ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৫ জুলাই ২০২৫, ১০ শ্রাবণ ১৪৩২

যে কারণে বুদ্ধিমান মানুষেরাই বেশি বিষণ্ণ হয়—কারণটা জানলে অবাক হবেন!

প্রকাশিত: ১১:১১, ২৪ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১১:২৪, ২৪ জুলাই ২০২৫

যে কারণে বুদ্ধিমান মানুষেরাই বেশি বিষণ্ণ হয়—কারণটা জানলে অবাক হবেন!

ছবি: সংগৃহীত

সমাজে একটি প্রচলিত ধারণা আছে যে, যারা বেশি বুদ্ধিমান, তারা বুঝি বেশি সুখী হন। কিন্তু মনোবিজ্ঞান এবং নিউরোসায়েন্সের সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো ভিন্ন কথা বলছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বুদ্ধিমান মানুষেরাই প্রায়শই বেশি বিষণ্ণতায় ভোগেন। এর পেছনের কারণগুলো এতটাই গভীর যে তা জানলে আপনি সত্যিই চমকে যেতে পারেন।

কারণ ১: গভীর উপলব্ধি ও বাস্তবের নিষ্ঠুরতা
বুদ্ধিমান মানুষেরা জগৎ এবং জীবনকে অন্যদের চেয়ে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারেন। তারা সমাজের অসংগতি, বৈষম্য, অবিচার এবং পরিবেশগত সমস্যাগুলো অন্যদের চেয়ে বেশি পরিষ্কারভাবে দেখতে পান। এই গভীর উপলব্ধি তাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা তৈরি করে। সাধারণ মানুষ যখন অনেক বিষয়কে সরলভাবে মেনে নেয় বা উপেক্ষা করে, বুদ্ধিমানেরা তখন সেগুলোর জটিলতা ও অন্ধকার দিকগুলো নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। এই অবিরাম চিন্তাভাবনা তাদের মনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং বিষণ্ণতার কারণ হয়।

কারণ ২: অতিরিক্ত বিশ্লেষণ ও আত্ম-সমালোচনা
উচ্চ বুদ্ধিমত্তার অধিকারী ব্যক্তিরা সবকিছু অতিরিক্ত বিশ্লেষণ (Overthinking) করেন। তারা প্রতিটি ঘটনা, সিদ্ধান্ত এবং সম্পর্কের চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন। এই বিশ্লেষণ প্রবণতা যেমন তাদের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে, তেমনি তাদের নিজেদের ভুল বা সীমাবদ্ধতা নিয়েও অতিরিক্ত সমালোচনামূলক করে তোলে। সামান্য ত্রুটি বা ব্যর্থতাও তাদের কাছে অনেক বড় মনে হয়, যা তাদের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয় এবং বিষণ্ণতার দিকে ঠেলে দেয়।

কারণ ৩: একাকীত্ব ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা
বুদ্ধিমান মানুষেরা প্রায়শই অনুভব করেন যে, তাদের চিন্তা বা অনুভূতিগুলো সাধারণ মানুষের কাছে বোধগম্য নয়। তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু, চিন্তা প্রক্রিয়া বা কৌতুক অনেক সময় অন্যদের কাছে দুর্বোধ্য মনে হয়। এর ফলে তারা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন বোধ করতে পারেন এবং একাকীত্বে ভোগেন। এমন পরিবেশে তারা নিজেদের আবেগ প্রকাশ করতে বা মনের কথা বলতে দ্বিধা বোধ করেন, যা বিষণ্ণতার ঝুঁকি বাড়ায়।

কারণ ৪: উচ্চ প্রত্যাশা ও বাস্তবতার সংঘাত
বুদ্ধিমানেরা নিজেদের এবং অন্যদের কাছ থেকে উচ্চ প্রত্যাশা করেন। তারা নিখুঁত ফলাফল, ন্যায়বিচার এবং যুক্তিসঙ্গত আচরণের আশা করেন। যখন বাস্তবতার সাথে এই প্রত্যাশার সংঘাত হয়, তখন তারা হতাশ হয়ে পড়েন। মানুষের ভুল, অন্যায় বা অযুক্তিকতাকে তারা সহজে মেনে নিতে পারেন না, যা তাদের মনে গভীর দুঃখের জন্ম দেয়।

কারণ ৫: মানসিক দুর্বলতা নয়, ভিন্ন মস্তিষ্কের কার্যক্রম
গবেষকরা বলছেন, বুদ্ধিমান মস্তিষ্কের গঠন ও কার্যক্রম ভিন্ন হতে পারে। মস্তিষ্কের কিছু অংশ, যেমন প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স (Prefrontal Cortex) এবং অ্যামিগডালা (Amygdala), যারা বুদ্ধিমত্তা এবং আবেগের সাথে জড়িত, তাদের মধ্যে ভিন্ন ধরনের সংযোগ থাকতে পারে। এর ফলে তারা নেতিবাচক উদ্দীপনায় অন্যদের চেয়ে বেশি সংবেদনশীল হতে পারেন, যা বিষণ্ণতার প্রবণতা বাড়ায়।

সুতরাং, যদি আপনি নিজেকে বেশি বুদ্ধিমান এবং একইসাথে বিষণ্ণ মনে করেন, তবে জানবেন আপনি একা নন। এটি আপনার দুর্বলতা নয়, বরং আপনার গভীর চিন্তাভাবনা এবং সংবেদনশীলতার ফল। এই সচেতনতা আপনাকে নিজের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করতে পারে। প্রয়োজন মনে করলে অবশ্যই মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

ফারুক

×