ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০১ আগস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

আলোচনার আগে ক্ষতিপূরণ চাই: যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি ইরানের

প্রকাশিত: ১৭:৪০, ৩১ জুলাই ২০২৫

আলোচনার আগে ক্ষতিপূরণ চাই: যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি ইরানের

ছবিঃ সংগৃহীত

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্বাস আরাকচি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক মার্কিন ও ইসরায়েলি আগ্রাসনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। অন্যথায়, তেহরান পরমাণু আলোচনা পুনরায় শুরু করবে না।

ফাইন্যানশিয়াল টাইমস-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আরাকচি বলেন, “আলোচনার মাঝপথে কেন তারা আমাদের ওপর হামলা চালালো, এর ব্যাখ্যা দিতে হবে। ভবিষ্যতে এমন কাজ আর করবে না—এ নিশ্চয়তাও দিতে হবে। তাছাড়া তারা যে ক্ষতি করেছে, তারও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।”

গত ১৩ জুন ইসরায়েল এক সমন্বিত সামরিক হামলা চালায় ইরানের ওপর, যেখানে বহু শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তা, পরমাণু বিজ্ঞানী এবং সাধারণ বেসামরিক মানুষ নিহত হন। কয়েকদিনের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ওই আগ্রাসনে যুক্ত হয়ে ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় বোমাবর্ষণ করে। যা আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘ সনদ এবং পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির (NPT) সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

ইরান তাৎক্ষণিক ও সুসংগঠিত জবাবে ফিলিস্তিন অধিকৃত অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি এবং কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের আল-উদেইদ বিমান ঘাঁটিতে পাল্টা হামলা চালায়। ২৪ জুনের মধ্যে এই পাল্টা আঘাত ইসরায়েলকে অস্ত্রবিরতির অনুরোধ জানাতে বাধ্য করে।

আরাকচি জানান, হামলার পরও যুক্তরাষ্ট্রের দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে পরোক্ষভাবে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, “আলোচনার পথ সংকীর্ণ, তবে একেবারে বন্ধ নয়। আমি আমার নেতৃত্বকে বোঝাতে চাই যে, যদি আলোচনা করি, তাহলে যেন অপর পক্ষও সত্যিকারের ‘উইন-উইন’ সমাধান চায়।”

তিনি আরও বলেন, আলোচনা পুনরায় শুরু করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপ নিতে হবে—বিশেষ করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও ভবিষ্যতে এমন আগ্রাসনের নিশ্চয়তা না দেওয়ার বিষয়ে।

আরাকচি জানান, ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি (JCPOA) থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একতরফা সরে যাওয়ার পর ইরানে মার্কিনবিরোধী মনোভাব ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তিনি বলেন, “মানুষ আমাকে বলছে—‘আর সময় নষ্ট কোরো না, ওদের কথায় আর বিশ্বাস কোরো না। তারা আলোচনার নামে অন্য উদ্দেশ্য লুকিয়ে রাখে।’”

ইসরায়েল-আমেরিকার যৌথ হামলার আগে পাঁচ দফা পরোক্ষ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় ওমানের মাধ্যমে। কিন্তু ১৫ জুন মাসকাটে নির্ধারিত ষষ্ঠ দফার আলোচনা বাতিল করা হয় হামলার কারণে।

২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র আবারও ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়—আন্তর্জাতিক নিয়মের সরাসরি লঙ্ঘন করে।

আরাকচি বলেন, “যদি তারা শূন্য সমৃদ্ধির (zero enrichment) দাবি করে, তবে আলোচনার কোনো ভিত্তিই নেই। আমরা যুক্তি তুলে ধরতে পারি, তারাও পারে, কিন্তু শূন্য সমৃদ্ধির দাবি নিয়ে আলোচনা সম্ভব নয়।”

তিনি ইউরোপীয় ত্রয়ী—যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানিকেও সতর্ক করে বলেন, যদি তারা JCPOA-র ‘স্ন্যাপব্যাক’ ব্যবস্থা সক্রিয় করে, তবে ইরান তাদের সঙ্গে আলোচনাই বন্ধ করে দেবে।

“তারা কোনো নিষেধাজ্ঞা তুলতে পারে না, কিছুই করতে পারে না। তাই এই মুহূর্তে তাদের সঙ্গে আলোচনার কোনো যৌক্তিকতা নেই,” বলেন আরাকচি। “যদি তারা স্ন্যাপব্যাক চালু করে, তবে সেটিই তাদের জন্য শেষ পথ হবে।”

ইমরান

×