ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৫ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

স্ত্রীর অর্জনের দিনে পুরনো অপমান তুলে ধরলেন জাস্টিন বিবার, সমালোচনার ঝড়

প্রকাশিত: ০১:২২, ২৫ মে ২০২৫; আপডেট: ০১:২৩, ২৫ মে ২০২৫

স্ত্রীর অর্জনের দিনে পুরনো অপমান তুলে ধরলেন জাস্টিন বিবার, সমালোচনার ঝড়

ছবিঃ সংগৃহীত

ভালবাসার সম্পর্ক মানেই পরস্পরের পাশে থাকা, একে অপরের সাফল্যে গর্ব করা, এবং সেই মুহূর্তগুলোতে একে অপরকে সমর্থন ও উদ্‌যাপন করা। কিন্তু যদি সেই বিশ্বাস ভেঙে যায়—তা-ও আবার প্রকাশ্যে—তবে প্রশ্ন উঠেই যায়: একজন নারীর কতটা অপমান সহ্য করা উচিত, শুধুমাত্র ‘ভালবাসা’র নামে?

সম্প্রতি ঠিক এমনই এক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন কানাডিয়ান পপ তারকা জাস্টিন বিবার, যখন তিনি তাঁর স্ত্রী হেইলি বিবার-এর প্রথম ভোগ (Vogue) ম্যাগাজিন কভার প্রকাশ উপলক্ষে ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্ট দেন। যদিও পোস্টটির উদ্দেশ্য ছিল উদ্‌যাপন, কিন্তু তার মূল বক্তব্যে এমন কিছু বলা হয়, যা অনেকের কাছেই অপমানজনক লেগেছে।

কী বলেছিলেন জাস্টিন?

জাস্টিন লিখেছিলেন, “এই ছবিটা আমাকে হেইলির সঙ্গে আমার এক বিশাল ঝগড়ার কথা মনে করিয়ে দেয়। আমি হেইলিকে বলেছিলাম যে ও কখনো ভোগ ম্যাগাজিনের কভারে উঠতে পারবে না। হ্যাঁ, জানি, খুবই নির্মম কথা ছিল সেটা। আমি নিজেকে অপমানিত মনে করেছিলাম, তাই ওকেও কষ্ট দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন বুঝি, বদলা নেওয়া কিছুই সমাধান করে না, বরং তা আমাদের আসল চাওয়া—ঘনিষ্ঠতা ও সংযোগ—থেকে আরও দূরে সরিয়ে দেয়। হেইলি, তুমি জানো, কিন্তু আমি আবারও বলছি, ক্ষমা করে দিও আমাকে। আমি ভুল বলেছিলাম। তুমি অবশ্যই ভোগের কভার মডেল হতে পারো, এবং হয়েছও। আমি ভুল প্রমাণিত হয়েছি।”

পোস্টটি আপলোডের পর পরই সমালোচনার ঝড় ওঠে। এক ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী লিখেন, “এই ভালোবাসা যেন আমার জীবনে না আসে।” — এই মন্তব্যের লাইক সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

আরেকজন মন্তব্য করেন, “তুমি পোস্টটা এভাবে লিখতে পারতে—‘হেইলি, আমি তোমার জন্য গর্বিত। তোমার সঙ্গে জীবন গড়ে তোলা, তোমার স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপ নিতে দেখা—এটা আমার জন্য অসাধারণ এক অনুভূতি।’”

কেন এত সমালোচনা?

একজন সাংবাদিক হিসেবে যিনি সম্পর্ক, যৌনতা ও পরিবার নিয়ে বহু বছর ধরে লিখছেন, এই পোস্টে ‘ভালবাসার উদ্‌যাপন’-এর চেয়ে ‘অদ্ভুত পিছুটান’ অনেক বেশি চোখে পড়েছে। স্ত্রীকে ‘বিনীতভাবে’ হেয় করার যে প্রবণতা, তা যেন স্ত্রী-পন্থী স্বামীদের যুগেও হারিয়ে যায়নি।

এটি যেন সম্পর্ক নয়, বরং এক ধরনের টিনএজ ছেলেমানুষির বহিঃপ্রকাশ। আর এমন বক্তব্য, যেখানে একজন পুরুষ স্বীকার করছেন তিনি তার স্ত্রীর স্বপ্নকে ছোট করেছিলেন, সেটা কি আদৌ সামাজিক মাধ্যমে ‘উৎসব’ হিসেবে প্রকাশ করার মতো কিছু?

এই ঘটনায় যেন আবারও উঠে এলো বহুবার দেখা সেই দৃশ্য:
একজন নারী যখন তার স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যান, তখন তার জীবনের ‘সঙ্গী’ হয়ত দাঁড়িয়ে থাকেন পাশে নয়, বরং ছায়ায়—অসহিষ্ণু, ঈর্ষান্বিত বা উদাসীনভাবে।

ঘরোয়া বিষয়ের এমন প্রচার কেন?

জাস্টিন হয়ত চেয়েছিলেন তাঁর ভুল স্বীকার করে হেইলিকে সম্মান জানাতে। কিন্তু ২৯৪ মিলিয়নেরও বেশি ফলোয়ারের সামনে এমন একটি ব্যক্তিগত ও অপমানজনক স্মৃতি টেনে এনে প্রকাশ্যে আনা সত্যিই যুক্তিযুক্ত কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

এমনকি অনেকে একে “I hate my wife final boss” পোস্টও বলছেন—যা নিছকই রসিকতা নয়, বরং এক ধরনের সামাজিক বার্তা।

শেষ কথা

উল্লেখযোগ্য অর্জনের দিনে একজন নারীর পাশে থাকা উচিত তার সঙ্গীর। তার প্রাপ্য ফুল, তার প্রাপ্য সম্মান—সবকিছু যেন নিঃসঙ্কোচে পাওয়া যায়। কিন্তু সেই মুহূর্তে যদি কেউ আপনাকে সেই পুরনো অপমানের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়, তাহলে সেই সম্পর্কের ভিত্তিই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।

একটি উদ্‌যাপনমূলক পোস্টে অবাধ্য অতীত তুলে ধরার বদলে, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং নিঃস্বার্থ গর্বই তো কাঙ্ক্ষিত ছিল।

সূত্রঃ https://www.facebook.com/share/1BxEp294Tj/

ইমরান

×