
ছবি: সংগৃহীত।
চিনি কি আপনার স্বাস্থ্যকর জীবনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে? এক মাসের জন্য চিনি বাদ দিলেই শরীরের ভিতরে ঘটে যায় চমকপ্রদ কিছু পরিবর্তন—বলছেন চিকিৎসকরা।
বিশেষজ্ঞ ডা. সৌরভ শেঠি জানাচ্ছেন, শরীরের জন্য চিনি বাদ দেওয়া একাধিক উপকার বয়ে আনে। ওজন কমার পাশাপাশি দাঁতের ক্ষয় হওয়ার ঝুঁকি কমে যায় এবং যকৃতে জমে থাকা ফ্যাটও হ্রাস পেতে শুরু করে, যা ‘ফ্যাটি লিভার’ নিরাময়ে সহায়তা করে।
তিনি আরও বলেন, “বিশেষ করে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বা প্রি-ডায়াবেটিস থাকলে কিডনির কার্যকারিতা উন্নত হয়। ধমনীতে প্রদাহ কমে আসে, যা হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো।”
শুধু শারীরিক নয়, মানসিকভাবেও উন্নতি ঘটে। ডা. শেঠির মতে, চিনিমুক্ত থাকার ফলে মনোযোগ ও মানসিক স্বচ্ছতা বাড়ে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষিত এই অন্ত্ররোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, “চিনি শরীরের শ্বেত রক্তকণিকাকে দুর্বল করে। চিনি বাদ দিলে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে এবং শরীর আরও বেশি পরিমাণে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ যেমন ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও জিঙ্ক ধরে রাখতে পারে।”
গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ টাইপ-২ ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। সেই সঙ্গে ত্বকের বার্ধক্যও ত্বরান্বিত করে। ফলে চিনি বাদ দিলে ত্বক স্বাস্থ্যকর ও প্রাণবন্ত হতে শুরু করে।
তবে চিকিৎসকরা সতর্ক করছেন, আপনি যদি ৩০ দিন চিনি খাওয়া বন্ধ করে আবার উচ্চ চিনি-যুক্ত খাদ্যে ফিরে যান, তাহলে এই উপকারগুলোর অনেকটাই নষ্ট হয়ে যাবে। বড় ধরনের খাদ্য পরিবর্তনের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
অনেক সময় এমন কড়া খাদ্যনিয়ম মানতে গিয়ে কেউ কেউ 'খারাপ খাবার' নিয়ে অতি-সচেতনতা বা খাদ্য নিয়ে মানসিক চাপের মধ্যে পড়েন। যাঁরা খাওয়াদাওয়া সংক্রান্ত মানসিক সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের জন্য চিনিমুক্ত ডায়েট ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
যুক্তরাজ্যের এনএইচএস অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্কদের দৈনিক সর্বোচ্চ ৩০ গ্রাম ‘ফ্রি সুগার’ গ্রহণ করা উচিত। শিশুদের ক্ষেত্রে তা বয়সভেদে ১০-২৪ গ্রাম।
ফ্রি সুগার বলতে বোঝানো হচ্ছে—মিষ্টান্ন, কেক, বিস্কুট, চকলেট এবং কিছু কোমল পানীয় বা ফলের জুসে থাকা সংযোজিত চিনি। প্রাকৃতিকভাবে ফল, সবজি এবং দুধে থাকা চিনি নিয়ে তেমন উদ্বেগের প্রয়োজন নেই।
ইচ্ছাশক্তি থাকলে এক মাস চিনি ছাড়া থাকা সম্ভব—এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। অনেকেই 'নো সুগার চ্যালেঞ্জ'-এ অংশ নিয়ে নিজের খাবারের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন।
এই ক্ষেত্রে সাধারণত প্রাকৃতিক চিনি (যেমন ফল ও সবজিতে থাকা চিনি) বাদ না দিয়ে কেবল সংযোজিত চিনি বাদ দেওয়া হয়।
চিনিমুক্ত ডায়েটে যা রাখতে পারেন:
সবজি: ব্রকলি, ফুলকপি, পালং শাক, গাজর, অ্যাসপ্যারাগাস, জুচিনি, মিষ্টি আলু
ফলমূল: আপেল, কমলা, বেরি, আঙুর, চেরি, জাম্বুরা
প্রোটিন: মুরগি, মাছ, গরুর মাংস, তোফু, ডিম
ভালো চর্বির উৎস: ডিমের কুসুম, অ্যাভোকাডো, বাদাম, বীজ, অলিভ অয়েল, আনসুইটেনড দই
জটিল কার্বোহাইড্রেট: শিম, কুইনোয়া, ব্রাউন রাইস, স্কোয়াশ
পানীয়: পানি, স্পার্কলিং ওয়াটার, চিনি ছাড়া চা-কফি
চিনিমুক্ত থাকার অভ্যাস আপনাকে শুধু শারীরিকভাবেই নয়, মানসিকভাবেও আরও স্বাস্থ্যবান করে তুলতে পারে—বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই একটি মাস থেকেই হোক শুরু।
মিরাজ খান