
ছবি: সংগৃহীত।
চাপ কমানোর সহজ উপায় খুঁজছেন? আপনি একা নন। কাজের চাপ, পারিবারিক টানাপোড়েন কিংবা ব্যক্তিগত উদ্বেগ থেকে মুক্তি পেতে আমরা অনেকেই কিছু 'চটজলদি' অভ্যাসে আশ্রয় নিই- যেমন মোবাইলে স্ক্রল করা, পছন্দের খাবার খাওয়া বা এক গ্লাস মদ্যপানে আশ্রয় নেওয়া। এগুলো আপাতদৃষ্টিতে স্বস্তিদায়ক মনে হলেও, দীর্ঘমেয়াদে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ফেলতে পারে ভয়ানক প্রভাব। গবেষণা বলছে, অনেক সাধারণ স্ট্রেস-রিলিফ অভ্যাস আসলে আমাদের আরও উদ্বিগ্ন, ক্লান্ত এবং নিঃসঙ্গ করে তোলে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিচের এই সাতটি প্রচলিত অভ্যাস চাপ কমানোর পরিবর্তে মানসিক ক্ষতির কারণ হতে পারে:
১. অবিরাম স্ক্রলিং বা 'ডুমস্ক্রলিং':
মোবাইল স্ক্রল করে সময় কাটানো সহজ উপায় মনে হলেও এটি উদ্বেগ, হতাশা এবং নিঃসঙ্গতা বাড়িয়ে দিতে পারে। নেতিবাচক খবর এবং অন্যের “পারফেক্ট” জীবনের ছবি দেখে নিজের জীবনের ওপর অসন্তোষ তৈরি হয়।
বিকল্প: স্ক্রিন টাইম কমিয়ে বই পড়া, হাঁটা বা হালকা ব্যায়ামের মতো কার্যকলাপ বেছে নিন।
২. অতিরিক্ত চিন্তা করা:
সমস্যার সমাধান খুঁজতে বারবার বিষয়টি নিয়ে ভাবা অনেক সময় ফল দেয় না। বরং এটি ‘রিউমিনেশন’ তৈরি করে—একই চিন্তার ঘূর্ণিতে আটকে যাওয়া, যা উদ্বেগ, ঘুমের সমস্যা ও হতাশার জন্ম দেয়।
বিকল্প: মনোযোগ অনুশীলন বা "গ্রাউন্ডিং টেকনিক" ব্যবহার করুন, যেমন—পাঁচটি দেখার বা শোনার জিনিস শনাক্ত করা।
৩. স্ট্রেস খাওয়া (ইমোশনাল ইটিং):
চাপের সময় খাবারের দিকে ঝোঁক প্রাকৃতিক হলেও তা দীর্ঘমেয়াদে ওজন বৃদ্ধি, অপরাধবোধ এবং মুড খারাপের কারণ হতে পারে।
বিকল্প: সুস্থ স্ন্যাকস রাখুন এবং খাবার ছাড়াও হাঁটাহাঁটি, বন্ধুর সঙ্গে কথা বলা বা প্রিয় কোনো শখে মন দিন।
৪. সমস্যা এড়িয়ে চলা:
চাপ এড়াতে বিল পরিশোধ বা কঠিন কথোপকথন এড়িয়ে যাওয়া সাময়িক স্বস্তি দিলেও এটি মানসিক চাপ আরও বাড়ায়।
বিকল্প: কাজগুলো ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে করুন, এবং প্রতিটি ধাপ শেষে নিজেকে ছোট পুরস্কার দিন।
৫. মদ্যপানে আশ্রয় নেওয়া:
মদ্যপান সাময়িকভাবে স্বস্তি দিলেও এটি মস্তিষ্কের স্ট্রেস মোকাবিলার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ঘুমের মানও খারাপ হয়।
বিকল্প: হারবাল চা পান, গরম পানিতে গোসল, আরামদায়ক সংগীত শোনা—এসব উপায় নিরাপদ ও কার্যকর।
৬. অতিরিক্ত অভিযোগ করা বা 'ভেন্টিং':
মন খুলে কথা বলা উপকারী হলেও, অতিরিক্ত অভিযোগ বা নেতিবাচক ভাব প্রকাশ মানসিক চাপ বাড়ায় এবং আশেপাশের মানুষকেও ক্লান্ত করে তোলে।
বিকল্প: সীমিত সময়ের মধ্যে অনুভূতি প্রকাশ করুন এবং আলোচনার শেষটা ইতিবাচক কোনো ভাবনা দিয়ে শেষ করুন।
৭. অতিরিক্ত বা খুব কম ঘুম:
চাপে পড়ে কেউ কেউ ঘুমিয়ে যান বেশি, কেউ আবার ঘুমাতে পারেন না—উভয় পরিস্থিতিই শরীর ও মনের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে।
বিকল্প: প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো ও জাগার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ঘুমানোর আগে স্ক্রিন এড়িয়ে হালকা ব্যায়াম বা ডিপ ব্রিদিং চর্চা করুন।
চাপ ব্যবস্থাপনায় আরও কার্যকর উপায়:
চটজলদি অথচ বিপজ্জনক অভ্যাস বাদ দিয়ে গড়ে তুলুন দীর্ঘমেয়াদী, গবেষণা-ভিত্তিক চাপ কমানোর কৌশল:
মনোযোগ চর্চা (Mindfulness): শ্বাস-প্রশ্বাস অনুশীলন বা গাইডেড মেডিটেশন স্ট্রেস হরমোন কমায়।
ব্যায়াম: অল্প সময় হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম এন্ডোরফিন নিঃসরণ বাড়ায় এবং শরীরকে চাপ মোকাবিলায় সাহায্য করে।
প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকা: দিনে মাত্র ২০ মিনিট প্রকৃতির মাঝে থাকলেও স্নায়ুব্যবস্থা শান্ত হয় এবং মুড ভালো হয়।
চাপ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও সেটাকে জীবনের নিয়ন্ত্রণে নিতে দেওয়া উচিত নয়। যদি আপনার স্ট্রেস দীর্ঘস্থায়ী হয়, দৈনন্দিন জীবন ব্যাহত করে বা প্রিয় কাজ থেকে আপনাকে দূরে সরিয়ে দেয়, তবে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়ার সময় এসেছে।
সব চাপ কমানোর অভ্যাসই উপকারী নয়। অস্থায়ী আরামদায়ক পন্থার বদলে মনোসংযোগ, সংযোগ বা আরামের মতো টেকসই কৌশল গ্রহণ করাই ভালো। মনে রাখুন, স্ট্রেস আপনার জীবনের নিয়ন্ত্রক নয়-আপনি ধাপে ধাপে নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনতেই পারেন।
মিরাজ খান