
সুস্থ ও সুরক্ষিত জীবনের চাবিকাঠিই হলো পরিচ্ছন্নতা। ঘর-গেরস্থালি, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ তো বটেই, সুস্থ শরীরের জন্য নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাটা সবচেয়ে আগে জরুরী। অপরিচ্ছন্ন জায়গা মানেই সেখানে মনের সুখে বাসা বাঁধতে পারে জীবাণুরা। বেশিরভাগ সংক্রমণ ছড়ায় নোংরা, অপরিচ্ছন্ন জায়গা বা অপরিষ্কার জামাকাপড় থেকে। হাইজিনের অভাব রয়েছে যেখানে সেখানেই বাড়তে পারে জীবাণুরা। মাত্র ৮ ঘণ্টায় যে কোন সংক্রামক জীবাণু বেড়ে এক কোটি ৭০ লাখে পৌঁছতে পারে। ছড়িয়ে পড়তে পারে একটা বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে। কাজেই সংক্রামক রোগকে রুখতে হলে সবচেয়ে আগে পরিচ্ছন্নতার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
বর্তমান বিশ্বে আতঙ্ক তৈরি করেছে যে মারণ ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে হলেও সেই হাইজিনই প্রথম কথা। নিজের চারপাশ তো বটেই নিজেকেও সাফসুতরো রাখতে হবে সবসময়। দিনে কয়েকবার জামাকাপড় বদলানো, হাত-পা পরিষ্কার রাখা, বারে বারে হাত সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে ধুয়ে ফেলা, চুল, দাঁত, নখ পরিষ্কার রাখা। বাড়ির দরজা, জানালা, মেঝে, বিছানা এগুলো তো পরিষ্কার রাখতেই হবে।
পরিচ্ছন্নতার কারণেই অনেক রোগমুক্তি হয়। কী কী সুবিধা মেলে ১) শরীর থেকে রোগ-জীবাণু নির্মূল করা যায়, ২) শরীরের দুর্গন্ধ দূর হয় ৩) স্ট্রেস ফ্রি লাগে, পেশির ক্লান্তি দূর হয়, ৪) ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ে ৫) অনেক বেশি তরতাজা ও ঝকঝকে লাগে ৬) আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়ে।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, পেটের রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর ২০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা বলছে, বিশ্বজুড়ে ১০০ কোটির বেশি মানুষ পরিষ্কার জল পায় না। ২০০ কোটির কাছাকাছি মানুষ নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করে। প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে অন্তত ২০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয় জলবাহিত পেটের রোগে ভুগে। তার মধ্যে পাঁচ বছর বয়সের নিচে শিশুদের মৃত্যুহার বেশি। এর পিছনে মানুষের সচেতনতার অভাব অনেকাংশেই দায়ী। চারপাশের পরিবেশ নোংরা করে রাখা, মলমূত্র ইত্যাদি থেকে ক্ষতিকর জীবাণু ছড়ায়। নালার জলে বা পুকুরের আবদ্ধ জল ব্যবহারে জলবাহিত রোগ যেমন হয় তেমনই চর্ম রোগও হয়। নোংরা জল ব্যবহার করার ফলে মহিলাদের ফাঙ্গাল, ব্যকট্রিয়াল, প্রোটোজুয়াল রোগ হয়। নোংরা জল ব্যবহারে পেটের রোগের কারণে শিশু, কিশোর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেই চলেছে। অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস ত্যাগ করার ক্ষেত্রে এখনও আমাদের যথেষ্ট সচেতনতার অভাবই এই মৃত্যুর কারণ বলে স্বাস্থ্য আধিকারিকরা মনে করেন।
পরিচ্ছন্নতার পাঠ শুরু হোক নিজেকে দিয়েই। দেখে নেওয়া যাক কী কী ভাবে নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, টিপটপ রাখবেন।
মাথা ও চুল পরিষ্কার
সপ্তাহে দু’বার অন্তত চুলে শ্যাম্পু করা উচিত। অথবা শিকাকাই দিয়ে চুল ধোওয়া উচিত। পরিষ্কার চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ান।
চোখ, নাক, কান পরিষ্কার
দিনে কয়েকবার পরিষ্কার জল দিয়ে চোখ ধোওয়া উচিত।
সপ্তাহে একবার কটন বাড দিয়ে কান পরিষ্কার করা ঠিক হবে। তবে বেশি খোঁচাখুঁচি নয়, সাবধানে কান পরিষ্কার করা উচিত।
নাকে যেন ময়লা না জমে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। পরিষ্কার জল, কাপড় নিয়ে নাক পরিষ্কার রাখুন। ছোট বাচ্চাদের সর্দি হলে, তাদের নাকও পরিষ্কার রাখা উচিত।
মুখ পরিষ্কার রাখতেই হবে
দিনে দু’বার ব্রাশ করা বাধ্যতামূলক। একবার ঘুম থেকে ওঠার পরে, আর একবার রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে।
খাবার খাওয়ার পরে ভাল করে মুখ ধোওয়া উচিত। তা না হলে দাঁতের ফাঁকে খাবার জমে সেখানে জীবাণু তৈরি হয়। যার থেকে দাঁতের ক্ষয়, ক্যাভিটি, মাড়ি থেকে রক্তপাত সবই হতে পারে।
আপনার প্রতিদিনের ব্যবহার্য পোশাক যেন ঘাম জমে দুর্গন্ধ না তৈরি করে সেদিকে খেয়াল রাখুন। প্রয়োজনে প্রতি সপ্তাহে আপনার ব্যবহারিক পোশাকগুলো পরিষ্কার করার অভ্যাস করুন।
কথায় কথায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে লেকচার দেয়ার লোক অনেকেই আছেন। কিন্তু বাস্তবে এসব লেকচারের সিকিভাগ বাস্তবায়নেও তাদের ভীষণ আলসেমি। আজকে আমরা জানব কীভাবে খুব সহজে নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখতে পারি।
খাওয়ার আগে ও পরে ভালভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
বাইরে থেকে ফেরার পর যত দ্রুত সম্ভব পোশাক পাল্টে ক্যাজুয়াল পোশাক পরে ফেলুন।
গরমে ঘামের দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা পেতে অবশ্যই মানসম্মত বডি স্প্রে বা পারফিউম ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
হাত পায়ের নখ যথাসম্ভব পরিষ্কার ও ছোট রাখুন। অন্যদিকে যারা নখ রাখাটাকে তাদের স্টাইলের অংশ ভাবেন তার নখের ভেতরের অংশ পরিষ্কার রাখুন।
সময়ের গোছগাছ সময়েই শেষ করুন। সপ্তাহে একদিন সব জিনিষ গোছানোর পরিকল্পনা না করে জায়গার জিনিস জায়গায় রাখার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
নিয়মিত গোসল করা এবং বাইরে থেকে ফেরার পর হাত, পা ও মুখ ধোয়ার মতো ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতাগুলো বজায় রাখুন।
নিজের ব্রাশ তোয়ালে নিজের পোশাকগুলোর মতো নিজেই পরিষ্কার রাখার উদ্যোগ নিন।
নিজের রুমের ডাস্টবিন নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
একইভাবে নজর দিন ঘরের আসবাবপত্র, চাদর, বালিশ, পর্দা ও বাথরুমের পরিচ্ছন্নতার প্রতিও।