ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৭ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মেয়েরা আসলে কী চায়? তারা কি সত্যিই রোমান্টিক ছেলেকে পছন্দ করে?

প্রকাশিত: ২১:২২, ১৬ মে ২০২৫

মেয়েরা আসলে কী চায়? তারা কি সত্যিই রোমান্টিক ছেলেকে পছন্দ করে?

ছ‌বি: প্রতীকী

বর্তমান সময়ে আমরা প্রেম, সম্পর্ক ও বিবাহ নিয়ে অনেক রকম আলোচনা শুনি— বিশেষ করে, নারীরা কী চায়, পুরুষরা কী দেয়, আর সম্পর্কের ভারসাম্য কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। একদিকে আমরা দেখি, নারীরা রোমান্টিকতা, উপহার, সারপ্রাইজ পেতে পছন্দ করে— এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু শুধুই রোমান্স, উপহার বা ফুল দিয়ে কোনো সম্পর্ক টিকে থাকে না। একজন নারী তার জীবনসঙ্গীর ভেতরে যে বিষয়গুলো বেশি খোঁজে, তা হলো দায়িত্বশীলতা, স্থিতিশীলতা এবং মানসিক দৃঢ়তা।

পুরুষ যদি শুধুমাত্র রোমান্টিকতার মাধ্যমে একজন নারীকে সন্তুষ্ট করতে চায়, তাহলে সেই সম্পর্ক হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই দুর্বল হয়ে যাবে। কারণ, একজন নারী জীবনের জন্য একজন “পার্টনার” খোঁজে— শুধু প্রেমিক নয়। সে এমন একজনকে খোঁজে, যে জীবনের প্রতিকূলতায় তার পাশে দাঁড়াতে পারবে, সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, এবং তার পরিবারকে সম্মানের সাথে ধারণ করতে পারবে। তাই, শুধু ভালোবাসা নয়, পুরুষের পক্ষ থেকে দায়িত্বশীল আচরণও অপরিহার্য।

তবে এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিপরীত চিত্রও দেখা যায়। অনেক সময় আমরা ধরেই নেই যে রোমান্টিকতা কেবল নারীদের প্রয়োজন। বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন। পুরুষরাও ভালোবাসা, যত্ন, প্রশংসা ও আবেগভরা আচরণে তৃপ্তি পায়। তাদেরও প্রয়োজন পড়ে এমন একজন সঙ্গীর, যে তাকে বোঝে, সম্মান করে এবং বিনা শর্তে গ্রহণ করে। অনেক সময় পুরুষেরা সমাজের চাপের কারণে নিজেদের আবেগ লুকিয়ে রাখে, তাদের অনুভূতির চাহিদাগুলো মুখ ফুটে বলে না। অথচ তারাও গভীরভাবে ভালোবাসে, এবং একবার ভালোবেসে ফেললে নিজের সর্বস্ব দিতে প্রস্তুত থাকে।

আরেকটি চিরন্তন ভুল বোঝাবুঝি হলো— নারীরা খুব আবেগপ্রবণ, খুবই কোমল ও ভালোবাসায় পরিপূর্ণ। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত— বিশেষ করে বিয়ের মতো সিদ্ধান্তে— নারীরা অনেক বেশি হিসেবি, ক্যালকুলেটিভ হয়ে ওঠে। তারা দেখে, সেই পুরুষটি কতটা দায়িত্বশীল, কতটা নিরাপত্তা দিতে পারবে, ভবিষ্যতে সংসার চালাতে পারবে কি না। অন্যদিকে, পুরুষেরা এই ব্যাপারে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি আবেগপ্রবণ। তারা প্রেমে পড়লে সবকিছু ছেড়ে সেই একজনকে গ্রহণ করতে রাজি হয়ে যায়, অনেক সময় কোনো হিসেব না করেই।

এই ব্যবধানই সম্পর্কের অনেক সমস্যার শিকড়। একজন নারী হয়তো নিজের অসন্তুষ্টি বা অভিমান প্রকাশ করবে না, কিন্তু সাইলেন্ট ট্রিটমেন্ট বা ক্ষোভ জমিয়ে রাখবে। পুরুষ তখন বুঝতেই পারবে না কী ভুল করেছে, কেন স্ত্রী বা প্রেমিকা রাগ করে আছে। এই পরিস্থিতিতে অনেক পুরুষ সত্যিই আন্তরিকভাবে বুঝতে চায়, জানতে চায় কী ভুল করেছে। কিন্তু নারীরা অনেক সময় প্রত্যক্ষভাবে কিছু বলে না— ধরে নেয় পুরুষ বুঝে নেবে। অথচ বাস্তবে তা হয় না।

একটা উদাহরণ খুব প্রচলিত— পুরুষ ঘুমাতে চায়, নারী বলে "ঘুমিয়ে যাও", অথচ তার প্রত্যাশা থাকে— সে জেগে থেকে তার সাথে কথা বলুক। এমন অনেক সূক্ষ্ম ইঙ্গিত থাকে যা পুরুষরা সবসময় ধরতে পারে না। এবং যখন বুঝতে পারে, ততক্ষণে ক্ষতি অনেকটাই হয়ে গেছে।

এইসব বিষয়ে একটা বড় প্রশ্ন দাঁড়ায়— আমরা নারীরা কি সম্পর্কের ভিত গঠনে সমানভাবে এফোর্ট দিচ্ছি? আমরা কি কেবল চাই যে আমাদের বুঝুক, আমাদের ভালোবাসুক, আমাদের রাণীর মতো ট্রিট করুক? কিন্তু আমরা কি নিজেরাও আমাদের জীবনসঙ্গীদের বোঝার চেষ্টা করি? তার প্রিয় জিনিস, তার আগ্রহ, তার মানসিক চাপ— এসব নিয়ে কি আমরা ভাবি? যেমন, কতজন স্ত্রী বা প্রেমিকা আছেন, যারা জানেন তাদের স্বামীর প্রিয় গেম কী, প্রিয় টেকনোলজি কী, কিংবা সে কী করলে মানসিক প্রশান্তি পায়?

ভালোবাসা যদি শুধু একপাক্ষিক হয়, তবে তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। একজন পুরুষ সারাক্ষণ প্রিন্সেস ট্রিটমেন্ট দিতে দিতে একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এবং তখনই সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়।

সুতরাং, আমাদের উচিত একে অপরকে শুধুই রোমান্টিকতা নয়, বোঝাপড়া, দায়িত্ব, শ্রদ্ধা ও ধৈর্যের সাথে ভালোবাসা। পুরুষের মতো নারীকেও এই সম্পর্কের ভার বহন করতে হবে সমানভাবে। আমরা যদি একে অপরের প্রতি কৃতজ্ঞ হই, যদি আমাদের জীবনসঙ্গীর প্রয়াসকে সম্মান করি, তবে সম্পর্ক অনেক শক্ত ভিতের উপর দাঁড়াবে।

সম্পর্কের চাবিকাঠি শুধু "তুমি কেমন লাগছো", "তোমাকে ভালোবাসি", "এই ফুলটা তোমার জন্য" না। বরং চাবিকাঠি হলো— আমি তোমার পাশে আছি, তুমি যেমন তেমন করেই তোমাকে ভালোবাসি, এবং আমি এই সম্পর্কের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। এই বোঝাপড়ার জায়গা থেকেই গড়ে উঠতে পারে এক সত্যিকারের পারস্পরিক সম্পর্ক— যেখানে পুরুষ আর নারী দুইজনই সমানভাবে মূল্যবান।

ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=y4x_4Lp8JNM

এম.কে.

×