ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

ব্যাংক ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন, ব্যাংককে নিয়ন্ত্রণের যে নতুন নিয়ম চালু করলো বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রকাশিত: ১৩:৫২, ৮ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৩:৫৩, ৮ জুলাই ২০২৫

ব্যাংক ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন, ব্যাংককে নিয়ন্ত্রণের যে নতুন নিয়ম চালু করলো বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবিঃ সংগৃহীত

বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে। আগামী ১ জানুয়ারি ২০২৬ থেকে সব তফসিলি ব্যাংকে চালু হচ্ছে ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি (Risk Based Supervision - RBS) নীতি।

এই নীতির লক্ষ্য হলো তদারকির দক্ষতা বাড়ানো, আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করা এবং ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ. মানসুর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপকে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে তুলে ধরেন।

সোমবার এক প্রেস কনফারেন্সে তিনি বলেন, "রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ আর্থিক খাতে সুশাসন বজায় রাখার জন্য একটি বড় ঝুঁকি। এই সমস্যা আগেও হয়েছে। রাজনীতিবিদদের সচেতন হতে হবে, যাতে তারা বুঝতে পারেন—এই হস্তক্ষেপের ফলাফল কী হতে পারে।"

নতুন ব্যবস্থার মূল দিকগুলো:
🔹 ব্যাংকভিত্তিক তদারকি দল গঠন: প্রতিটি ব্যাংকের জন্য আলাদা তদারকি টিম গঠনের মাধ্যমে তদারকি আরও নিবিড় ও কার্যকর হবে।

🔹 বিশেষায়িত বিভাগ তৈরি: প্রযুক্তিগত ঝুঁকি, ডিজিটাল ব্যাংকিং, মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে পৃথক তদারকি ইউনিট গঠন করা হবে।

🔹 জনবল ও দক্ষতা বৃদ্ধি: বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও আইএফসি সহযোগিতা করবে।

🔹 তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন: একটি নতুন Rationalized Input Template (RIT) ও কেন্দ্রীয় তদারকি ড্যাশবোর্ড তৈরি করা হবে, যা রিয়েল টাইমে ঝুঁকি বিশ্লেষণ করতে পারবে।

🔹 ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন: পাইলট প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের পর, চলতি জুলাই থেকে সকল ৬১টি তফসিলি ব্যাংকে এই নীতি চালু হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে পুরোপুরি রূপায়ণ শেষ করে ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে পুরোপুরি কার্যকর হবে।

🔹 সুশৃঙ্খল তদারকি চক্র: ঝুঁকি মূল্যায়ন, পরিকল্পনা, হস্তক্ষেপ ও পরবর্তী পদক্ষেপগুলোকে একটি কাঠামোবদ্ধ তদারকি চক্রে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

গভর্নর জানান, ইতোমধ্যে ২০টি ব্যাংক নতুন তদারকি কাঠামোর আওতায় এসেছে। বাকি ব্যাংকগুলোকে ডিসেম্বরের মধ্যে এই ব্যবস্থায় আনা হবে। যদি কোনো ব্যাংক স্বাধীনভাবে পরিচালনায় ব্যর্থ হয়, তাহলে সরকার সেটিকে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে আনার বিষয়টি বিবেচনা করবে।

এছাড়াও তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, কিছু শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন করা হতে পারে তাদের কার্যক্রম পর্যালোচনার ভিত্তিতে।

এই সংস্কারের মাধ্যমে ব্যাংক খাতে ঝুঁকি সচেতনতা, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং সুশাসনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি দেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখবে।
 

তথ্যসূত্রঃ https://thefinancialexpress.com.bd/

 
 

মারিয়া

×