
ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক উত্তেজনা নিরসনে কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই ইসরায়েল ইরানে বড় ধরনের প্রতিরোধমূলক হামলা চালিয়ে নতুন উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) রাতের ওই হামলার ঘোষণা দেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
নেতানিয়াহু বলেন, ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে এই অভিযানে ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র নাতাঞ্জ, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কেন্দ্র এবং শীর্ষ পারমাণবিক বিজ্ঞানীরা লক্ষ্যবস্তু ছিল। তিনি আরও জানান, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য সরাসরি হুমকি, তাই যতদিন প্রয়োজন এই অভিযান চলবে।
ইরানের রাজধানী তেহরান ও আশেপাশে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। একই সঙ্গে ইসরায়েলের তেল আবিবেও বিমান হামলার সতর্কতা দেওয়া হয়। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা IRNA জানিয়েছে, এই হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ডের প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি এবং কয়েকজন পারমাণবিক বিজ্ঞানীসহ কমপক্ষে ১২ বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন।
হামলার পর নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারবে না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো অংশ নেই। তার ভাষ্য, ‘ইসরায়েল একতরফাভাবে হামলা চালিয়েছে, এবং আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার হল মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বাহিনীকে রক্ষা করা।’
হামলার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ট্রাম্প Truth Social-এ লেখেন, তিনি এখনও কূটনৈতিক সমাধানে বিশ্বাসী। ইরানের সঙ্গে ভালো চুক্তির পথে আছেন এবং যুদ্ধ চান না। তিনি বলেন, ‘আমি চাই ইরান সফল হোক, তবে পারমাণবিক অস্ত্র তারা পাবে না।’
ট্রাম্প আরও জানান, ওমানে রবিবার ইরানের সঙ্গে পরবর্তী আলোচনার কথা রয়েছে। এছাড়া তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে কিছু কূটনৈতিক ও সামরিক কর্মী সরিয়ে নিচ্ছে।
আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থার রিপোর্টে ইরান পরমাণু বাধ্যবাধকতা পালন করছে না বলায় উত্তেজনা আরও বেড়ে গেছে। মার্কিন গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, এতে ইসরায়েলের হামলার আশঙ্কা ছিল।
এই ঘটনার পর আবারও ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির সমালোচনা শুরু হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারে তিনি যুদ্ধে যেতেন না বললেও, তার আমলে গাজা ও ইউক্রেন সংকট আরও জটিল হয়েছে। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে তার কানাডা, গ্রিনল্যান্ড ও পানামা খাল অধিগ্রহণের ইচ্ছা আন্তর্জাতিক মহলে হাস্যরস সৃষ্টি করেছে।
এখন প্রশ্ন, ট্রাম্পের শান্তিচুক্তিকে উপেক্ষা করে নেতানিয়াহুর এই আগ্রাসী পদক্ষেপ কীভাবে মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ বদলে দেবে? যুদ্ধ না কূটনীতি, এ নিয়েই এখন বিশ্বজুড়ে আলোচনার উত্তাপ।
সূত্র: ডেইলি বিস্ট
এম.কে.