
ছবি: সংগৃহীত।
হৃদরোগ বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এই রোগের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক সময়ই এসব অভ্যাস ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে এবং তা টের পাওয়া যায় না, যতক্ষণ না তা মারাত্মক হৃদযন্ত্রের সমস্যায় রূপ নেয়। অতিরিক্ত চর্বি, চিনি, লবণ এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারের প্রতি নির্ভরশীলতা ধীরে ধীরে উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, স্থূলতা এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের মতো সমস্যার জন্ম দেয়, যা সরাসরি হৃদস্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন ১০টি খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে—
১. অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া
প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, ইনস্ট্যান্ট নুডলস, রেডি-টু-ইট মিলস, এবং ডেলি মিট (প্রক্রিয়াজাত মাংস) নিয়মিত খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এসব খাবারে ট্রান্স ফ্যাট, সংরক্ষণকারী উপাদান এবং অতিরিক্ত সোডিয়াম থাকে, যা কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ বাড়িয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি তৈরি করে।
২. অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ
চিনি বা চিনিযুক্ত খাবার যেমন কোমল পানীয়, মিষ্টান্ন, চকলেট, সিরিয়াল ইত্যাদি অতিরিক্ত খাওয়া রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়ায়, যা দীর্ঘমেয়াদে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের কারণ হতে পারে।
৩. বেশি লবণ খাওয়া
খাবারে অতিরিক্ত লবণ যোগ করা বা অতিরিক্ত লবণযুক্ত স্ন্যাকস খাওয়া রক্তচাপ বাড়ায় এবং রক্তনালী ও হৃদপিণ্ডে ক্ষতি করে। প্রক্রিয়াজাত খাবার ও রেস্টুরেন্টের খাবার লবণের গোপন উৎস হিসেবে কাজ করে।
৪. নিয়মিত নাস্তা না করা
প্রতিদিন সকালে নাস্তা না খাওয়ার ফলে বিপাকক্রিয়া ব্যাহত হয়, কর্টিসলের মাত্রা বেড়ে যায় এবং অনিয়মিত খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। এর ফলে স্থূলতা, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে।
৫. গভীর রাতে খাবার খাওয়া
রাতে দেরি করে ভারী খাবার খাওয়ার ফলে হজমপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয় এবং রক্তে শর্করা ও চর্বির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে বিঘ্ন ঘটে। এটি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় এবং দীর্ঘমেয়াদে হৃদযন্ত্রে চাপ তৈরি করে।
৬. খাদ্যে আঁশের অভাব
ফল, সবজি ও সম্পূর্ণ শস্যজাত খাদ্যে কম আঁশ থাকলে তা হজম ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে বাধা সৃষ্টি করে। বিশেষ করে দ্রবণীয় আঁশ রক্ত থেকে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল দূর করতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
৭. অতিরিক্ত লাল মাংস ও প্রক্রিয়াজাত মাংস খাওয়া
গরু বা খাসির মাংস এবং প্রসেসড মিট যেমন সসেজ, বেকন প্রভৃতি অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা ধমনীতে ব্লকেজ ও অ্যাথেরোসক্লেরোসিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
৮. ভাজাভুজি ও ফাস্ট ফুডের ওপর নির্ভরশীলতা
নিয়মিত ফ্রাইড চিকেন, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, বার্গার জাতীয় খাবার খাওয়া অতিরিক্ত ক্যালোরি ও ট্রান্স ফ্যাট সরবরাহ করে, যা শরীরে চর্বি জমিয়ে হৃদপিণ্ডে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত করে।
৯. চিনিযুক্ত পানীয় পান করা
সফট ড্রিংক, এনার্জি ড্রিংক, মিষ্টি ফলের রস ইত্যাদি অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড বেড়ে যায় এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) কমে যায়। এর ফলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
১০. অনিয়মিত খাওয়া ও অতিভোজন
অনিয়মিত খাওয়া, যেমন দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা ও পরে অতিরিক্ত খাওয়া, হঠাৎ রক্তে শর্করা ও রক্তচাপের ওঠানামা ঘটায়। এই ধরণের মেটাবলিক চাপ হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক ছন্দে প্রভাব ফেলে।
হৃদস্বাস্থ্য রক্ষায় কী খাচ্ছেন, কতটুকু খাচ্ছেন এবং কখন খাচ্ছেন—এগুলো নিয়ে সচেতন থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুললে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।
তথ্যসূত্র: এনডিটিভি
সায়মা ইসলাম