ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৬ আগস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২

যুদ্ধবিমানে আধিপত্য নিতে পুতিনকেও চাপে ফেলবে তেহরান?

প্রকাশিত: ২১:২৯, ৫ আগস্ট ২০২৫

যুদ্ধবিমানে আধিপত্য নিতে পুতিনকেও চাপে ফেলবে তেহরান?

সাম্প্রতিক ইসরায়েল-ইরান সংঘর্ষে নিজেদের সামরিক সীমাবদ্ধতা স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করেছে তেহরান। বিশেষ করে বিমান প্রতিরক্ষা ও আক্রমণ সক্ষমতার ঘাটতি প্রকটভাবে ধরা পড়ায় এবার নিজেদের শক্তি বাড়াতে চীনের দিকেই ঝুঁকছে ইরান।

মিডল ইস্ট মনিটরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের প্রধান চাহিদা আধুনিক যুদ্ধবিমান, উন্নত রাডার এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এজন্য তারা চীনের J-10C যুদ্ধবিমান এবং HQ সিরিজের আকাশ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি কেনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

তবে এই অস্ত্র বিক্রি নিয়ে চীন দ্বিধায় রয়েছে। এর মূল কারণ মধ্যপ্রাচ্যে বেইজিংয়ের কূটনৈতিক ভারসাম্য। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, যা ইরানকে আধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। পাশাপাশি, প্রযুক্তি পাচারের শঙ্কাও রয়েছে চীনের জন্য বড় এক দুশ্চিন্তা। ইরানের সামরিক অবকাঠামো অনেকটাই পুরনো হওয়ায় উন্নত অস্ত্র ব্যবস্থাপনায় তাদের দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।

নিজস্ব সমস্যাও বড় বাধা

বিশ্লেষকরা বলছেন, কেবল অস্ত্র কেনা নয় ইরানের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বিপ্লবী গার্ড বাহিনী ও প্রচলিত সেনাবাহিনীর মধ্যে সমন্বয়হীনতা। এই দ্বন্দ্বের কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে বারবার জটিলতা তৈরি হচ্ছে। তাই সামরিক শক্তি বাড়াতে ইরানের প্রয়োজন প্রথমে অভ্যন্তরীণ সমন্বয়।

J-10C: কম দামে আধুনিক যুদ্ধবিমানের সমাধান

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত চেংদু এয়ারক্রাফট কর্পোরেশন নির্মিত J-10C হচ্ছে একক ইঞ্জিন বিশিষ্ট মাঝারি ওজনের মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান, যার কাজ আকাশে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা হলেও আকাশ থেকে ভূমিতে আঘাত হানাতেও এটি পারদর্শী। এতে রয়েছে:

  • উন্নত স্টিলথ প্রযুক্তি: রাডার ফাঁকি দিয়ে আক্রমণের সক্ষমতা

  • WS-10B ইঞ্জিন: গতিশীলতা ও কর্মক্ষমতা বাড়ায়

  • বহুমুখী অস্ত্র বহন ক্ষমতা: আকাশ-আকাশ ও আকাশ-ভূমি ক্ষেপণাস্ত্রসহ বোমা ও রকেট

  • ASA রাডার ও সেন্সর: লক্ষ্য শনাক্ত ও আক্রমণে অত্যন্ত কার্যকর

  • কার্নার ডেলটা উইং ডিজাইন: অধিক নিয়ন্ত্রণ ও গতিশীলতা

  • ষষ্ঠ প্রজন্মের প্রস্তুতি: চীন ইতিমধ্যেই AI, হাইপারসনিক গতি ও সুপার স্টিলথ প্রযুক্তির দিকে এগোচ্ছে

আন্তর্জাতিক সাফল্য ও বিতর্ক

সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত উত্তেজনায় পাকিস্তানের ব্যবহৃত J-10C যুদ্ধবিমান প্রথমবারের মতো ফ্রান্সের রাফায়েল যুদ্ধবিমানকে পরাস্ত করেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। ঘটনাটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং সামরিক ভারসাম্যে টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ইরানের সংগ্রহ ও দুর্বলতা

তেহরানের বর্তমানে সংগ্রহে থাকা যুদ্ধবিমানগুলোর বেশিরভাগই পুরনো মডেলের: F-4, F-5, Mig-29 এবং কিছু Sukhoi-24 স্কোয়াড্রন। পাশাপাশি রয়েছে ড্রোন ও কামিকাজে ড্রোন। তবে আধুনিক যুদ্ধের জন্য এই শক্তি যথেষ্ট নয় বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

চূড়ান্ত প্রশ্ন: চীন কি ইরানকে সহায়তা করবে?

এখন বড় প্রশ্ন হলো, মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত ভারসাম্য, প্রযুক্তি পাচার এবং পশ্চিমা নজরদারি উপেক্ষা করে চীন কি ইরানকে J-10C ও HQ প্রযুক্তি সরবরাহ করবে? যদি করে, তাহলে তা হবে পুরো অঞ্চলের সামরিক ভারসাম্য বদলে দেওয়ার মতো একটি পদক্ষেপ।

Jahan

×