ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ধূপের দেয়াল

ইসমত শিল্পী

প্রকাশিত: ০১:৩৯, ১৮ নভেম্বর ২০২২

ধূপের দেয়াল

ধূপের দেয়াল

-এমন ভাবছেন কেনো, বলুন তো?
-ভাবতে চাই না, তবুও চলে আসে। এই যে চাই না- আসুক, তবু আসে, এই যুদ্ধেই ক্লান্ত হচ্ছি। সত্যিই আমি বড় ক্লান্ত! নিজের সঙ্গে নিজের যে যুদ্ধ তাতে মানুষ ক্লান্ত হয় বেশি।
-কিন্তু আপনি তো খুব সার্প। ব্রিলিয়ান্ট, ফ্রেস মাইন্ডেড মানুষ। নিজের সম্পর্কে এতো সচেতন। অথচ-
-কখনো কখনো কোথাও কোথাও কোনো সচেতনতা কাজ করে না, বুঝলেন? সার্প ব্রেইনও জং ধরে; মরচে পড়ে, খুলে খুলে পড়তে থাকে। ক্ষয় বোঝেন, ক্ষয়? এটাই ক্ষয়।
কি মনে হয় জানেন? ক্ষত থেকেও ক্ষয় ভয়ংকর। ক্ষত তো দেখা যায়, ঔষধ দেবার উপায় থাকে। কিন্তু ক্ষয়?
-ক্ষয় ভাবছেন কেন? সব ঘটনা থেকেই আমরা শিক্ষা নিতে পারি। আপনাকে তো এসব বোঝানোর দরকার আছে বলে মনে হয় না। অতীত সবারই আছে। সবকিছুতেই। অতীত মানে এক ধরনের অভিজ্ঞতা। ভাবা যায় না, এমনটা?
-না। যায় না। যাচ্ছে না। গেলে আপনার কাছে আসতে হতো না। শেষ পর্যন্ত আপনাকেও বোঝাতে ব্যর্থ হলাম। আচ্ছা, ঘটনা আর দুর্ঘটনা কি এক? এটা নিছক ঘটনা নয়। একটা বিরাট দুর্ঘটনা। ভয়ংকর!
কৃষ্ণপক্ষের সন্ধ্যা। নতুন চাঁদ উঠলে রমজান শুরু হবে। দিন শেষের আদলে একটা তোড়জোড় টের পাওয়া যায়। দূরের মসজিদ থেকে ভেসে আসছে আজানের ধ্বনি। পাখিরা পতপত উড়ছে; কয়েকটি বুনো কবুতর উড়ে গেলো তাড়াহুড়ো করে। দূর থেকে ভেসে আসছে মিহিসুরের শব্দ, শাঁখ বাজছে। একটু পরেই ঝুঁপ করে সন্ধ্যে নামবে। বাতি জ্বলছে মিটিমিটি।
হঠাৎ চুপ হয়ে গেলো তনিকা। তনিকা বিশ্বাস। আমার সামনের মানুষটা। যাচ্ছেতাই রকমের চৌকস। ভয়ংকর গোছালো ধাঁচের, বোঝাই যায়। মহিলা বলা যায় যদিও, আসল বয়সটা এমন। কিন্তু দেখতে গতানুগতিক মহিলা নয় একেবারেই। অধুনিক। বয়স এখানে অচল। বয়স আসলে একটা সময় নয়, সময়ের সমষ্টি। সময়কে ঠিকঠাক ব্যবহার করতে পারাটাই দক্ষতা। তনিকা বয়স ও সময়কে এতো সুন্দরভাবে রিপ্রেজেন্ট করতে পারে যে, বয়সের দিকে খেয়াল দেওয়ার কথা মনেই আসে না। বয়সকে শুধু আটকে রাখেনি, থামিয়ে দিয়েছে সে। কাজে, কথায়, বিশ্বাসে। প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস চোখেমুখে, ঠিকরে বেরুচ্ছে। এই ভয়ংকর আত্মবিশ্বসী মানুষটা এভাবে ভেঙে পড়েছে! না বললেও ভাবাচ্ছে বিষয়টা।
রবীন্দ্রনাথ এক জায়গায় বলেছেন, আধুনিকতা সময় নিয়ে নয়, মর্জি নিয়ে। তাঁর মতে বিশ্বকে ব্যক্তিগত আসক্তভাবে না দেখে নির্বিকারভাবে দেখাই আধুনিকতা। উজ্জ্বল, বিশুদ্ধ এবং মোহমুক্তভাবে দেখা। এতেই আনন্দ।
