ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২

ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আঘাত: ভারতীয় পণ্যে ২৫% ট্যারিফ, রাশিয়ান তেল কেনায় অতিরিক্ত ‘শাস্তি’

প্রকাশিত: ২৩:০৬, ৩০ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২৩:০৭, ৩০ জুলাই ২০২৫

ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আঘাত: ভারতীয় পণ্যে ২৫% ট্যারিফ, রাশিয়ান তেল কেনায় অতিরিক্ত ‘শাস্তি’

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও আক্রমণাত্মক বাণিজ্য নীতির পথে হাঁটলেন। তার নতুন ঘোষণায়, ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ও সামরিক সরঞ্জাম কেনার কারণে ভারতের ওপর বাড়তি ‘জরিমানা’ বসানো হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

ট্রাম্প বুধবার তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশালে এ সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন। শুক্রবার থেকেই এই শুল্ক কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ট্রাম্প লিখেছেন, “ভারত আমাদের বন্ধু হলেও, বছরের পর বছর আমরা তাদের সঙ্গে সামান্যই বাণিজ্য করেছি। কারণ, তাদের শুল্ক হার অত্যন্ত বেশি।” তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ও অস্ত্র কেনার মাধ্যমে ভারত ইউক্রেন যুদ্ধকে পরোক্ষভাবে সমর্থন করছে। তাই এ বিষয়ে ‘জরিমানা’ আরোপ করা ছাড়া তার প্রশাসনের উপায় নেই।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, তারা ট্রাম্পের ঘোষণাটি নজরে রেখেছে এবং এর প্রভাব বিশ্লেষণ করছে।

এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এল, যখন ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্পর্ক আগের মতো উষ্ণ নেই। যদিও প্রথম দফায় তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা জানা গিয়েছিল, পরবর্তীতে বাণিজ্য ও অভিবাসন নীতির কারণে সেই সম্পর্কে ফাটল দেখা দেয়।

ট্রাম্প এর আগেও দাবি করেছিলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে চার দিনের সংঘাতের সময় মোদি তার হস্তক্ষেপে রাজি হয়েছিলেন। তবে ভারত এ দাবি সরাসরি নাকচ করে বলে, তারা কখনোই তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা মেনে নেবে না।

অন্যদিকে, পাকিস্তানকে নিয়ে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি তুলনামূলকভাবে ইতিবাচক। জুন মাসে তিনি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে হোয়াইট হাউসে লাঞ্চে আমন্ত্রণ জানান। কোনো বেসামরিক রাষ্ট্রপ্রধান না হয়েও পাকিস্তানের কোনো সেনাপ্রধানকে এই প্রথম আমন্ত্রণ জানানো হলো।

ট্রাম্পের এই নতুন শুল্ক ঘোষণার পেছনে অর্থনৈতিক চিন্তা রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি করে তিনি আমেরিকান পণ্যের বাজার আরও বড় করার পাশাপাশি আমদানির ওপর শুল্ক বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করেছেন। তার মতে, এই শুল্ক থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব ঘাটতি সামলাতে সহায়তা করবে এবং দেশে উৎপাদন শিল্পে কর্মসংস্থান বাড়াবে।

তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই ধরনের শুল্ক বৃদ্ধির ফলে আমদানি খরচ বাড়বে, যার বোঝা গিয়ে পড়বে সাধারণ ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের ওপর। এতে মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে পারে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে স্থবিরতা আসতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ভারতে মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৪৫.৮ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ দেশটি আমদানির তুলনায় কম রফতানি করেছে।

বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ ভারত এখন চীনের বিকল্প কৌশলগত শক্তি হিসেবেও বিবেচিত। তবে রাশিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। ইউক্রেন যুদ্ধের পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা দিলেও ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করেনি।

ফেব্রুয়ারিতে মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, ভারত শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস কিনতে শুরু করবে।

মঙ্গলবার স্কটল্যান্ড সফর শেষে দেশে ফেরার পথে ট্রাম্প সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ভারতের সঙ্গে এখনো পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য চুক্তি হয়নি। আর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো নিয়ে সরাসরি কিছু না বললেও বলেন, “দেখা যাক কী হয়।”

এই নতুন বাণিজ্য সংকেত কেবল ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককেই নয়, বরং বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতির এ ঘোষণা শুধু ভারতের জন্যই নয়, বরং গোটা বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থার জন্য একটি বড় সতর্ক সংকেত। রাশিয়া যুদ্ধ, চীন-ভারত প্রতিযোগিতা, আর আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জটিলতা সব মিলে পরিস্থিতি যে কোন দিকে মোড় নেবে, তা এখনো অনিশ্চিত। তবে স্পষ্টতই, ভারতের জন্য এটা সহজ সময় নয়।

 


সূত্র:আল-জাজিরা

আফরোজা

আরো পড়ুন  

×