
ছবিঃ সংগৃহীত
নতুন আইন অনুযায়ী, আপোষ বণ্টননামা দলিল ছাড়া উত্তরাধিকার সম্পত্তির নামজারি ও বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ; অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে আইনি ব্যবস্থা।
উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমি বা সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক বিরোধ ও আইনি জটিলতা কমাতে অবশেষে সরকার বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, উত্তরাধিকার সম্পত্তি ভাগাভাগি করতে হবে বাধ্যতামূলকভাবে ‘আপোষ বণ্টননামা দলিলের’ মাধ্যমে। এই দলিল ছাড়া কোনোভাবেই সম্পত্তির নামজারি বা বিক্রয় সম্ভব হবে না।
এছাড়া কেউ নিয়ম মানতে ব্যর্থ হলে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে।
কেন এই পরিবর্তন?
বাংলাদেশে উত্তরাধিকার সম্পত্তি নিয়ে ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে ঝগড়া-মামলার ঘটনা নতুন নয়। এই নিয়ে প্রতিদিনই দেশের দেওয়ানি আদালতগুলোতে নতুন নতুন মামলা যুক্ত হচ্ছে, যার বেশিরভাগই ভূমি মালিকানা সংক্রান্ত।
২০০৪ সালেই আপোষ বণ্টননামা দলিল বাধ্যতামূলক করা হয়, কিন্তু বাস্তবে তার প্রভাব ছিল সীমিত। অনেকেই মৌখিকভাবে বা অরেজিস্ট্রিকৃত চুক্তির মাধ্যমে জমি ভাগ করে নেন, যা ভবিষ্যতে বড় জটিলতা সৃষ্টি করে।
নতুন নিয়মে যা থাকছে
-
উত্তরাধিকার সম্পত্তি ভাগ করতে হলে আবশ্যিকভাবে দলিল করতে হবে রেজিস্ট্রার অফিসে।
-
মৌখিক বণ্টন আইনসম্মত নয় এবং তা ভবিষ্যতে দলিল সংশোধনের সুযোগ বন্ধ করে দেয়।
-
দলিল ছাড়া জমি ক্রয় বা বিক্রয় করলে আইনগত শাস্তি হবে অনিবার্য।
-
ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী মামলা করে জমি পুনরুদ্ধার করা যাবে।
-
জমির খাজনা, নামজারি ও দখল নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে জনসচেতনতা তৈরি হবে।
কারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবেন?
এই আইন সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে তাদের উপর, যাদের পূর্বপুরুষদের জমি এখনো অভিভক্ত অবস্থায় আছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, জমি বিক্রি বা দান করতে হলেও আগে আপোষ বণ্টননামা দলিল করতে হবে।
এছাড়া অনেকেই মনে করেন, নামজারি মানেই মালিকানা, কিন্তু এটি পুরোপুরি ভুল। দলিল ছাড়া নামজারি কোনো বৈধতা দেয় না।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিবর্তন জমি নিয়ে বছরের পর বছর ধরে চলা পারিবারিক বিরোধ ও মামলাজট কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দলিলের মাধ্যমে বণ্টন হলে, কার কতটুকু অংশ আছে তা আইনিভাবে স্পষ্ট হবে এবং ভবিষ্যতে জাল দলিল বা প্রতারণার সুযোগ থাকবে না।
সতর্কতা
যারা এখনো আপোষ বণ্টননামা দলিল না করে সম্পত্তি ভোগ করছেন, তাদের দ্রুত আইনগত প্রক্রিয়ায় আসার আহ্বান জানানো হয়েছে। ভবিষ্যতে কোনো ধরনের জটিলতায় পড়লে আইনি সহায়তা ছাড়া রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে না।
ইমরান