ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৭ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

করোনা ও রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধই কারণ

জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:০১, ১১ নভেম্বর ২০২২

জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি

বিশ্বজুড়ে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে বায়ু দূষণ বাড়ছে

দুই বছর ধরে করোনা মহামারী ভুগিয়েছে বিশ্বকে। তীব্র ঝাঁকুনি খেয়েছে অর্থনীতি। সেই ঝাঁকুনি আরও তীব্র করে তুলেছে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই দুই সংকটের কারণে বিশ্বজুড়ে জীবাশ্ম জ্বালানি তথা তেল-গ্যাস-কয়লার ব্যবহার বেড়েছে। অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে তুলতে বিশ্বের দেশগুলো যেই জ্বালানি তেলের ওপর ঝুঁকেছিল ঠিক তক্ষুণি শুরু হয় যুদ্ধ। এই সংকট বিশ্বের দেশগুলোকে জ্বালানির পুরনো উৎস কয়লা এবং গ্যাসের ওপর নির্ভর করে তোলে। আর এসব জীবাশ্ম জ্বালানি বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে। খবর এএফপির।
এ বছর এখন পর্যন্ত কার্বন ডাইঅক্সাইডের নিঃসরণ হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৬০ কোটি টন। যার মধ্যে কেবল জীবাশ্ম জ্বালানি থেকেই নিঃসৃত হয়েছে ৩ হাজার ৬৭০ কোটি টন। বাকি কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসৃত হয়েছে ভূমিভিত্তিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ফলে। গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল কার্বন প্রজেক্টের প্রতিবেদন গ্লোবাল কার্বন বাজেট থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

মিসরের শার্ম আল শেখে চলমান জাতিসংঘ আয়োজিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৭ এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মূল কারণ কার্বন ডাইঅক্সাইডের নিঃসরণ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এ বছর ধারণা করা হচ্ছে গত বছর থেকে অন্তত ১ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে, যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে। শুক্রবার প্রকাশিত গ্লোবাল কার্বন বাজেটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর বিশ্বের বিভিন্ন উৎস থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ ৪ হাজার ৬০ কোটি টন। তবে এটি এখনো সর্বোচ্চ নয়। এর আগে, ২০১৯ সালে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ হয়েছিল। সে বছর ৪ হাজার ৯০ কোটি টন কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসৃত হয়েছিল।

তবে এ বছর এখনো আরও ৫০ দিন থাকায় ২০১৯ সালের চেয়েও বেশি পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসৃত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন গবেষকেরা। এ বছর কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণের ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেছে জ্বালানি তেল ও গ্যাস। জীবাশ্ম জ্বালানি উপজাতগুলো থেকে এ বছর সবচেয়ে বেশি নিঃসৃত হয়েছে। এই বিষয়ে সিসেরো ক্লাইমেট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষণা পরিচালক গ্লেন পিটার্স বলেন, ‘কোভিড বিপর্যয়ের পর অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে জ্বালানি তেলের ব্যবহার হয়েছে বেশি এবং ইউক্রেন সংকটের কারণে কয়লা ও গ্যাসের ব্যবহার বেড়েছে বেশি। শতাধিক গবেষকের গবেষণার পরিপ্রেক্ষিতে প্রকাশিত গ্লোবাল কার্বন বাজেট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর বিশ্বের মোট কার্বন নিঃসরণের ৯০ শতাংশ হয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে। পিটার্স বলেছেন, এই তথ্য আমাদের জানাচ্ছে যে, নিঃসরণ বৃদ্ধির এই ধারাবাহিকতা গভীরভাবে উদ্বেগজনক।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যখন প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ঐকমত্যে পৌঁছেছিলাম তখনকার চেয়ে এখন অন্তত ৫ শতাংশ বেশি কার্বন ডাইঅক্সাইড বেশি নিঃসৃত হয়েছে। গবেষকেরা বলছেন, এই তথ্যই নির্দেশ করে যে বর্তমান বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ শতাংশ কমিয়ে প্রাক শিল্পযুগ সময়ের তাপমাত্রায় নিয়ে যাওয়া কঠিন।

×