
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেন এক walking reality show— যার প্রতিটি পদক্ষেপ নাটকীয়, যার প্রতিটি ঘোষণা সংবাদপত্রের শিরোনাম। এই সপ্তাহেও তিনি হতবাক করেছেন বিশ্ববাসীকে। একদিকে তিনি দাবি করেছেন, চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যচুক্তি সম্পন্ন হয়েছে; অন্যদিকে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নরের আপত্তি উপেক্ষা করে লস অ্যাঞ্জেলেসের রাস্তায় ন্যাশনাল গার্ড নামিয়ে দিয়েছেন।
এই টিভি-স্টার-প্রেসিডেন্টের কর্মকাণ্ড এমন এক দৃশ্যপট তৈরি করেছে, যেখানে রাজনীতির বাস্তবতা এবং রিয়েলিটি শোর বিভ্রান্তি একে অপরের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। আর তার এই নাটকের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে — বাণিজ্য, সামরিক কুচকাওয়াজ ও জনরোষ।
"চুক্তি হয়ে গেছে"— কিন্তু কীসের চুক্তি?
মঙ্গলবার ট্রাম্প ঘোষণা দেন, “আমাদের চীনের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত।” যদিও প্রকৃতপক্ষে সেটি এখনো পূর্ণাঙ্গ চুক্তিতে পরিণত হয়নি, বরং একটি আলোচনাভিত্তিক কাঠামো, যা ভবিষ্যতের চুক্তির পথ তৈরি করতে পারে। এই কাঠামো অনুযায়ী, চীন তার গুরুত্বপূর্ণ ‘রেয়ার-আর্থ’ খনিজ সম্পদের ওপর মার্কিন কোম্পানিগুলোর প্রবেশাধিকার দেবে, এবং যুক্তরাষ্ট্র চীনা শিক্ষার্থীদের তার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হতে দেবে।
বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি আপাতদৃষ্টিতে ইতিবাচক, তবে পেছনে লুকিয়ে আছে সংশয়ের মেঘ। কেননা এক মাস আগের জেনেভা চুক্তিও কিছুদিনের মধ্যে ভেঙে পড়েছিল, ট্রাম্পের হঠাৎ রুষ্ট আচরণের কারণে।
শুল্ক থেকে জ্বালাময়ী বিক্ষোভ
এই ‘চুক্তি’র বাস্তবতা একটু আলাদা। চীনের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র এখনো ৩০% শুল্ক আরোপ করে রেখেছে — যা শেষ কয়েক মাসে একাধিকবার পরিবর্তিত হয়েছে। পাশাপাশি, চীনের গাড়ি বা উন্নত প্রযুক্তি পণ্যের আমদানির পথ এখনো কার্যত বন্ধ।
এদিকে, ট্রাম্পের এই নাটকীয় বাণিজ্য অবস্থান অনেকটাই সেই পুরোনো কৌশল অনুসরণ করে: আগে অস্থিরতা তৈরি করা, পরে ‘মুক্তির পথ’ দেখানো। যেন তিনি নিজেই সমস্যা তৈরি করে, নিজেই তার সমাধান দান করছেন — একদম সিনেমার নায়কসুলভ ভঙ্গিতে।
রাস্তায় সেনাবাহিনী, শহরে ক্ষোভ
এই নাটকীয়তার আরেকদিক ছিল লস অ্যাঞ্জেলেসের পথে ট্রাম্পের ‘পেশিশক্তি’র প্রদর্শন। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসামের আপত্তি উপেক্ষা করে তিনি হাজার হাজার ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেন, অভিবাসন-বিরোধী বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু বাস্তবে এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এক শহরের ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে আরও বহু শহরে।
সংবাদমাধ্যমের স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে আগুনে পুড়ে যাওয়া গাড়ি, পুলিশের রায়ট গিয়ার, টিয়ার গ্যাস — আর পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা শক্তিমান এক প্রেসিডেন্টের চেহারা, যিনি নিজেই এই ঘটনার পরিচালক!
বাস্তবতার সীমা পেরিয়ে এক রাজনৈতিক থিয়েটার
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প যেন এক চিত্রনাট্য নির্মাণ করছেন — যেখানে তিনি দেশকে ‘সন্ত্রাস ও বিশৃঙ্খলার হাত থেকে রক্ষা করতে’ দৃশ্যত রণাঙ্গনে নামছেন। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, সেই ‘বিশৃঙ্খলা’ আসলে অনেকাংশেই তার নিজ হাতে তৈরি করা।
আর তাই, এই ‘ট্রাম্প শো’ যতটা বিনোদনমূলক মনে হয়, তার পরিণতি ততটাই গভীর — জাতীয় ঐক্য, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আর গণতন্ত্রের ভারসাম্যে এর প্রভাব পড়ে যাচ্ছে একের পর এক।
Mily