
ছবি: সংগৃহীত
কখনো ভয়াবহ বন্যা, কখনো আগ্রাসী দাবানল—দুর্যোগ যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না যুক্তরাষ্ট্রের। বিশ্বের মোড়ল হলেও বারবারই এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমেরিকাকে। মাত্র কিছু মাস আগেই ভয়াবহ দাবানলে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল ক্যালিফোর্নিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। সেই ক্ষত শুকানোর আগেই আবার শুরু হয়েছে নতুন আগুনের তাণ্ডব।
সাম্প্রতিক এই দাবানলের নাম 'গিফর্ট'। ইতোমধ্যে এটি ৭২ হাজার একরের বেশি এলাকা গ্রাস করেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে হাজারো দমকলকর্মী, চলছে জরুরি উচ্ছেদ কার্যক্রম। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, ৩৬০টির বেশি ঘরবাড়ি এখনো হুমকির মুখে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে বাসিন্দাদের সরে যেতে বলা হয়েছে।
এই দাবানলের সূত্রপাত শনিবার বিকেলে, যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে লস প্যাট্রেস ন্যাশনাল ফরেস্ট এলাকায়। এখন এটি স্যান্টা বারবারা ও সান লুইস ওবিস্পো কাউন্টির দিকেও ছড়াচ্ছে। সোমবার পর্যন্ত আগুনে ৭২,৪৬০ একর এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে দুঃখজনকভাবে, মাত্র ৩ শতাংশ দাবানলই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।
দাবানলের লেলিহান শিখা ইতোমধ্যেই হাইওয়ে ১৬৬-এর পাশে ছড়িয়ে পড়েছে, যার কারণে সড়কটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনজন আহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া কুইয়ামা এবং সান্তা বারবারা কাউন্টির কিছু অংশে বায়ুমান সতর্কতা জারি রাখা হয়েছে, এবং বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে, বিশেষ করে বাতাসে ধোঁয়া বা গন্ধ টের পেলে যেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়।
এই গিফর্ট দাবানল ঘটেছে সেই মাদ্রে দাবানলের পাশেই, যেখানে মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে ৮০ হাজার একর এলাকা পুড়ে গিয়েছিল। দীর্ঘ চেষ্টা চালিয়ে ২৬ জুলাই তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছিল।
তবে এখানেই শেষ নয়—সোমবার দুপুরে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় আরও দুটি দাবানলের সূত্রপাত হয়েছে। রিভারসাইড কাউন্টিতে শুরু হওয়া রোসা দাবানলে ১২০০ একর, এবং সানবার্নার্ডিনো কাউন্টির গোল্ড দাবানলে ৩৪৮ একর এলাকা পুড়ে গেছে। গোল্ড দাবানল এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
একের পর এক দাবানল এবং দুর্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বল দুর্যোগ মোকাবিলা ব্যবস্থা আবারো প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। ঝড়, বন্যা আর দাবানলের দাপটে প্রতিবছরই যেন ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছে দেশটি। আর এসব পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে বারবারই ব্যবস্থাগত অদক্ষতা ও প্রস্তুতির ঘাটতি স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন এবং অভ্যন্তরীণ কাঠামোগত দুর্বলতা—এই দুইয়ের যুগপৎ প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে।
শেখ ফরিদ