ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতাল

দু’চোখে রোগীদের সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার আকুতি

ভারত থেকে রিয়াজউদ্দিন জামি

প্রকাশিত: ১৮:১০, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২; আপডেট: ১৮:৩৯, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

দু’চোখে রোগীদের সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার আকুতি

ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে। 

মনে চাপা কষ্ট। অস্ফুষ্ট বেদনা। মনের ভেতরে লুকানো আর্তনাদ। যেন কেউ কাউকে বলতে পারছেন না। কারো মুখে যেন কোন শব্দ নেই। অথচ লোকে লোকারণ্য। চারদিক মানুষের ভিড়। কেউ কারো দিকে মুখ তুলেও তাকাচ্ছে না। শিশু, নারী, যুবক, যুবতী, মাঝ বয়সী, বৃদ্ধ, বৃদ্ধাসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষের সমাগম। 

তারা সকলেই জটিল রোগে আক্রান্ত। তারা সবাই চিকিৎসা প্রত্যাশী। জটিল রোগের চিকিৎসা করাতে জড়ো হয়েছেন ভারতের মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে। বলা হয়ে থাকে- এ হাসপাতাল বিশ্বের অন্যতম ক্যান্স্যার হাসপাতাল। 

চিকিৎসা নিতে আমিও ৬ সেপ্টেম্বর থেকে এখানে অবস্থান করছি। প্রতিদিন হাসপাতালে গিয়ে যে চিত্র পাওয়া যায় তা দেখে নিজেই থমকে যাই। পুরো হাসপাতালে সেবা প্রত্যাশী ও তাদের স্বজনদের ভিড়ে  হলেও যেন সর্বত্রই নিস্তব্ধতার চাদরে ঢাকা। 

রোগীদের মধ্য নেই কোন কোলাহল-নেই কোন হৈ চৈ। দু’চোখে কেবলই সুস্থ হয়ে প্রিয়জনদের কাছে ফিরে যাওয়ার আকুতি রোগীদের। বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালের আশপাশ রাত থেকেই রোগীরা আসতে শুরু করে। ভারত, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মানুষ ক্যান্সার বিশেষায়িত এ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ছুটে আসেন। প্রতিদিন প্রচুর সংখ্যক রোগীদের আনাগোনা থাকলেও এখানে নিয়ম-শৃঙ্খলা ও চিকিৎসার মান রোগীদের আস্থা অর্জন করেছে অনেক খানি। 

এখানে আসা প্রত্যেকেই শৃঙ্খলা ও নিয়ম-কানুন মেনে চলেন। কেউ আগে সিরিয়াল ভাঙার চেষ্টা করেন না। সেই সঙ্গে নেই দালাল, টাউট বা বাটপারদের উৎপাৎ। এখানে হাজার হাজার রোগীর অবস্থান। কেউ রয়েছে বসে, দাঁড়িয়ে, বারান্দায়, সিড়িতে বা মেঝেতে। কারো মুখে হাসি নেই। পক্ষকালেও কোন রোগীর উচ্চ শব্দ শুনা যায়নি। দেখলে মনে হয়, মনের গহীন তলে অব্যক্ত বেদনা নাড়া দিচ্ছে। 

এ যেন এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। ভারতের মুম্বাইয়ের টাটা হাসপাতালের এই চিত্র দেখলে সত্যিই আশ্চর্য্য লাগে। ঘোমট পরিবেশ। অথচ সেখানে হাজারো মানুষের উপস্থিতি। রাতভর এমআরআই (Magnetic Resonance Imaging) চলতে থাকে। দিনের বেলায় রেডিওয়েশন সেন্টার, কেমো সেন্টার, পেট সিটিসহ নানা ধরনের পরীক্ষা সেন্টার গুলোতে অপেক্ষামান রোগীদের উপচে পড়া ভিড় থাকে। সেখানে জটিল এ রোগ নিয়েই শত-শত রোগী অপেক্ষা করে থাকেন। 

অনেক রোগী বছরের পর বছর ধরে এখানে আসছে। এখানে চিকিৎসক, রোগী, সেবক-সেবিকাদের মুখেও তেমন দেখা যায় না হাসির ছিটে ফোঁটা। 

তারা জানান, এখানে এটাই ব্যতিক্রম। এখানে কোন মানুষ হাসে না। অনেকেই নীরবে চোখের জল ছাড়েন। আর সৃষ্টিকর্তার দয়া কামনা করেন। এই হাসপাতালে প্রতিদিন ২শ সিটি স্ক্যানসহ বহু রোগীর এম আরআই, পেট সিটি করা হয়। 

এছাড়াও প্রতিদিন শতাধিক রোগীকে রেডিয়েশন ও কেমো থেরোপ দেয়া হয়ে থাকে। কথা হয়- ঢাকার প্রকৌশলী আহসান নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি জানান, দেড় বছর ধরে নিজের ৭ বছরের ছেলে সন্তানকে নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন এখানে। দেশে তার খরচ হয়েছে ১০ লাখ টাকা। 

ফরিদপুর জেলার শিল্পী আক্তার জানান, তার স্বামীকে দেশে রেডিয়েশন দিয়ে এখানে আনতে হয়েছে। পরে কেমো থেরাপি দিয়ে প্রটোকল নিয়ে চলে আসেন দেশে। এখন অবস্থা ভালো। তাদের মতো বহু বাংলাদেশি টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন বছরের পর বছর। 

তারা আরো জানান, হাজারো মানুষের যেখানে আনাগোনা, সেখানে একটি মুখেও হাসি না থাকাটা খুবই বিরল।

এসআর

সম্পর্কিত বিষয়:

×