ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

নবীন লেখকের বই প্রকাশ

শেখ সজীব আহমেদ

প্রকাশিত: ০২:০৪, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

নবীন লেখকের বই প্রকাশ

আমি একটি কবিতার বই প্রকাশ করব

আমি একটি কবিতার বই প্রকাশ করব, আমার অনেক দিনের স্বপ্ন ও সাধনা। কবিতার পা-ুলিপি নিয়ে বাংলাবাজারে এক প্রকাশনীর কার্যালয়ে গেলাম। 
প্রকাশক সাহেব পা-ুলিপিটা হাতে নিয়ে, দুই-তিনটা কবিতা পড়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন-
: ছন্দ কাকে বলে? 
আমি অবাক হয়ে গেলাম, প্রকাশক সাহেব এ কী জিজ্ঞেস করছেন!
আমি বললাম-
: ছন্দের নাম শুনেছি, ছন্দ জিনিসটা কী তা আমি জানি না। 
: কবিতা লিখলে কী করে? 
: মনে যা এসেছিল, তাই লিখেছিলাম। 
: মনগড়া লেখা। মনগড়া লেখা লিখলে তো হবে না। কবিতা লেখার নিয়ম-কানুন আগে জানতে হবে। 
এ পর্যন্ত ক’জনের কবিতার বই পড়েছ? ক’জনের বই কিনেছ? 
: বিদ্যালয়ের পাঠ্যবইয়ের কবিতা ছাড়া কোনো কবিতা পড়ি নাই। কোনোদিন কারও কোনো বইও কিনি নাই। 
: কারও কবিতা পড় নাই, তোমার কবিতা অন্য কেউ পড়বে, এটা ভাবলে কী করে? তুমি অন্য কারও বই কিনো নাই, তাহলে তোমার বই অন্য কেউ কিনবে, এটাও ভাবলে কী করে? ছন্দহীন একটা পা-ুলিপি নিয়ে এসেছ, টাকা দিলেও তো প্রকাশ করব না। সামনের দোকানে কবিতা লেখার ছন্দের বই পাওয়া যেতে পারে। বইটা কিনে, ছন্দ কী তা শেখ। তারপর ছন্দ অনুযায়ী কবিতা লেখ। প্রতিভা থাকলে একদিন না একদিন প্রকাশ হবে। এছাড়া কবিতার বই এখন কেউ পড়ে না। দেখ, কত বই পড়ে আছে, কেউ কিনেও না, ভালো উপন্যাস হলে কিছুটা চলে। 
আমি মন খারাপ করে, চুপ হয়ে ছন্দহীন পা-ুলিপিটা নিয়ে, কবিতার ছন্দ শেখার বই খুঁজতে থাকি। কবিতা লেখার ছন্দের বই পেলাম না, পেলাম গান লেখার ছন্দের বই। 
গান লেখার ছন্দের বইটা একটুখানি পড়েই মাথা ঘুরতে লাগল। মনে মনে ভাবি-
: কত কঠিন, এত পৃষ্ঠা! কবিতার লেখার ছন্দ, আরও কঠিন তো হবেই। 
আমার কবি হওয়ার দরকার নেই। 
আমার মন খারাপ দেখে, পাশের এক প্রকাশনীর প্রকাশক সাহেব আমাকে ডাকলেন। 
: কী হয়েছে দাদা?  মন খারাপ নাকি? 
: না, তেমন কিছু হয়নি। কবিতার বই প্রকাশ করতে এসেছিলাম। 
: আমরাও তো প্রকাশ করি, দেখি পা-ুলিপিটা। 
[আমার নামের দিকে চেয়ে বললেন]-
আপনার নাম এস কে শাহনেওয়াজ? 
: আমার নাম ডাক নাম সজীব। 
এখানে এস কে শাহনেওয়াজ নাম দিয়েছি। 
