
ছবি: সংগৃহীত।
দেশজুড়ে তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়ছে, সঙ্গে আর্দ্রতা কমে গিয়ে তৈরি হয়েছে মরুভূমিসদৃশ আবহাওয়া। এই অস্বস্তিকর গরমে সুস্থ মানুষ যেমন বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন, তেমনই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পরিস্থিতি হয়ে উঠছে আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত গরমের ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে গ্লুকোজ কমে যাওয়া) অথবা হাইপারগ্লাইসেমিয়ার (রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যাওয়া) ঝুঁকি অনেক বেশি বেড়ে যায়। বিশেষ করে যেসব ডায়াবেটিস রোগীর কিডনি, হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপের মতো জটিলতা রয়েছে, তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।
গরমে ডায়াবেটিস রোগীদের ঘাম বেশি হয়, আর এই ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে বেরিয়ে যায় প্রয়োজনীয় পানি ও ইলেকট্রোলাইট। এর ফলে রক্তের গ্লুকোজ ঘন হয়ে গিয়ে হাইপার-অস্মোলালিটি দেখা দিতে পারে, যা চরম পর্যায়ে পৌঁছালে রোগী অচেতন হয়ে যেতে পারেন কিংবা জীবনহানির ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
সতর্কতা যেভাবে অবলম্বন করবেন:
ঘন ঘন পানি পান করতে হবে এবং পানি জাতীয় খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তবে শুধু পিপাসা মেটাতে স্যালাইন না খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা, বিশেষ করে কিডনি, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের ক্ষেত্রে।
ঠান্ডা ফ্রিজের পানি, অতিরিক্ত ক্যাফেইন, চা-কফি ও কোমল পানীয় খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এসব পানীয় শরীরকে আরও ডিহাইড্রেট করে।
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। অতিরিক্ত ভাজা, মসলাদার খাবারের পরিবর্তে অল্প মসলায় রান্না করা স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে যা শরীর ঠান্ডা রাখে।
চিকিৎসকদের মতে, ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ার চেয়ে রক্তে গ্লুকোজ কমে যাওয়া (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) আরও ভয়ংকর। অতিরিক্ত গরমে ক্লান্তি বা ঘামই হতে পারে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ। তাই যারা নিয়মিত ইনসুলিন বা ওষুধ গ্রহণ করেন, তাদের উচিত রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বারবার পরীক্ষা করে দেখা এবং প্রয়োজনে গ্লুকোজ ট্যাবলেট সঙ্গে রাখা।
গাড়ি চালানোর সময়ও ডায়াবেটিস রোগীদের বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে। ভ্রমণের আগে ও পরে ব্লাড সুগার পরীক্ষা করা উচিত।
গরমে বাজারে নানা ধরনের রসালো ফল পাওয়া যায়, যা অনেক সময় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এসব ফল খাওয়া উচিত নয়।
চিকিৎসকদের মতে, শীতকালের তুলনায় গরমকালে শরীরের বিপাক হার অনেক বেড়ে যায়, ফলে ক্ষুধাও বেশি লাগে। এর ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়, যা নিয়ন্ত্রণে না রাখলে রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যেতে পারে।
প্রচণ্ড গরমে ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতিটি পদক্ষেপে সচেতনতা জরুরি। নির্দিষ্ট সময় পরপর খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ এবং নিয়মিত গ্লুকোজ পরীক্ষা-এই তিনটি অভ্যাসই তাদের সুরক্ষিত রাখতে পারে তাপমাত্রাজনিত জটিলতা থেকে।
মিরাজ খান