ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৫ আগস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২

এবার পরমাণু শক্তি নিয়ে ইরানের পাশে পাকিস্তান

প্রকাশিত: ১৮:০৯, ৫ আগস্ট ২০২৫

এবার পরমাণু  শক্তি নিয়ে ইরানের পাশে  পাকিস্তান

ছবি: সংগৃহীত

 ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচিকে এবার সরাসরি সমর্থন জানালো পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র পাকিস্তান। ইসলামাবাদ সফরে গিয়ে কূটনৈতিক পর্যায়ে বড় সাফল্য নিয়ে ফিরলেন ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। সফরের সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাদ শরীফ স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, তেহরান শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরমাণু কর্মসূচি চালাচ্ছে, এবং এতে ইসলামাবাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।

এই বিবৃতি শুধু ইরান নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্যজুড়েই কূটনৈতিক সমীকরণে নতুন বার্তা দিয়েছে। পাকিস্তান যেমন একদিকে আমেরিকার মিত্ররাষ্ট্র, অন্যদিকে এই বক্তব্যে তারা প্রকাশ্যে ইসরাইলের সমালোচনাও করেছে—যা এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ মোড়।

এমন স্পষ্ট সমর্থন পেয়ে ইরান-ইসরাইল চলমান দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান প্রকাশ্যে শাহবাদ শরীফকে ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, “এই সমর্থন তেহরানকে সাহস দিচ্ছে।”

এই সফরেই ইসলামাবাদ ও তেহরানের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছে ১২টি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি। চুক্তিগুলোর আওতায় বাণিজ্য, কৃষি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, গবেষণা, উদ্ভাবন, যোগাযোগ এবং সামুদ্রিক নিরাপত্তা বিষয়ক সহযোগিতা জোরদার করা হবে। দুই দেশ ঘোষণা দিয়েছে, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে ১,০০০ কোটি ডলার পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে ইসলামাবাদ-তেহরানের এই চুক্তি আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতিতে একটি তাৎপর্যপূর্ণ মোড়। বিশেষ করে যখন পশ্চিমা বিশ্ব ইরানের বিরুদ্ধে একের পর এক চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করছে, তখন পাকিস্তানের এই অবস্থান তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা দিচ্ছে।

এছাড়াও সফরের সময় মাসুদ পেজেশকিয়ান সিল্ক রোড (Belt and Road Initiative)-এ চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তেহরান জানায়, তারা ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক সংযোগ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের অংশ হতে চায়।

উল্লেখ্য, সিল্ক রোড চীনের নেতৃত্বাধীন একটি বৈশ্বিক বাণিজ্য উদ্যোগ, যার মাধ্যমে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার ৬৫টিরও বেশি দেশের মধ্যে অবকাঠামো, যোগাযোগ ও বাণিজ্যিক সংযোগ গড়ে তোলা হচ্ছে। বিশ্ব বাণিজ্যের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এই রুটের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। ইরান এতে যুক্ত হলে, তা তাদের অর্থনীতির জন্য বিশাল লাভজনক হয়ে উঠতে পারে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।

এদিকে, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে চলছে উত্তেজনা। তেহরান দাবি করে আসছে, তারা শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ করছে। তবে ইরানি পার্লামেন্টের সাবেক ডেপুটি স্পিকার আলী মোতাহারী একসময় প্রকাশ্যে বলেছিলেন, “জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে পরমাণু অস্ত্র তৈরিই ছিল মূল উদ্দেশ্য, তবে বিরোধীপক্ষের কারণে আমরা গোপন রাখতে পারিনি।”

এই বক্তব্য ফাঁস হওয়ার পর থেকেই পশ্চিমা শক্তিগুলো ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ, এমনকি সামরিক পদক্ষেপের কথাও ভাবতে শুরু করে। যদিও ইরানও বছরের পর বছর ধরে পাল্টা প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যার প্রমাণ মিলেছে সাম্প্রতিক ইরান-ইসরাইল ১২ দিনের যুদ্ধ-এ। শেষ পর্যন্ত ওয়েস্টার্ন গ্রুপ সংঘাতে সুবিধা করতে না পেরে মাঝপথে থামাতে বাধ্য হয় বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা।

এই প্রেক্ষাপটে ইসলামাবাদ সফরে প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানের কূটনৈতিক বিজয় শুধু ইরান নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্যের শক্তির ভারসাম্যে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।


শেখ ফরিদ 

×