ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

আইন বিষয়ে গ্র্যাজুয়েট ১০ ক্যারিয়ার অপশন

চাকরি বাজার ডেস্ক

প্রকাশিত: ০১:৫১, ১৭ নভেম্বর ২০২৩

আইন বিষয়ে গ্র্যাজুয়েট ১০ ক্যারিয়ার অপশন

গ্র্যাজুয়েট ১০ ক্যারিয়ার অপশন

১. আইনজীবী: আইনের যে কোনো গ্র্যাজুয়েটের কাছে সবচেয়ে পরিচিত ক্যারিয়ার এটি। একজন আইনজীবী হিসেবে আপনি করপোরেট, ট্যাক্স ইত্যাদি যে কোনো বিষয়ে স্পেশালাইজেশন করতে পারেন অথবা সাধারণ প্র্যাকটিসও করতে পারেন- যা আপনাকে সব বিষয়েই অল্প অল্প কাজ করার সুযোগ দেবে।
২. প্যারালিগ্যাল: প্যারালিগ্যালরা আইন সংক্রান্ত কাজ করা হয় এমন যে কোনো অফিস, করপোরেশন বা সরকারি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদের মূল কাজ হলো কেসের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ ও রিসার্চে আইনজীবীকে সাহায্য করা। যেহেতু এই কাজের জন্য আইন বিষয়ে প্রচুর ধারণা প্রয়োজন। তাই আইন নিয়ে পড়াশোনা থাকা এই পেশায় অনেক কার্যকরী। মোট কথা, একজন প্যারালিগ্যাল হিসেবে আপনি আইন নিয়েই কাজ করবেন। কিন্তু আইনজীবীদের পেশায় থাকা অতিরিক্ত চাপগুলো আপনাকে নিতে হবে না।
৩. আইনি সেক্রেটারি: লিগ্যাল সেক্রেটারিদের অনেকেই প্যারালিগ্যালদের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে। কিন্তু তাদের দৈনন্দিন কাজ প্যারালিগ্যাল বা লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্টদের থেকে আলাদা। সেক্রেটারিদের মূল কাজ হলো বিভিন্ন আইনি কাগজপত্র তৈরি ও ফাইল করা। এছাড়া অভিজ্ঞ ও প্রতিভাবান সেক্রেটারিদের বিভিন্ন ম্যানেজমেন্ট ভিত্তিক দায়িত্ব পালন করতেও দেখা যায়।
৪. প্রভাষক: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা যে কোনো বিষয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি অন্যতম জনপ্রিয় পেশা। আইনও তা থেকে ভিন্ন নয়। খখই কোর্স আছে এমন যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনি প্রভাষক হিসেবে চাকরির চেষ্টা করতে পারেন। তবে এই চাকরির জন্য সাধারণত উচ্চতর শিক্ষা, অন্তত খখগ ডিগ্রি থাকার প্রয়োজন হয়। যারা সবসময় নতুন কিছু শিখতে ও শেখাতে পছন্দ করেন, শিক্ষকতা তাদের জন্য একদম উপযুক্ত একটি ক্যারিয়ার।
৫. কমপ্লায়েন্স অফিসার: একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান চালাতে বিভিন্ন ধরনের ও মাত্রার নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। কিছুদিন পরপরই আবার জারি হয় নতুন আইন। একটি কোম্পানির পক্ষে এতসব আইন ও নিয়মের দিকে খেয়াল রাখা প্রায়ই কঠিন হয়ে পড়ে। তখন তাদের দরকার হয় একজন কমপ্লায়েন্স অফিসার। কমপ্লায়েন্স অফিসারের দায়িত্ব হচ্ছেÑ একটি কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান এর জন্য প্রণীত সব আইন মেনে চলছে কিনা তা নিশ্চিত করা। এটি একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ চাকরি, কেননা জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের জারি করা বিভিন্ন আইনসহ একটি কোম্পানির প্রায় হাজার হাজার নিয়মের দিকে খেয়াল রাখতে হয় এবং এর যে কোনো একটি ঠিকমতো পালন করতে না পারা ব্যবসার জন্য বিশাল সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
৬. লাইব্রেরিয়ান: এই লাইব্রেরিয়ান হচ্ছেÑ আইনবিষয়ক গ্রন্থাগারের তত্ত্বাবধায়ক। একটি আইনি গ্রন্থাগারে আইনবিষয়ক অসংখ্য বই তো থাকেই, পাশাপাশি থাকে বিভিন্ন ডকুমেন্টও। এই লাইব্রেরিতে পুরনো কেস সংক্রান্ত কাগজপত্র, বিচারকদের স্থাপিত নজির এবং জাতীয় আইন ও এর বিবর্তনের ইতিহাস সম্পর্কে সব তথ্য খুঁজে বের করা সম্ভব। শিক্ষার্থী, আইনজীবী, বিচারক- আইনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাই এই লাইব্রেরি ব্যবহার করেন। একজন আইনবিষয়ক লাইব্রেরিয়ান হিসেবে আপনার দায়িত্ব হবে এই লাইব্রেরির দেখাশোনা করা। তথ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করা, কোথায় কোনো বই বা ডকুমেন্ট আছে তার রেকর্ড রাখা এবং প্রয়োজনমত তা বের করতে সাহায্য করাও হবে আপনার কাজের অংশ।  
