণ্ঠকে বলেন, ‘এফ-কমার্সের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো-লজিস্টিকস ও স্টোরেজ সাপোর্ট। বেশিরভাগ উদ্যোক্তার নিজস্ব গুদাম বা কুরিয়ার ব্যবস্থাপনা নেই। ফলে অর্ডার পেলেও সময়মতো ডেলিভারি দিতে পারেন না। ফুলফিলমেন্ট সেন্টার এই সমস্যার একটি সরকারি সমাধান। এতে করে শহর বা গ্রামে অনেক নারী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী যারা ঘরে বসে জামা-কাপড়, খাবার, কসমেটিকস বানান, কিন্তু লজিস্টিক ও ডেলিভারি সমস্যায় আটকে যান, তাদের পণ্য নিরাপদ ও কম খরচে ডেলিভারি করতে পারবেন। এতে গ্রাহকরা যেমন দ্রুত সেবা পাবে, অন্যদিকে ডাক বিভাগের রাজস্বও বৃদ্ধি পাবে।’
জানা গেছে, দেশব্যাপী স্থাপিত ১৪টি মেইল প্রসেসিং সেন্টার (এমপিসি)- ঢাকার তেজগাঁও, ঈশ্বরদী, গোপালগঞ্জ, ময়মনসিংহ, খুলনা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল, দিনাজপুর, হবিগঞ্জ, কুষ্টিয়া ও যশোরের কেন্দ্রেই প্রথম পর্যায়ে ফুলফিলমেন্ট সেন্টারের সেবা চালু হচ্ছে। এসব কেন্দ্রে ইতোমধ্যে উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি, সফটওয়্যার, চিলার চেম্বার এবং থার্মাল আইস বক্স স্থাপন করা হয়েছে, যা ই-কমার্সের পণ্য সংরক্ষণ ও পরিবহনের জন্য আদর্শ। 
নতুন এ মডেলে উদ্যোক্তারা পণ্য স্টোর করে রাখতে পারবেন, যা গ্রাহকের অর্ডার অনুযায়ী কাছাকাছি এমপিসি থেকে দ্রুত সরবরাহ করা হবে।  ফলে সময় ও খরচ কমবে এবং ডেলিভারির মানও উন্নত হবে। এই সেন্টারগুলোতে চিলার চেম্বার থাকায় মাছ, মাংস, ফলমূল, শাকসবজি, দুধ, ওষুধ এবং ফুলজাতীয় পণ্য সংরক্ষণ করাও সম্ভব হবে। ডাক বিভাগের কাছে থাকা থার্মাল আইস বক্স ব্যবহার করে এসব পণ্য ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত তাজা রাখা যায়, যা দেশের যে কোনো প্রান্তে দ্রুত সরবরাহ নিশ্চিত করবে। এই মডেলটি শহর ও গ্রাম উভয় জায়গার উদ্যোক্তাদের জন্য সমানভাবে সহায়ক হবে। 
সম্ভাবনার নতুন দুয়ার ॥ ডাক বিভাগ ফুলফিলমেন্ট সেন্টার কার্যক্রম বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে রেভিনিউ শেয়ার মডেলে পরিচালনার পরিকল্পনা নিয়েছে। এর ফলে সরকারি পরিকাঠামো বেসরকারি উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দেশীয় ব্যবসার প্রসারে কাজ করবে। ইতোমধ্যে টেলিটকের সঙ্গে একটি মডেল প্রজেক্ট সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। দেশের হাজারো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার পণ্য যদি সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও দ্রুত ডেলিভারি হয়, তবে বাংলাদেশে ই-কমার্স খাত আর পেছনে ফিরে তাকাবে না- এমনটাই প্রত্যাশা করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
এডিজি মো. হারুন-অর-রশিদ এই বিষয়ে বলেন, ডাক বিভাগ তার অবকাঠামোকে শুধু চিঠিপত্র নয়, বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহনের জন্যও প্রস্তুত করেছে। আমরা চাই, দেশের ই-কমার্স ও স্থানীয় উদ্যোক্তারা আমাদের ফুলফিলমেন্ট সেন্টার ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের ব্যবসার পরিসর বাড়াক। 
তিনি আর বলেন, ‘আমাদের এখন লক্ষ্য হলো পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে ৬৪ জেলায় এই সেন্টার চালু করা।  এছাড়া ডাক বিভাগ এখন বেসরকারি অংশীদারদের সঙ্গে রেভিনিউ শেয়ারিং মডেলে কাজ করছে, যাতে সরকার ও উদ্যোক্তা উভয়ই লাভবান হয়।’

প্যানেল হু

×