তনিকার চোখের ভেতরে এই উজ্জ্বলতার ছটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। ঠোঁটের দুই পাশে অসম্ভব মার্জিত একটা হাসি ঝুলে পড়তে পড়তে আটকে যাওয়া। দৃষ্টি কাড়ে। আঙুলগুলো চমৎকার। সুঠাম বললে ভুল হয়, কর্মোঠ আঙুল। সামান্য লম্বা নখ; ইচ্ছে করেই নাকি অনিচ্ছা অবহেলায় বেড়ে চলেছে মুশকিল হচ্ছে বুঝতে। তবে আলাদা রকমের।
আলাদা রকম কোনোকিছুকে সঠিকভাবে সবসময় ব্যাখ্যা করে ফোটানো যায় না। বোঝা যায়। একটা আকর্ষণ তৈরি হয়। এমনি এমনিই যে হয়, তাও ঠিক না। তার অজস্র কারণ থাকে। কারণগুলো অব্যাখ্যায়িত। সঠিক শব্দ না হলে ব্যাঞ্জনা আসে না তাই বিরত রাখতে হয় নিজেকে। তাকিয়ে থাকতে হয়! দেখতে হয়। অবলোকন করে যেতে হয়। কিন্তু সময়টা আমার পক্ষে নেই। তনিকা মানসিকভাবে ভীষণ অস্থিরতার মধ্যে। সেটা রুবন বলেছে আগেই। রুবনের বর্ণনায় যেমনটা জেনেছি তনিকা তার থেকেও অন্যরকম মাধুর্যের। কিছু মানুষ ভাবনা তৈরি করে দেয়, ভাবতে বাধ্য করে। ইচ্ছে করলেও এড়ানো যায় না। এই জটিলতা থেকে কিভাবে এড়িয়ে যাব ভাবছি। অজান্তেই জটিলতার মধ্যে ঢুকে পড়ছি আমি। উতলা লাগছে মনটা। তনিকার জন্য আদৌ কি কোনো উপকারে আসতে পারবো আমি? কিভাবে পারবো?
রুবন কেনো পারলো না তনিকার মানসিক ক্রাইসিসের এই সময়টাতে একটু সাপোর্ট দিতে? শেষ পর্যন্ত কাউন্সিলিং এর পরামর্শ দিল! রুবন টা না, যাচ্ছেতাই একটা পুরুষ! আমি হলে কিনা বাক্যে তনিকার সার্বক্ষণিক সঙ্গী হয়ে যেতাম। কিন্তু এখন কি সেটা সম্ভব? প্রফেশনাল রেসপনসিবিলিটি বড় বিষয়। সেখানে ব্যক্তি গৌণ। তনিকা এখন আমার ক্লায়েন্ট মাত্র। প্যাসেন্ট ধরা যায়।
-আচ্ছা, আমার কথাগুলো কি আপনি বুঝতে পারছেন না? গুরুত্ব দিচ্ছেন না তাইতো? আমি মনে হয় অহেতুক আপনার সময় নষ্ট করছি। ...তাহলে, উঠবো? হ্যাঁ, আপনার ফি টা- একটা সাদা খাম তনিকার হাতে। এগিয়ে দিচ্ছে। ইতোমধ্যেই উঠে দাঁড়িয়েছে সে। আমিও। অজান্তেই উঠে দাঁড়িয়েছি।
কেনো দাঁড়িয়েছি? তনিকা কে বিদায় জানাতে? নাকি তনিকা বিশ্বাস উঠে দাঁড়ালো বলে আমাকেও দাঁড়িয়ে পড়তে হলো? আমি না চাইলেও এটা হয়ে গেছে এমনিতেই...! আত্মবিশ্বাস খুব ভয়ংকর জিনিস। সম্মোহনের মতো। ইচ্ছে অনিচ্ছা কাজ করে না। আসক্তি  তৈরি করে। মোহ বলা যায় একে? না হয়তো। মোহ আর আসক্তি কি এক? পুরোপুরি তাও না। কি করবো তাহলে এখন?
তনিকা কি বিদায় নেবে? খামটা নেবো? কেন নেবো? আমি তো তনিকার জন্যে কোনো পরামর্শ, নির্দেশনা দিইনি। এমনকি সবকিছু শুনিওনি। তাহলে? শুনবো?
আমি দাঁড়িয়ে আছি। তনিকা কি করবে? চলে যাবে?
-তনিকা বিশ্বাস
-হু? বলুন! চশমাটা একটু নেড়ে নিলো তনিকা। বসলো। একটা উঁকি দেওয়া দীর্ঘশ্বাসকে নিঃশ্বাসের ভেতরে শব্দ করে বেঁধে নিলো।
-মানুষ এমনও পারে! কীভাবে সম্ভব?
-আমাকে বলছেন?
-আর কাকে? কে আছে আর এখানে?
