
গুয়াদালাহারার এক মরুভূমির ল্যাবে বসেই মেক্সিকান বিজ্ঞানী সান্দ্রা পাসকো ওর্তিজ বিশ্বব্যাপী পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্যতম বড় সমস্যা—প্লাস্টিক দূষণ—সমাধানের এক অভিনব পথ দেখিয়েছেন। তার তৈরি করা এই নতুন ধরণের প্লাস্টিক তৈরি হচ্ছে ক্যাকটাস বা স্থানীয়ভাবে পরিচিত "নোপাল" উদ্ভিদের রস থেকে, যা মাটিতে পড়ে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই অদৃশ্য হয়ে যায়—একটি পাতার মতোই, বৃষ্টিতে গলে যায়।
এই জৈব-প্লাস্টিক তৈরির প্রক্রিয়াটি শুরু হয় পরিপক্ক ক্যাকটাসের পাতাগুলো থেকে রস সংগ্রহের মাধ্যমে। গাছটি কেটে ফেলা হয় না, কারণ এই পাতা আবারও গজিয়ে ওঠে। এরপর রসের সঙ্গে প্রাকৃতিক মোম, প্রোটিন ও গ্লিসারিন মিশিয়ে একটি ঘন মিশ্রণ তৈরি করা হয়। এই তরল মিশ্রণকে ছাঁচে ঢেলে শুকিয়ে ফেলা হয়, যার ফলে তৈরি হয় নমনীয় ও মজবুত ফিল্ম—যা সাধারণ প্লাস্টিক ব্যাগ, মোড়ক বা প্যাকেটের মতো ব্যবহারযোগ্য, তবে পুরোপুরি উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে তৈরি।
এই উদ্ভাবনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো এর দ্রুত বিয়োজন ক্ষমতা। সাধারণ বাগানের মাটিতে এটি মাত্র ৬০ দিনের মধ্যেই সম্পূর্ণভাবে মিশে যায়। আর পানিতে তো মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই গলে গিয়ে কোনো ক্ষতিকর উপাদান বা মাইক্রোপ্লাস্টিক ছাড়াই অদৃশ্য হয়ে যায়। এমনকি এটি খাওয়া গেলেও কোনো ক্ষতি হয় না, ফলে সামুদ্রিক প্রাণীদের জন্যও এটি একেবারে নিরাপদ।
অন্য অনেক বায়োপ্লাস্টিকের মতো এটি জটিল শিল্প-কম্পোস্টিং ব্যবস্থা বা রাসায়নিক সংযোজন ছাড়াই সহজে মিশে যেতে পারে পরিবেশে। এটি ঠিক একটি শুকনো পাতার মতোই প্রকৃতিতে ফিরে যায়। মেক্সিকোর মরু অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে এবং কোনো সেচ ছাড়াই ক্যাকটাস জন্মায়—ফলে এই প্লাস্টিক তৈরির কাঁচামাল সহজলভ্য, সস্তা এবং টেকসই।
সান্দ্রা ওর্তিজের দল বর্তমানে খাবার মোড়ানো ব্যাগ, সামুদ্রিক পরিবেশ-সুরক্ষিত মোড়ক এবং কৃষিকাজে ব্যবহৃত মালচ শিট তৈরির প্রোটোটাইপে কাজ করছে। ইতোমধ্যেই স্থানীয় কৃষকরা ক্যাকটাস সরবরাহ করছেন এবং গ্রামীণ অংশীদারিত্বভিত্তিক ছোট উৎপাদন কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
যেখানে প্লাস্টিক বর্জ্যে নদী-নালা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে, সেখানে এই ক্যাকটাস-ভিত্তিক প্রযুক্তি হতে পারে এক বিপ্লবী সমাধান—একটি সাধারণ গাছ থেকে জন্ম নিতে পারে প্লাস্টিকবিহীন এক নতুন ভবিষ্যৎ।
রিফাত