: এস কে শাহনেওয়াজের একক কাব্য গ্রন্থ
‘শাহনাজ’ বাহ দারুণ! নিশ্চয়ই প্রচ্ছদে একজন
নারীর ছবি থাকতে হবে? 
: হ্যাঁ, প্রচ্ছদে নারীর ছবি থাকবে। তার মাথার
চুলগুলো লম্বা দিতে হবে। 
: কোনো সমস্যা নেই। 
[কয়েকটি কবিতা পড়ে বললেন]
ভালোই তো লিখেছেন। আমাদের সঙ্গে অনেক বুক শপের যোগাযোগ আছে, এমনকি ইন্ডিয়াতেও। আর বই মেলা তো আছেই। 
: খরচ কত হবে? 
: আপনার বইটা এই প্রথম প্রকাশ। আগে যদি কোনো বই প্রকাশ করে থাকতেন, তাহলে খরচটা কম হতো, এমনকি বিনা খরচেও প্রকাশ করতে পারতাম। আমরা তো আছি, সমস্যা নেই। যখন দ্বিতীয়বার প্রকাশ করবেন, তখন আমরা খরচ ছাড়াই প্রকাশ করে দেব। 
আপতত নগদ পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে, দশদিন পর দশ হাজার টাকা, বইটি যখন প্রকাশ পাবে, তখন আরও দশ হাজার টাকা দেবেন। অর্থাৎ আপনার মোট খরচ যাচ্ছে, পঁচিশ হাজার টাকা। বইয়ের কপি হবে এক হাজার কপি, আপনাকে আমরা দুইশ সৌজন্য কপি দেব। 
: আমার কাছে তো তেমন টাকা নেই, আমি গরিব ঘরের সন্তান। 
: তাহলে, আপনি অর্ধেক টাকা দেবেন, বাকি টাকা প্রকাশনী বহন করবে। আপতত নগত পাঁচ হাজার টাকা জমা দিয়ে যান। এই পাঁচ হাজার টাকা, যে প্রচ্ছদ তৈরি করবে তাকে দেব। 
: ঠিক আছে ভাই, আমি আপনাদের সঙ্গে পরে যোগাযোগ করব। প্রকাশনীর কার্ড থাকলে দিন। 
আমি মন খারাপ করে বাড়ি ফেরার জন্যে বাসে উঠি । 
বাসে এক ভদ্রলোকের সঙ্গে পরিচয় হলো। আমার বই প্রকাশ করার প্রকাশনীর কথাগুলো তাকে বললাম। ঘটনা শোনার পর ভদ্রলোকটি আমাকে বললেন-
: প্রথম প্রকাশনীর প্রকাশক ভালো কথাই বলেছে, দ্বিতীয় প্রকাশনীর প্রকাশক তোমাকে লোভ দেখিয়েছে, তোমার কাছ থেকে বাটপারি করে টাকা নেওয়ার ফন্দি ছিল। 
আসল কথা হচ্ছে, সবাই অনলাইনে ব্যস্ত থাকে, এখন কারও কি বই পড়ার সময় আছে? 
এক সময় পাঠকের অভাব ছিল না, সবাই বই পড়ত। প্রতি বচ্ছরেই তো বইমেলা হচ্ছে। কত লেখক, প্রকাশক লস খাচ্ছে। তবে কিছু প্রকাশকের লাভও হচ্ছে, অনেক প্রকাশক খরচের টাকা লেখকের কাছ থেকে অগ্রিম নিয়েই বইটা প্রকাশ করে, বিশেষ করে তোমার মতো নতুন যারা আছে। নতুন লেখকরাও তোমার মতো ব্যস্ত হয়ে গেছে, বই প্রকাশ করার জন্যে। প্রকাশকরাই কী করবে? তোমাদের অখাদ্য লেখাগুলো প্রকাশ করলে যদি খুশি হও, তাহলে সমস্যা কী! যা হোক, এখনো অনেক কিছু শেখার বাকি আছে, শিখতে থাক, চর্চা করতে থাক, প্রতিভা থাকলে একদিন না একদিন বই প্রকাশ হবেই।

×