
ছবি: সংগৃহীত
ইরানের বিপ্লবী বীর জেনারেল কাসেম সোলায়মানীর হত্যার বদলা নিতে মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যার ফরমান জারি করেছেন ইরানের ২০০০-এর বেশি মুসলিম ধর্মীয় নেতা। গত শুক্রবার ইরানের সর্ববৃহৎ মাদ্রাসায় এক বিশাল ধর্মগুরু সম্মেলনে এ ফরমান জারি করা হয়, যেখানে উপস্থিত ছিলেন শীর্ষস্থানীয় আলেম, ধর্মীয় নেতাসহ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরাও।
এই ঘোষণার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ানো হয়েছে ট্রাম্পের নিরাপত্তা। হোয়াইট হাউস, পেন্টাগন এবং সিক্রেট সার্ভিস এখন সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
ফরমানের ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, “বিপ্লবী সংযম ও ধৈর্যের যুগের সমাপ্তি ঘটেছে। কাসেম সোলায়মানীর হত্যাকারী ট্রাম্পের রক্ত ও সম্পত্তি হালাল। প্রতিশোধ নেওয়া এখন প্রতিটি মুসলমান ও স্বাধীনতাকামী নারীপুরুষের কর্তব্য।”
এই বক্তব্যে ট্রাম্পকে ‘বর্বর’ আখ্যা দিয়ে ধর্মগুরুরা বলেন, “এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের পর কোনো জাতির পক্ষে নীরব থাকা সম্ভব নয়। ইরান জবাব দেবে। সময় বুঝে জোরদার প্রতিশোধ নেওয়া হবে।”
উল্লেখযোগ্যভাবে, এই ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি নিযুক্ত তিন শীর্ষ ধর্মীয় নেতাও। তারা হলেন:
-
তেহরানের জুমার ইমাম আহমদ খাতামী
-
এক্সপিডিয়েন্সি কাউন্সিলের সদস্য মহসিন আরাকী
-
গার্ডিয়ান কাউন্সিলের সদস্য মেহেদী সাবজেন্দদার
প্রসঙ্গত, কাসেম সোলায়মানী ছিলেন ইরানের এলিট ফোর্স আইআরজিসির কুদস বাহিনীর প্রধান। তাকে বলা হতো মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে কৌশলী ও প্রভাবশালী সেনানায়ক। সিরিয়া ও ইরাক যুদ্ধসহ ইসরাইলবিরোধী বহু অপারেশনের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তার রণকৌশলে নাজেহাল হয়ে পড়েছিল দখলদার ইসরায়েল। ফলে সোলায়মানী হয়ে ওঠেন সিআইএ এবং মোসাদের ‘হিট লিস্ট’-এর শীর্ষ ব্যক্তি।
২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ইরাকের বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরে সোলায়মানীকে লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালায় মার্কিন বাহিনী। গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে মোসাদ তার গতিবিধি মার্কিন সেনাদের কাছে সরবরাহ করে। হামলার মুহূর্তে তিনি গাড়িতে উঠছিলেন। সেখানেই প্রাণ হারান ইরানির এই কিংবদন্তি জেনারেল।
সোলায়মানীর মৃত্যুর পর থেকেই তার প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে আসছে ইরান। তবে এবার তা এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। কারণ এবার ঘোষণা এসেছে ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে, আর সেটা আনুষ্ঠানিক ‘ফরমান’ আকারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘোষণা শুধু এক রাজনৈতিক হুমকি নয়, বরং একটি ধর্মীয় ভিত্তিতে সৃষ্ট প্রতিশোধের আহ্বান—যা মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে নতুন অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।
শেখ ফরিদ