ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৬ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

আইন অনুযায়ী ওয়ারেন্ট ছাড়াই যেসব ক্ষেত্রে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারে!

প্রকাশিত: ২১:৪৫, ৫ মে ২০২৫

আইন অনুযায়ী ওয়ারেন্ট ছাড়াই যেসব ক্ষেত্রে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারে!

ছবিঃ সংগৃহীত

বাংলাদেশের ফৌজদারি কার্যবিধির (Criminal Procedure Code - CrPC) আওতায় পুলিশ সাধারণত আদালতের ওয়ারেন্ট ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারে না। তবে, কিছু ব্যতিক্রমধর্মী পরিস্থিতিতে আইন পুলিশকে ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দিয়েছে, যা জননিরাপত্তা ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিচে এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

কগনিযেবল অপরাধে (Cognizable Offence) জড়িত হলে যেমন, খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি, সন্ত্রাস ও

মানব পাচার এসব ক্ষেত্রে পুলিশ নিজেরাই তদন্ত শুরু করতে পারে এবং আদালতের অনুমতি ছাড়াই গ্রেপ্তার করতে পারে। এগুলো সব গুরুতর অপরাধ, যেগুলোর সাজা সাত বছর বা তার বেশি হয়।

এছাড়া অপরাধ সংঘটনের সময় হাতে-নাতে ধরা পড়লে অর্থাৎ যদি কেউ অপরাধ করার সময় ধরা পড়ে (caught in the act), তাহলে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেপ্তার করতে পারে। এটি বলা হয় “in flagrante delicto”।

অন্যদিকে পর্যাপ্ত সন্দেহের ভিত্তিতে ধারণা করা হলে যে: অভিযুক্ত পালাতে পারে, প্রমাণ নষ্ট করতে পারেঅথবা আবারও অপরাধ করতে পারে; তখন পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারে—ওয়ারেন্ট ছাড়াই।

আর যদি কেউ চুরি বা ছিনতাই করা মালামালসহ ধরা পড়ে, পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করতে পারে। যদি সন্দেহভাজন ব্যক্তি নিজের পরিচয় জানাতে না পারে অথবা ভুল তথ্য দেয়, পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে তদন্ত করতে পারে।

অন্যদিকে আদালত কর্তৃক ঘোষিত পলাতক অর্থাৎ যাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে এবং যারা পলাতক (Proclaimed Offender) হিসেবে চিহ্নিত, তাদের যেকোনো সময় গ্রেপ্তার করা যায় ওয়ারেন্ট ছাড়াই।

এছাড়াও যদি কোনো নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি কোনো অপরাধ সংঘটনের বিষয়ে পুলিশকে জানায়, এবং পুলিশের মনে হয় পরিস্থিতি গুরুতর, তাহলে পুলিশ নিজ দায়িত্বে ব্যবস্থা নিতে পারে।

এই ক্ষমতা বাংলাদেশ ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৫৪ এবং ধারা ১৫১-তে উল্লেখ রয়েছে।
বিশেষত, ধারা ৫৪ পুলিশকে কিছু নির্ধারিত পরিস্থিতিতে ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেয়। তবে এই ক্ষমতা যেন ভুলভাবে ব্যবহার না হয়, সে জন্য ২০০৩ সালে উচ্চ আদালত (হাইকোর্ট বিভাগ) ১০টি নির্দেশনা দেয়—যার মধ্যে ছিল, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হবে, নির্যাতন করা যাবে না। গ্রেপ্তারের কারণ জানাতে হবে ও পরিবারকে অবহিত করতে হবে।

ওয়ারেন্ট ছাড়াই পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারে, তবে সেটি আইনের নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে। এই ক্ষমতা জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য, কিন্তু একই সঙ্গে এর অপব্যবহার ব্যক্তির মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করতে পারে। তাই, এই বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পেশাদারিত্ব ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।

সূত্রঃ https://www.facebook.com/share/v/18Hf5qQ1gi/

 

আরশি

×