ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

চেতনার সুরভিত বাগানে

মোঃ জাকির হোসেন

প্রকাশিত: ০১:১০, ১ নভেম্বর ২০২৪

চেতনার সুরভিত বাগানে

কিয়দংশ নীল

বাহাত্তর কী চুয়াত্তরে আমিনুল ইসলাম বেদুর সাম্প্রতিকের একটি সংখ্যা ভারত বাংলাদেশের একশত কবির কবিতা নিয়ে যখন বের হয়, তখন দৈনিক ঢাকার (তখনকার সাপ্তাহিক ঢাকার সম্পাদক) শফিকুল ইসলাম ইউনুস তার কবিতা সেখানে সংযোগ করেন, এ কথা তিনি কিছুদিন আগেও আমিনুল ইসলাম বেদু ভাইকে যখন সংবর্ধনা দেয় উত্তরার একটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, সেখানে বলেন।

আমরা যখন লেখালেখির জন্য পড়াশোনা করছি তখন মাসিক সমকালের ছিয়াত্তরে প্রকাশিত ঈদ সংখ্যায়ও জুন মাসে তার কবিতা পড়ি। রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের সত্তর দশকের তরুণ সম্ভাবনাময় কবি বিভিন্ন নামে লিখতেন। লিখতেন উপ-সম্পাদকীয়, প্রতিবেদনও। বর্তমানে তিনি আতাতুর্ক কামাল পাশা নামেই থিতু হয়েছেন। তার লেখা একটি কবিতার বই এতদিন পর পড়তে হবে দেখে, কষ্ট লাগে বৈকি। তবে ‘কিয়দংশ নীলে’ প্রকাশিত কবিতাগুলোর নিচে লেখার সময়কাল উল্লেখ আছে। তার কবিতা বরাবরই বেশ সমৃদ্ধ, বেশ রাজনীতিসচেতন, অত্যন্ত তাৎপর্যময়। তার কবিতার আমি একজন নিয়মিত পাঠক। মনে হয় তিনি যেন শুধু সংরক্ষণে রাখার জন্যই এই কবিতাগুলো কিয়দংশ নীলে সূচিবিদ্ধ করেছেন। 
তবে তার কবিতায় সব সময় একটি কথা থাকে। প্রধানত এ কবিতাগুলোতে তিন ধরনের চেতনাপ্রবাহ বয়ে যেতে দেখা গেছে। আত্মজবা নিজস্ব আবেগ; মানবসভ্যতা এবং সমাজ অশান্তিময় হয়ে উঠলে একজন সচেতন মানুষ যেভাবে চিৎকার করে উঠবে, সেইসত্য ও ন্যায়ের পক্ষে তার সরব চিৎকার এবং প্রেম বা ভালবাসাকে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে বিস্তার করতে বা সুন্দরের আবেদনকে যুগ যুগ ¯্রােতবাহী রাখবার প্রবণতা।

তার অহংকারহীন পকেট কবিতাটির কয়েকটি ছত্র পড়ি (পৃ-১৭), ‘নেই অহংকার/ আমার পকেটে/ কি করে থাকবে বলো অহংকার কোন/ ঘাসফুল ছুঁয়ে আমি দেখি না কখনো/ গাঁদা ফুল বেলি ফুল চিনি না কিছুই/ ধুতুরা জবা কামিনী/ রজনীগন্ধার ঘ্রাণ খুঁজিনি কখনো . . . আজো জমা হলো না আমার/ কিছু অহংকার/ সার্টের বুক পকেট ভরে’। অত্যন্ত সহজ, সুপাঠ্য কবিতা। 
তার আর একটি কবিতা ‘বাবা আদমের চোয়াল’ (পৃ-৪২)। ‘হেলে দুলে বাতাসের গায়ে কাশফুল/ দিগন্ত বিস্তার যেন ড্যাফোডিল ফুল/ কালবৈশাখীর মত্ত দাপট বিশাল/ ভেঙে দেয় জার্মান দেয়াল . . . যত ভাঙুক কালবৈশাখী বার্লিনে দেয়াল/ নরম হয় না বাবা আদমের চিবুক চোয়াল’। এখানে একই সঙ্গে আমার দুটো জিনিস লক্ষ্য হয়েছে। তার কবিতায় দেশী-বিদেশী ঘটনা ও সময়কাল চলে আসে। আর কবিতার মূল বক্তব্যে আমার মনে হয়েছে, আমরা যতই সাম্যবাদের আশীর্বাদপুষ্ট হতে চাই না কেন, পুঁজিবাদী বিশে^র মানুষদের শোষণের কালো নখর, চিবুক-চোয়াল কখনো ছোট হয় না।

বরং তা আগের মতোই দানবীয় গোগ্রাসে গিলে খেতে তৎপর থাকে বা আজো রয়েছে। দারুণ নৃতাত্ত্বিক চিত্রে তুলে ধরতে পেরেছেন মানুষের প্রাচীন জিঘাংসার স্বরূপ।  তার কবিতায় আর একটি ধারা হচ্ছে, পৃথিবীর শৈল্পিক রুচিসম্পন্ন মানুষ বা শিল্পীকে তিনি একের পর এক তার প্রেমের কুঞ্জে এনে বসিয়েছেন আর তাদের নিয়ে পৃথিবীর দিনরাত্রি পাড়ি দিয়েছেন। এতে তিনি প্রেম ভালবাসাকে চিরন্তনভাবে জাগিয়ে রেখেছেন। দৈনিক নতুন প্রেমগাঁথা, জনারণ্যে ওরা, আবার যাত্রা, সুবাসিত পথে কবিতাগুলো এ ধারার।

এ কাব্যের অধিকাংশ কবিতাই বিরামচিহ্নহীন থেকে গেছে। তবে ঠিকভাবে পড়লে ছন্দের ব্যবহারে তার দক্ষতার কারণে বিরামবোধ আপনা-আপনি বেরিয়ে আসে। তার বর্তমান কবিতার তুলনায় এগুলোর বেশ সহজবোধ্য এবং পঠনে বেশ কাব্যময়তা আছে। প্রচ্ছদ সুন্দর। তার আঁকা একটি শিল্পকর্মও এ বইয়ে রয়েছে।

×