
ছবি: সংগৃহীত
পবিত্র আল আকসা মসজিদকে ঘিরে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। মুসলমানদের প্রথম কিবলা ও ইসলামের তৃতীয় পবিত্র ধর্মীয় স্থাপনা আল আকসাকে কেন্দ্র করে নতুন এক ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে দখলদার ইসরাইল। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় আল কুদসের পবিত্রতা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে, যার বিরুদ্ধে এবার বজ্রকণ্ঠে আওয়াজ তুলেছে ইরান। দেশটি স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছে, আল কুদস অঞ্চলে ইসরাইলি কোনো ষড়যন্ত্রই মেনে নেওয়া হবে না।
ইহুদিদের ধর্মীয় দিবস তিশা আভ উপলক্ষে ইসরাইলের উগ্রবাদী জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গাভীর-এর নেতৃত্বে শত শত ইহুদি দখলদার আল আকসা প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ে। পুলিশ নিরাপত্তায় ঘেরা এই প্রবেশের সময় তারা তালমুদি আচার, গান ও নৃত্যের মাধ্যমে পবিত্র স্থানটির পবিত্রতা চরমভাবে ভঙ্গ করে।
পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারীদের এই রীতিভঙ্গ ও উস্কানিমূলক আচরণের তীব্র প্রতিক্রিয়ায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘেই এক বিবৃতিতে বলেন, “এটি আল আকসার ধর্মীয় মর্যাদার স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং জাতিসংঘের বহু প্রস্তাবের নির্লজ্জ অবমাননা। এই উস্কানি গোটা ফিলিস্তিন ও মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করবে।”
আল কুদস ইসলামী ওয়াকফ বিভাগ বরাতে প্রেস টিভি জানিয়েছে, অন্তত ২৫১ জন ইসরাইলি দখলদার জোরপূর্বক আল আকসা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে। তারা সেখানেই ইহুদি ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে, যা মুসলিম বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়।
মুসলমানদের কাছে প্রথম কিবলা হিসেবে পবিত্র আল আকসা মসজিদের ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীরা পরিকল্পিতভাবে এর পবিত্রতা ও পরিচয় ধ্বংসের অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ইরান। ১৯৬৭ সালে ইসরাইল পূর্ব জেরুজালেম দখলের পর জর্ডানের সঙ্গে একটি চুক্তি অনুযায়ী আল আকসা মসজিদসহ ইসলামী ও খ্রিস্টান ধর্মীয় স্থানগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব জর্ডানের ওয়াকফ বিভাগের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী, অমুসলিমদের প্রাঙ্গণে প্রবেশ ও উপাসনা নিষিদ্ধ—তবুও পশ্চিম তীরের বসতি স্থাপনকারী ইহুদিরা নিয়মিতভাবে এই নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করছে।
শুধু ইরান নয়, বেনগাভীরের উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব-ও। দেশটি সতর্ক করেছে, এরকম পদক্ষেপে পুরো অঞ্চল আরও অস্থিতিশীল হয়ে পড়তে পারে। গাজায় আগ্রাসনের ধারাবাহিকতায় এখন পশ্চিম প্রাচীর পেরিয়ে আল আকসায় নিয়ন্ত্রণ কায়েমের দিকে এগোচ্ছে ইসরাইল।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ট তিশা আভ দিবসে আল আকসা এলাকা পরিদর্শন শেষে বলেন, “দ্বিতীয় টেম্পল ধ্বংসের ২০০০ বছর পর আজ আমাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার বার্তা পৌঁছে গেছে।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরাইল এখন আল আকসার পবিত্রতা ধ্বংস করে অঞ্চলজুড়ে দখলদারিত্বের নতুন ধাপ শুরু করতে চাইছে—যা শুধু ফিলিস্তিন নয়, মুসলিম বিশ্বের ভাবাবেগ ও প্রতিরোধ আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে।
শেখ ফরিদ