নিজেকে হালকা করার চেষ্টাটা বেশ কাজে লেগেছে আমার। আমিও পারছি। মনে হচ্ছে বিশ্বাস অবিশ্বাস আত্মবিশ্বাস সব-ই সংক্রামক। নিজের আত্মবিশ্বাসে তৃপ্তি পাচ্ছি বেশ। ঠোঁটে না হলেও কণ্ঠে হাসির আমেজ আনা গেলো কিছুটা হলেও। আনন্দ লাগছে। এই আনন্দ নিজের জন্য নাকি তনিকার জন্য এখনও বুঝে উঠতে পারিনি। সবকিছু বুঝতে ইচ্ছে করে না সবসময়। না-বোঝা থাকুক কিছুটা।
-চা খাওয়া যাবে? অথবা কফি? একটু কম গরম? পছন্দ?
-হতে পারে। কফি কম গরম-ই পছন্দ আমার। রুবন বলেছে আপনাকে?
-না তো—-
-ও।
-এতো সংক্ষিপ্ত উত্তর!
-কী-ই বলার ছিলো?
-ছিলো। থাকেই তো, কতরকম কথা। থাকে না? এই ধরুন-
-অদরকারি কথা? হু। থাকে। তবে আমার নেই। দরকার কি?
-সবকিছু দরকারেই হয় বুঝি? চলে সবসময়, মেপেজুকে? আচ্ছা, কি গান শোনেন আপনি? রবীন্দ্র—-
-গজল। আমার কথা শেষ না হতেই তনিকার উত্তর
-বাহ্। আর?
-আর? না। ওহ্ মাঝে মধ্যে শুনি। রবীন্দ্রনাথের গান, বুদ্ধদেবের কবিতা। আর লালন—-
-তাই? রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে লালনের মিশ্রণটা কি মনে হয়? সচল?
-সচল! এটা কোনো ব্যাখ্যা হলো? মানে সচল না হলে অচল, এটা হতে পারে? এ রকম ভাষায় এঁদের আনা যায়!
-যাবে না কেনো? খুব যায়। এই যে আপনি, সচল সচেতন সাবলীল। সুন্দর
-শেষেরটা বাদে। আগেরগুলো ঠিক আছে
-মানে, সুন্দর নয়? সাবলীল হলে তাকে অসুন্দরের ভেতরে ফেলা চলে না। সাবলীল কীসে হয় জানেন?
-কীসে?
-অনেক কিছুর সমাহার
-যেমন? এভাবে জানতাম না তো?
-সহজ, কঠিন, দৃঢ়তা, সাবলীলতা সবকিছু মিলিয়ে সুন্দর।
-সহজ-ই তো সুন্দর
-না। সহজ সব ক্ষেত্রে সুন্দর না। কঠিনও তো সুন্দর। তাহলে?
-হুম। তা ঠিক
-তনিকা, তনিকা বিশ্বাস। তাই তো? এবার কথা শুনি? মানে আপনার যে ব্যাপারে আসা। বলুন
-তনিকা তাকিয়ে আছে, কফির মগের দিকে। চুপচাপ
-বলুন; সমস্যাটা। গত এক বছর ধরে মানিসক চাপ। মানে মেইনটাল ট্রেইস?
-শুধু মেইনটালি নয়, শারীরিকভাবেও। প্রচণ্ড ধকল যাচ্ছে একটার পর একটা। পরপর পাঁচ সাতটা এক বছরে। পেরে ওঠা সম্ভব? আমার রেগুলার চেকআপের সময় ডাক্তারকে বললাম, আমার কোনো অনুভূতি কাজ করছে না। মানসিক সমস্যা হলো না তো? ডাক্তার বললেন, না, ‘আপনি যখন নিজেই বুঝতে পারছেন যে, মানসিক সমস্যা হচ্ছে। তখন নিজেই ওটা কাটিয়ে উঠতে পারবেন। এই একটু সময় লাগবে এই যা। সবগুলো ট্রেইস কিছুদিনের মধ্যে। কাজের ভেতরে ঢুকে পড়ুন আবার সব ঠিক হয়ে যাবে।
-জানেন, আমি মন খারাপ, মন ভালো, কষ্টবোধ দুঃখ কিছুই যেনো বুঝতে পারছি না বেশ কিছুদিন থেকে। তো—-
-হ্যাঁ, বুঝতে পারছি। বলছি তো, ওটা কিছুদিন সময় লাগবে। সময়ে আপনিই ঠিক করে নিতে পারবেন। সেই ক্ষমতা আপনার আছে। যান তো, ও কিছু হবে না। ভাববেন না ওসব। ভাববেন-ই না। ওকে?
-কিন্তু তদরপরই এই দুর্ঘটনাটা আবার। আপনি বুঝতে পারছেন? দীর্ঘদিনের অর্জন আমার এই অবস্থান! আমার মর্যাদা। সব ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে লোকটা। সোজা হয়ে দাঁড়াবো কি করে আমি?
