
ছবি: সংগৃহীত
ইসরাইল তার সমস্ত দিক থেকে ক্রমশই খৈষ্ণু হয়ে উঠছে, বিশেষ করে গাজা ও পশ্চিম তীর দখলকে নিজের অঙ্গাঙ্গী অংশ হিসেবে দেখতে চাইছে। প্রতিদিনই মুহূর্তে মুহূর্তে তা বাস্তবে প্রমাণিত হচ্ছে। ইসরাইলের এই জেদ, যেভাবেই হোক, গাজা ও পশ্চিম তীরের দখল পেতে চায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, নিরীহ, নিরস্র ও নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের নির্মমভাবে হত্যা করে শেষ করার চেষ্টা চলছে।
অপরদিকে, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধারা ইসরাইলি সেনাদের হাতে মার খেতে খেতে, কখনো কখনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হারিয়ে ফেললেও, উন্মাদ হয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক প্রতিরোধকারী এমনকি জীবন থেকে বিদায় নিচ্ছে, এবং এই মৃত্যুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গাজা উপত্যকায় চলমান ২১ মাসেরও বেশি সময় ধরে বিরাজমান ভয়াবহ যুদ্ধ পরিস্থিতিতে, ইসরাইল সেনাবাহিনী প্রথমবারের মতো জনবল সংকট স্বীকার করেছে। ইসরাইলের হিব্রু ভাষার দৈনিক ‘মারিফ’-এর বরাতে তুর্কি সংবাদমাধ্যম আনাদুল আজানসি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে জানা গেছে, ইসরাইল বাহিনীতে প্রায় সাড়ে হাজার সেনার ঘাটতি রয়েছে।
‘মারিফ’ জানিয়েছে, বর্তমানে ইসরাইলি সেনাবাহিনীতে প্রায় ৩০০ প্লাটুন কমান্ডারের অভাব দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে স্থলযুদ্ধ ইউনিটগুলোতে। এই পরিস্থিতিতে অভিজ্ঞ সেনাদের অফিসার প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে অনভিজ্ঞ সার্জেন্টদের অস্থায়ী প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
এ অবস্থায় শুধু প্লাটুন পর্যায়েই নয়, কোম্পানি পর্যায়েও নেতৃত্বের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিক কয়েক মাসে সেনাবাহিনী এমন অফিসারদের কোম্পানি কমান্ডার পদে নিয়োগ দিয়েছে যারা অফিসিয়াল কোম্পানি কমান্ডার কোর্স সম্পন্ন করেননি। এতে সামরিক দক্ষতা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে।
নিয়মিত বাহিনী ও রিজার্ভ ইউনিটের ব্যাটালিয়ন কমান্ডাররা জানিয়েছেন, যুদ্ধকালীন দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দীর্ঘদিন পরিবারের কাছ থেকে দূরে থাকার কারণে তারা তীব্র মানসিক ও শারীরিক চাপের মুখোমুখি। অনেকে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন। যুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হচ্ছে, ইসরাইল বাহিনীর অভ্যন্তরীণ নেতৃত্বের উপর চাপও তত বাড়ছে। তরুণ সেনাদের নেতৃত্বের আগ্রহ কমে যাওয়ায় সেনাবাহিনীর ভবিষ্যৎ নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
‘মারিফ’ আরও জানিয়েছে, গাজা যুদ্ধে এখন পর্যন্ত বিপুল সংখ্যক অফিসার ও কমান্ডার নিহত হয়েছেন এবং শত শত সেনা আহত হয়েছেন। যদিও ইসরাইল সরকার এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ করেনি। সেনা মৃত্যুর খবর গোপন করে রাখায় ধারণা করা হচ্ছে প্রকৃত সংখ্যা সরকারী হিসাবে প্রকাশিত সংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি।
এই অব্যাহত মৃত্যু ও আহতের হার সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দিচ্ছে এবং নেতৃত্বের ফাঁকফোকরও আরও প্রকট হচ্ছে। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধারা পরিকল্পিত হামলা চালিয়ে ইসরাইল বাহিনীকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে, যার ফলে ইসরাইলের যুদ্ধ লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থতার চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
শেখ ফরিদ