
ছবি: সংগৃহীত
চীনের গুয়াংসি প্রদেশের ২৬ বছর বয়সী এক তরুণী মা নিজের দুই সন্তানকে বিক্রি করে সেই অর্থ ব্যয় করেছেন দামি পোশাক ও অনলাইন লাইভস্ট্রিমিং হোস্টদের ‘টিপ’ বা বকশিশ দিতে। মানবপাচার এবং প্রতারণার দায়ে আদালত তাকে পাঁচ বছরের বেশি কারাদণ্ড দিয়েছেন।
জানা যায়, অভিযুক্ত নারীর নাম হুয়াং। ছোটবেলায় তাকে দত্তক নেওয়া হয়েছিল এবং সে কেবল প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। অর্থনৈতিক সংকট, অনিশ্চিত পিতৃপরিচয় এবং স্বার্থপরতা এই তিন কারণে সে এমন ভয়াবহ সিদ্ধান্ত নেয়।
২০২০ সালের অক্টোবরে, হুয়াং নিজের প্রথম ছেলেকে ৪৫,০০০ ইউয়ান (প্রায় ৫ লাখ টাকা) মূল্যে বিক্রি করেন এক আত্মীয় লি-এর কাছে। লির পরিবার নিঃসন্তান থাকায় তারা শিশুটিকে দত্তক নিতে চায়। কিন্তু হুয়াং সেই অর্থ ব্যয় করেন শুধু অনলাইন স্ট্রিমারদের বকশিশ দেওয়ার পেছনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে প্রথম বিক্রির অর্থ শেষ হয়ে গেলে হুয়াং ইচ্ছাকৃতভাবে দ্বিতীয় সন্তান ধারণ করেন। জন্মের পরপরই সে ৩৮,০০০ ইউয়ানে (প্রায় ৪.৫ লাখ টাকা) এক দালালের কাছে শিশুটিকে বিক্রি করে দেয়। সেই দালাল আবার ছেলেটিকে আরও বড় অংকে, ১,০৩,০০০ ইউয়ানে (প্রায় ১২ লাখ টাকা) বিক্রি করে।
প্রাপ্ত সব অর্থ ব্যয় হয় হুয়াংয়ের ভোগবিলাস ও ভার্চুয়াল স্ট্রিমারদের টিপে।
২০২২ সালের এপ্রিল মাসে কিছু সন্দেহজনক চ্যাট লগ থেকে শিশু পাচারের তথ্য বের হয়ে আসে। এরপর স্থানীয় প্রশাসন অভিযান চালিয়ে দুই শিশুকে উদ্ধার করে। বর্তমানে তারা চীনের সমাজকল্যাণ বিভাগের হেফাজতে রয়েছে এবং তাদের পুনরায় দত্তক দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
২০২৫ সালের ৮ জুলাই, চীনের ফুজো জিনআন জেলা পিপলস কোর্ট হুয়াংকে মানবপাচার ও প্রতারণার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে। তাকে ৫ বছর ২ মাসের কারাদণ্ড ও ৩০,০০০ ইউয়ান জরিমানা করা হয়েছে।
শুধু হুয়াং নয়, তার সহযোগী লি এবং সাবেক বাড়িওয়ালা ওয়েই-ও দণ্ডিত হয়েছেন। লি পেয়েছেন ৯ মাসের কারাদণ্ড। ওয়েই পেয়েছেন ৭ মাসের কারাদণ্ড।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনে শিশু পাচার এখনো একটি জটিল সামাজিক সমস্যা। পুত্রসন্তান লালন ও বংশরক্ষার চাপে অনেকে অবৈধ দত্তক গ্রহণে আগ্রহী, যা পাচারকারীদের উৎসাহিত করে। তবে চীন সরকারের নতুন আইন ও কঠোর সাজা ব্যবস্থা মানবপাচার রোধে একটি আশাব্যঞ্জক পদক্ষেপ।
মুমু ২