
ছবি: প্রতীকী
সকালের নাস্তা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রাতভর না খেয়ে আমাদের শরীর এক ধরনের উপবাস অবস্থায় থাকে। সকালে ঘুম থেকে উঠে শরীর ও মস্তিষ্ককে সচল রাখার জন্য প্রয়োজন হয় প্রয়োজনীয় শক্তি এবং পুষ্টির। এই প্রয়োজনীয় শক্তি আমরা পাই আমাদের দিনের প্রথম খাবার থেকে, যাকে বলা হয় ব্রেকফাস্ট বা নাস্তা। কিন্তু অনেকেই নানা কারণে সকালের নাস্তা এড়িয়ে চলেন—কখনো সময়ের অভাবে, কখনো অভ্যাসের কারণে, আবার কেউ কেউ ওজন কমানোর আশায় সকালের খাবার বাদ দেন। অথচ এই একটি অভ্যাস আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে।
সকালের নাস্তা না করলে শরীর যেমন দুর্বল হয়ে পড়ে, তেমনি মনেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। সকালে খাবার না খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায়। এতে মস্তিষ্ক প্রয়োজনীয় গ্লুকোজ পায় না, যা চিন্তা করা, মনোযোগ দেওয়া ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো কাজগুলোর জন্য অত্যন্ত জরুরি। ফলে দেখা যায়, সকালে নাস্তা না করলে মানুষ সহজেই ক্লান্ত বোধ করে, মনোযোগ কমে যায়, আর কাজে উদ্যমও কমে আসে। অনেকের মধ্যে খিটখিটে মেজাজ, অস্থিরতা বা উদ্বেগও দেখা দেয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত সকালের নাস্তা খান, তারা মানসিকভাবে বেশি স্থির থাকেন। তাদের মধ্যে উদ্বেগ ও বিষণ্ণতার প্রবণতা কম থাকে। অন্যদিকে, যারা নাস্তা বাদ দেন, তাদের মধ্যে মানসিক চাপে ভোগার হার বেশি। শরীর যখন পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না, তখন কর্টিসল নামে একটি স্ট্রেস হরমোন বেড়ে যায়। এই হরমোন শরীরে মানসিক চাপ তৈরির একটি বড় উৎস। নিয়মিত সকালের খাবার গ্রহণ করলে এই হরমোনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং মন শান্ত থাকে।
বিশেষ করে শিক্ষার্থী বা অফিসগামী মানুষদের জন্য সকালের নাস্তা খুবই জরুরি। সকালে না খেয়ে কেউ ক্লাসে বা অফিসে গেলে দেখা যায়, তারা সহজেই মনোযোগ হারিয়ে ফেলে। কাজের দক্ষতাও কমে যায়। অনেকসময় অল্পতেই বিরক্ত হয় বা হতাশ হয়ে পড়ে। আবার বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যায়। যদি শিশুরা স্কুলে যাওয়ার আগে কিছু না খায়, তবে তারা শ্রেণিকক্ষে ঠিকমতো মনোযোগ দিতে পারে না এবং তাদের শেখার গতি কমে যায়।
শুধু মানসিক চাপই নয়, সকালের নাস্তা বাদ দিলে শারীরিক নানা সমস্যাও দেখা দিতে পারে। যেমন পেটের গ্যাস, আলসার, হজমে সমস্যা, এমনকি ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বাড়তে পারে। শরীর দুর্বল হয়ে পড়লে তা সরাসরি আমাদের মনের ওপর প্রভাব ফেলে। কারণ শরীর ও মন একে অন্যের সঙ্গে জড়িত। একটির সমস্যা অন্যটিকেও প্রভাবিত করে। তাই শরীর ভালো রাখতে হলে মনের দিক থেকেও সতর্ক থাকা জরুরি, আর তার প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে পুষ্টিকর একটি সকালের নাস্তা।
এমনকি যাদের ডায়েট করার পরিকল্পনা থাকে, তাদের জন্যও সকালের নাস্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সকালে ভালোভাবে খেলে সারাদিন ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এতে অপ্রয়োজনে বারবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। কিন্তু কেউ যদি সকালে না খায়, তবে দুপুরের আগে বা পরেই অতিরিক্ত খেয়ে ফেলে, যা ওজন কমানোর চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিতে পারে। আর যখন ডায়েট সফল হয় না, তখন মানসিক হতাশাও বাড়ে।
তাই দিন শুরু হোক একবাটি ওটস, দুটি সিদ্ধ ডিম, এক গ্লাস দুধ, বা কয়েকটি ফল দিয়ে। কেউ চাইলে রুটি, ডাল বা সবজি দিয়েও নাস্তা করতে পারে। যেটাই হোক, পুষ্টিকর এবং পরিমাণমতো খাবার খাওয়া জরুরি। এতে শরীর যেমন শক্তি পাবে, তেমনি মন থাকবে প্রফুল্ল। মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকতে চাইলে সকালের নাস্তা কখনোই বাদ দেওয়া উচিত নয়।
সকালের নাস্তা শুধু পেট ভরানোর জন্য নয়, এটি আমাদের মনের সুরক্ষার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকতে চান, কর্মক্ষেত্রে বা শিক্ষাজীবনে সফল হতে চান, তাদের সকালের নাস্তা অবশ্যই গ্রহণ করা উচিত। সামান্য এই অভ্যাসই সারাদিনের মানসিক স্থিতিশীলতা এবং সুস্থ জীবনের জন্য বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
এম.কে.