-এমন মনে হচ্ছে কেনো? আমি দেখছি সবকিছু ঠিক আছে। কে বলেছে, আপনার মর্যাদা নষ্ট হয়েছে? আপনার অর্জন, কিচ্ছু নষ্ট হয়নি। অর্জন নষ্ট হয় না তনিকা। এটাও ভুল করি আমরা। এই যে নষ্ট হয়েছে মনে হচ্ছে, এটুকু শুধু কাটাতে হবে। জাস্ট এটুকু। আর সবকিছু ঠিকঠাক। বুঝলেন?
-মানে? আমার মানসিক সমস্যা? এই যে অবসাদ? হাতাশা? ভয়! মানে আপনি কোনো ওষুধ বা পরামর্শ দেবেন না?
-দেবো তো। দিন, হাতটা দিন। প্লিজ
-আমি—-! মানে—-
-হ্যাঁ, আপনি। তনিকা বিশ্বাস। তাই তো?
-হ্যাঁ।
-বিশ্বাসে অনেক কিছু থাকে। ভীষণ তৃপ্তি। এই যে আপনি চব্বিশ মিনিট কাঁদলেন, কফি খেলেন। দেখলাম তো—- আপনার কিচ্ছু হয়নি। আস্থা হারিয়েছেন মাত্র। আর কিচ্ছু হারায়নি আপনার। বিশ্বাসের মধ্যে আস্থা থাকে। অবিচল আস্থা। আমিও বলছি আপনি সম্পূর্ণ ঠিক আছেন। লোকটা বিশ্বাস কেড়ে নিতে পারেনি, আস্থার জায়গাটা নষ্ট করেছে। এতে তো আপনার কোনো দোষ নেই। বিশ্বাস করতেন খুব তাই তো?
-খু-উ-ব। বিশ্বাস করতে আমি পছন্দ করি। বিশ্বাসের মধ্যে অনেক তৃপ্তি। ভীষণ স্বস্তি। রূপমকে এতো বেশি বিশ্বাস করতাম! জানেন, আমি প্রার্থনার মতো ভাবতাম ওকে! কিন্তু—-
তনিকা কাঁপছে। কাঁদছে। কান্না আটকাতে কষ্ট হচ্ছে খুব। মানুষ হাসিও কান্না কোনোটাই বেশি আটকে রাখতে পারে না। হাসি যেমন ওষুধের কাজ করে কান্নাও তেমনি। ভেতর পরিষ্কার করে ফেলে কান্না। কান্নারও দরকার হয়। কাঁদুক
-তনিকা। তনিকার কাঁধ ছুঁয়েছি আমি।
-তনিকা কাঁদছে না। স্থির। অচঞ্চল। আত্মবিশ্বাসে যেমন হয়, বসে আছে। সন্ধ্যা নামছে। নীল সন্ধ্যা। গাঢ় হবে ক্রমেই। সবুজ অন্ধকার। এদিকের পথটা বেশ সরু। অন্ধকারে আরও সরু দেখা যায়। কিছুতেই বিদায় দিতে ইচ্ছে করছে না ওকে। আরও কিছক্ষণ থাকুক না! ইচ্ছে করছে থাকুক। না যাক। ওর আস্থা তৈরি হোক। মানুষ সাজানো হাসি হাসতে পারে কিন্তু সাজিয়ে কাঁদতে পারে না। প্রাণ খুলে একটা দুটো জায়গায় মাত্র কাঁদা যায়, যেখানে আস্থা থাকে। ভালোবাসা থাকে।
কান্না স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কাঁদলে দুঃখ যন্ত্রণা, ক্ষোভ দূর হয়। মানসিক তৃপ্তি আসে। কাঁদলে মানুষকে শিশুর মতো দেখায়। আসলে সব মানুষের ভেতরেই একটা শিশু বসবাস করে। বাহ্যিক আবরণ মানুষর ভেতরের শিশুকে দমন করে রাখে। সুযোগ পেলেই সে শিশু-আচরণ করতে ভালোবাসে। হাসি কান্না উভয়-ই শিশুর মতো, শুদ্ধ। তনিকা কে শিশুর মতোন দেখাচ্ছে। রাত নামছে। সবুজ অন্ধকারে তনিকা যেনো এক গোলাপী শিশু।
আমার খুব ইচ্ছে করছে তনিকার চোখ মুছিয়ে দিতে। আমি খুব করে চাইছি, তনিকা কাঁদুক। আমার উপরে আস্থা জন্মাক। বিশ্বাস করুক। খুব ইচ্ছে করছে, তনিকার মাথায় হাত রাখতে। রাখবো?

×