ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০১ আগস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

বরাদ্দ ছাড়াই সরকারি বাসায় খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দখল, লক্ষাধিক টাকার রাজস্ব ফাঁকি

কামরুল আহসান (সোহাগ), ইন্দুরকানী, পিরোজপুর

প্রকাশিত: ১৭:৩৪, ৩১ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৭:৩৪, ৩১ জুলাই ২০২৫

বরাদ্দ ছাড়াই সরকারি বাসায় খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দখল, লক্ষাধিক টাকার রাজস্ব ফাঁকি

ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ।

কোনো নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে বরাদ্দ ছাড়াই, অনুমোদনের প্রয়োজন মনে না করে এবং ভাড়া পরিশোধ ছাড়াই খামখেয়ালি ভঙ্গিতে বসবাস করে আসছেন পিরোজপুরের ইন্দুরকানী (জিয়ানগর) উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা কে. এম. মামুনুর রশীদ।

সরকারি বাসা বরাদ্দ কমিটির পক্ষ থেকে বারবার জানানো সত্ত্বেও তিনি কারো কথায় কর্ণপাত না করে নিজের খামখেয়ালিপনা অব্যাহত রেখেছেন। উপজেলা পর্যায়ের একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হয়েও তিনি বসবাস করছেন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য নির্ধারিত ডরমিটরিতে। যেখানে তিনি সরকারি কোষাগার থেকে মূল বেতনের শতকরা ৪০ ভাগ হারে বাড়িভাড়া গ্রহণ করছেন, সেখানে এ ধরনের আচরণে রুচিহীনতা ও হীনমন্যতার প্রশ্ন উঠেছে। ফলে সরকারের লক্ষাধিক টাকার রাজস্ব ফাঁকি কীভাবে দেওয়া হচ্ছে তা নিয়েও সংশ্লিষ্ট মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

সূত্রে জানা যায়, কে. এম. মামুনুর রশীদ ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে ইন্দুরকানী উপজেলায় যোগদানের পর ২০২৫ সালের মার্চ মাস থেকে বরাদ্দ ছাড়াই বিনা অনুমতিতে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ডরমিটরিতে বসবাস শুরু করেন। উপজেলা বাসভবন বরাদ্দ কমিটি একাধিকবার অনুরোধ জানালেও তিনি কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।

এ বিষয়ে উপজেলা জুড়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে এবং তিনি একজন খামখেয়ালিপ্রবণ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন।

উল্লেখযোগ্য যে, বিগত ২৯ জুন ইন্দুরকানী উপজেলা খাদ্য গুদামে ভিজিএফ (VWB) কর্মসূচির আওতায় ২৪৩ জন সুবিধাভোগীর মাঝে জনপ্রতি ৩০ কেজি করে চাল বিতরণের সময় নিম্নমানের ও পঁচা চাল বিতরণ করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি জানতে পেরে কয়েকজন সাংবাদিক সেখানে গেলে বিতরণ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সাংবাদিকদের প্রতি উত্তপ্ত আচরণ করেন। এমনকি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করেন এবং তাদের ভিতরে প্রবেশের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে আইনের ভয় দেখান।

সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও পরবর্তী কোনো পদক্ষেপ জানা যায়নি।

বিনা অনুমতিতে ও বিনা ভাড়ায় বসবাস প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে কে. এম. মামুনুর রশীদ বলেন, “আপনাদের কি খেয়ে দেয়ে কোনো কাজ নেই? ঘরে বসে মনগড়া সংবাদ করেন! শুধু শুধু অন্যের ব্যাপারে কৌতূহলী হয়ে নাক গলান।” তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “যা ইচ্ছা তাই করেন, এতে আমার কিছু যায় আসে না।”

উপজেলা সরকারি বাসভবন বরাদ্দ কমিটির সদস্য সচিব ও এলজিইডি প্রকৌশলী লায়লা মিথুন বলেন, “আমি একাধিক উপজেলার দায়িত্বে রয়েছি, সপ্তাহে এক-দু’দিন ইন্দুরকানীতে অফিস করি। অনুমোদন সংক্রান্ত বিষয়টি কাগজপত্র না দেখে বলা যাচ্ছে না।”

তাঁর দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিউনিটি অর্গানাইজার মো. শাহ-পরান জানান, “অনুমোদন আজই হয়েছে, তবে এখনো কোনো টাকা জমা হয়নি।” সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর অনুমোদনের বিষয়টি সামনে আসে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সরকারি বাসভবন বরাদ্দ কমিটির সভাপতি হাসান বিন মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

মিরাজ খান

×