এক মুহূর্তের মধ্যে অসংখ্য স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট AI171-এর দুর্ঘটনায় ২৪১ জন প্রাণ হারিয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন নববিবাহিতদের পরিবার, ঈদের পর দেশে ফেরা যাত্রী, স্কলারশিপ পাওয়া শিক্ষার্থী ও সদ্য ভিসা পাওয়া যুবক। বেঁচে আছেন মাত্র একজন।
ভিসা লটারি জয়ী সাহিল প্যাটেল, পরিণতি মৃত্যু:
গত এপ্রিলেই প্যাটেল পরিবারে আনন্দের বার্তা এসেছিল—এক সাধারণ ইমেইলের মাধ্যমে তারা জানতে পারেন, তাদের ছেলে সাহিল প্যাটেল যুক্তরাজ্যের ইন্ডিয়া ইয়াং প্রফেশনাল স্কিমে ভিসা পেয়েছেন। মাত্র ৩,০০০ ভারতীয় এই লটারিতে নির্বাচিত হন।
কিন্তু সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন হওয়ার আগেই, মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে, সাহিল প্যাটেল নিহত হন ফ্লাইট AI171-এর ভয়াবহ দুর্ঘটনায়। বৃহস্পতিবার, ১২ জুন, আহমেদাবাদ বিমানবন্দর ছাড়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বিমানটি একটি মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে আছড়ে পড়ে এবং মুহূর্তেই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
মৃত্যুপুরীতে ছাত্রাবাস ও মেস:
বিমানটি যেখানটিতে বিধ্বস্ত হয়, সেখানে ছিল BJ মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাস ও মেস। বহু শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলেই নিহত হন, যাদের অনেককে আগুনে এমনভাবে পুড়িয়ে দিয়েছে যে চেনা যাচ্ছে না। আহতদের মধ্যে অনেকেই এখনো নিবিড় পর্যবেক্ষণে।
বিয়ের অনুষ্ঠান ও ঈদের পর ফেরা পরিবার:
বিমানটিতে থাকা যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন একটি পরিবারের সব সদস্য যারা বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। অপরদিকে, আরেকটি পরিবার ঈদ উদযাপন শেষে ভারতে ঘুরে যুক্তরাজ্যে ফেরার পথে ছিলেন। তাঁদের সকলেই দুর্ঘটনায় নিহত হন।
একজন কেবিন ক্রুর বাবার হৃদয়বিদারক কান্না:
২২ বছর বয়সী ইরফান ছিলেন এই ফ্লাইটের কেবিন ক্রু। দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর আহমেদাবাদ সিভিল হাসপাতালে তাঁর পরিবার ছুটে যান। মর্গে ইরফানের মৃতদেহ দেখে তাঁর বাবা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বুক ফাটানো কণ্ঠে তিনি বলেন, “আমি সারাজীবন ধার্মিক ছিলাম, দান করতাম, ছেলেকে নৈতিকতা শিখিয়েছি… আল্লাহ্র এ কী শাস্তি? কেন আমার সন্তান?”
এই বিমান দুর্ঘটনা শুধুমাত্র সংখ্যা নয়—এটি স্বপ্ন হারানো, পরিবার ভেঙে যাওয়া ও বেঁচে থাকা একজন মানুষের বুকফাটা ইতিহাস। এটি ভারতের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা, যা বহু মানুষের জীবনে শূন্যতা ও দুঃস্বপ্ন তৈরি করে দিয়ে গেল।
Jahan
