
ছবি: সংগৃহীত
ভারতের সামরিক অভিযানে ইসরায়েলি অস্ত্র ব্যবহারের সরাসরি স্বীকৃতি দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। পাকিস্তানের জড়িত থাকা পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার জবাবে ভারতের ‘অপারেশন সিন্দূর’-এ যৌথভাবে তৈরি বরাক-৮ মিসাইল এবং হার্পি ড্রোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) গাজায় হামাস দমন অভিযানে ইসরায়েলের সামরিক হামলা বাড়ানোর পরিকল্পনা ঘোষণা করতে গিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, “আমরা যেসব অস্ত্র ভারতের হাতে দিয়েছি, সেগুলো মাঠে দুর্দান্তভাবে কাজ করেছে। আমাদের অস্ত্র আমরা বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রে তৈরি ও পরীক্ষিত করি। এবারও তা প্রমাণিত হয়েছে।”
অপারেশন সিন্দূরের সময় ৭ মে থেকে টানা প্রায় ১০০ ঘণ্টা পাকিস্তানি মিসাইল হামলা প্রতিহত করতে ভারতীয় সেনারা বরাক-৮ মিসাইল ও হার্পি ড্রোন ব্যবহার করে। এর পাশাপাশি দেশীয়ভাবে তৈরি নানা অস্ত্র ব্যবস্থাও মোতায়েন করা হয়। আকাশ প্রতিরক্ষায় রুশ তৈরি এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেমও ব্যবহৃত হয়। হার্পি একটি বিশেষ ধরনের ড্রোন যা শত্রুপক্ষের রাডার সিস্টেম ধ্বংসের জন্য তৈরি। এটি সাপ্রেশন অব এনেমি এয়ার ডিফেন্স (SEAD) মিশনে দক্ষ এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক ও বিশেষ রাডার বহন করে। ড্রোনটি নিজে থেকে রাডারের সিগন্যাল শনাক্ত করে আঘাত হানতে পারে এবং যেকোনো দিক থেকে আক্রমণ পরিচালনা করতে সক্ষম। দিন-রাত উভয় সময়েই এটি নয় ঘণ্টা পর্যন্ত গভীর মিশন পরিচালনা করতে পারে।
বরাক-৮ মিসাইল ইসরায়েল ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে তৈরি একটি দীর্ঘ-পাল্লার সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা একই সঙ্গে একাধিক আকাশপথের হুমকি মোকাবিলা করতে সক্ষম। এটি ৩৬০-ডিগ্রি কভারেজ দেয় এবং স্থল ও জাহাজ উভয় প্ল্যাটফর্মে মোতায়েনযোগ্য। অ্যাকটিভ রাডার প্রযুক্তি ব্যবহার করে লক্ষ্য শনাক্ত ও ধ্বংস করতে পারে এবং এর কার্যকর পাল্লা ১০০ কিলোমিটার।
অপারেশন সিন্দূর নিয়ে ইসরায়েলের জেনারেল কোবি শোশানি বলেন, “এটি ছিল আত্মরক্ষামূলক অভিযান। সন্ত্রাসীদের শক্ত বার্তা দেওয়া জরুরি ছিল, এবং আমি এই অভিযানে গর্বিত।” গত এক দশকে ভারত ইসরায়েল থেকে ২.৯ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম আমদানি করেছে। যার মধ্যে রয়েছে রাডার, ড্রোন ও মিসাইল। ইসরায়েল বর্তমানে ভারতের চতুর্থ বৃহত্তম অস্ত্র সরবরাহকারী; প্রথম তিন সরবরাহকারী হলো রাশিয়া (২১.৮ বিলিয়ন ডলার), ফ্রান্স (৫.২ বিলিয়ন ডলার) এবং যুক্তরাষ্ট্র (৪.৫ বিলিয়ন ডলার)। গাজা যুদ্ধ চলমান থাকা সত্ত্বেও ভারতের কাছে ইসরায়েলের অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘আত্মনির্ভর ভারত’ উদ্যোগে বিদেশি নির্ভরতা কমাতে দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্পের উন্নয়ন জোরদার হয়েছে। ২০১৫ সালে ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানি ছিল ১,৯৪০ কোটি টাকা, যা ২০২৫ সালে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২৩,৬২২ কোটি টাকায়। ইতিমধ্যে প্রথম দেশীয় বিমানবাহী রণতরী আইএনএস বিক্রান্ত উদ্বোধন করা হয়েছে এবং পঞ্চম-প্রজন্মের স্টিলথ ফাইটার তৈরির কাজ চলছে, যা এফ-২২ ও এফ-৩৫-এর মতো উন্নত প্রযুক্তির হবে।
মুমু ২