৭. আইনি লেখক বা সম্পাদক: আইনি লেখক হয় দুই ধরনের- সংবাদ লেখক এবং ব্রিফ লেখক। সংবাদ লেখকের কাজ হচ্ছে আইন সংক্রান্ত যে কোনো নতুন খবর নিয়ে রিপোর্ট লেখা। হত্যা মামলা, রাজনৈতিক স্ক্যান্ডাল বা কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আইনি জটিলতা- এসব কিছু নিয়েই তারা রিপোর্ট তৈরি করে থাকেন। অপরদিকে, ব্রিফ লেখকের কাজ মূলত ক্লায়েন্টদের জন্য বিভিন্ন দলিল দস্তাবেজ লিখে দেয়া। দ্বিতীয়ত, লেখালেখির দক্ষতা ও আইনের জ্ঞান ব্যবহার করে আপনি এই দুই ধরনের লেখাই সম্পাদনা করতে পারেন। সম্পাদক হিসেবে আপনি কপি এডিটিং, তথ্যের নির্ভুলতা যাচাই ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের কাজ করার সুযোগ পাবেন।
৮. লবিস্ট: আমাদের দেশে লবিস্টদেরকে প্রায়ই নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয়ে থাকে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে লবিস্টরা যা করেন তার খুব ছোট একটা অংশই শুধু আমরা দেখি। লবিস্টরা তাহলে কি করেন? সোজা বাংলায়, তাদের কাজ হচ্ছে তদবির করা। তারা আইন-প্রণেতা ও আইন নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে কথা বলার মাধ্যমে নিজের ক্লায়েন্টের সুবিধার্থে পাবলিক পলিসিতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেন। অনেকেই মনে করেন যে লবিস্টরা সবসময় উৎকোচ দেয়ার মাধ্যমে তাদের কাজ সম্পন্ন করে থাকেন। কিন্তু আসলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের পরিকল্পনা থাকে এমন কাউকে খুঁজে বের করা যে ইতোমধ্যেই পলিসিতে পরিবর্তন আনতে আগ্রহী।
৯. নীতি বিশ্লেষক: আইনসভা সংস্থা, কোনো করপোরেশন বা নন-প্রফিট অর্গানাইজেশনের একজন অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছেন নীতি বিশ্লেষক। পলিসি তৈরি, আইন-প্রণেতা ও ম্যানেজারদের পরামর্শ দেয়া এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্রিফিং দেয়া একজন নীতি বিশ্লেষকের কাজের অংশ। তাদের আরও একটি কাজ হচ্ছে তথ্য সংগ্রহ এবং রিসার্চের মাধ্যমে জনমত বিশ্লেষণ ও প্রভাবিত করা।
১০. বৈদ্যুতিক ডকুমেন্ট সন্ধানকারী: বর্তমান যুগে ম্যাসেজ, ডকুমেন্ট, তথ্য, কন্ট্র্যাক্ট সবকিছুই কোনো না কোনো বৈদ্যুতিক মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হয়। তাই এসব ডকুমেন্ট খুঁজে বের করাও হয়ে উঠেছে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। প্রয়োজন মেটাতে এখন আইন সংস্থাগুলো বৈদ্যুতিক ডকুমেন্ট সন্ধানকারী পদে নিয়মিত নিয়োগ দিচ্ছে। এই প্রফেশনালদের কাজ কিন্তু শুধু ডকুমেন্ট খুঁজে বের করা নয়। বরং তারা আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে এসব তথ্য শনাক্ত এবং সংরক্ষণও করে থাকেন। ফৌজদারি আদালতের মামলা থেকে শুরু করে সীমান্ত বিবাদ পর্যন্ত সবখানেই এখন ই-ডিসকভারি এজেন্টদের ভূমিকা অপরিহার্য। 
আইনবিষয়ক ক্যারিয়ারগুলো অন্যতম ফলপ্রসূ ও উত্তেজনাময় পেশা। এই ক্যারিয়ারের প্রত্যেকটা দিন ডিটেকটিভ উপন্যাসের পাতা থেকে উঠে না আসলেও একটি পরিবারকে আইনি জটিলতা থেকে রক্ষা করা বা কারও জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আনন্দ আর উত্তেজনা অন্য অনেক ক্যারিয়ারকেই হার মানায়। এই অনুভূতি উপভোগ করতে আপনাকে একজন অ্যাটর্নিই হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অনেকভাবেই আপনি এই প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারেন, নিশ্চিত করতে পারেন ন্যায়বিচার।

চাকরি বাজার ডেস্ক

×