ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২

যে ৭টি লক্ষণে বুঝবেন শরীরে ডায়াবেটিস বাসা বাঁধছে কিনা: উপেক্ষা করলে বাড়বে ঝুঁকি!

প্রকাশিত: ১৯:২৭, ২৯ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৯:২৮, ২৯ জুলাই ২০২৫

যে ৭টি লক্ষণে বুঝবেন শরীরে ডায়াবেটিস বাসা বাঁধছে কিনা: উপেক্ষা করলে বাড়বে ঝুঁকি!

বিশ্বজুড়ে দ্রুতগতিতে বাড়ছে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এটি এখন সবচেয়ে সাধারণ জীবনধর্মী রোগগুলোর একটি হিসেবে চিহ্নিত। বিশেষ করে ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এই প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। ২০২১ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, “বিশ্বে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যায় ভারতের অবস্থান দ্বিতীয়, চীনের পরেই। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের (IDF) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ভারতে প্রায় ৭৭ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন। ২০৩০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা বেড়ে ১০১ মিলিয়নে এবং ২০৪৫ সালে ১৩৪ মিলিয়নে পৌঁছাতে পারে।”

এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে ডায়াবেটিস চিহ্নিতকরণ, নিয়ন্ত্রণ এবং জীবনধারাভিত্তিক প্রতিকার এখন কতটা জরুরি হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে টাইপ-২ ডায়াবেটিসকে অনেক সময় "নীরব ঘাতক" বলা হয়, কারণ এটি শরীরে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণগুলো এতটাই সূক্ষ্ম থাকে যে তা সহজেই উপেক্ষিত হয়ে যায়।

তবে যদি এই সূক্ষ্ম লক্ষণগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে সময়মতো শনাক্ত করা যায়, তবে তা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ কিংবা জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেকাংশে প্রতিরোধযোগ্য। নিচে এমন সাতটি প্রাথমিক লক্ষণের কথা তুলে ধরা হলো, যেগুলো শরীরে দেখা দিলে অবহেলা করা উচিত নয়।

অতিরিক্ত তৃষ্ণা অনুভব, পানি পান করেও পিপাসা মেটে না
যদি বারবার পানি পান করার পরও তৃষ্ণা না মেটে, তবে তা হতে পারে ডায়াবেটিসের প্রথম লক্ষণ। রক্তে চিনি (গ্লুকোজ) মাত্রা বেড়ে গেলে তা শরীরের টিস্যু থেকে তরল টেনে নেয়, ফলে ডিহাইড্রেশন হয় এবং শরীর বারবার পানি চায়। বিশেষ করে রাতে অতিরিক্ত তৃষ্ণা ও মুখ শুকিয়ে যাওয়া এই সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।

ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
আপনি কি সম্প্রতি লক্ষ্য করেছেন যে, বিশেষ করে রাতে বারবার টয়লেটে যেতে হচ্ছে? এটি ডায়াবেটিসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক লক্ষণ। রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ জমে গেলে কিডনি সেটি বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে এবং এর ফলে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়।

কারণবিহীন ওজন হ্রাস
যদি কোনো ডায়েট বা ব্যায়াম না করেও আপনার ওজন হঠাৎ করে কমে যায়, তবে সেটি চিন্তার বিষয়। শরীর যদি কোষে পর্যাপ্ত গ্লুকোজ পৌঁছে না দিতে পারে, তাহলে শক্তির উৎস হিসেবে চর্বি ও পেশিকে ভেঙে ফেলতে শুরু করে। এর ফলেই দ্রুত ওজন কমে যায়। টাইপ-১ ডায়াবেটিসে এটি বেশি দেখা গেলেও টাইপ-২ ডায়াবেটিসেও এ লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

দুর্বলতা ও অতিরিক্ত ক্লান্তি
যথেষ্ট বিশ্রাম নেওয়ার পরও যদি সারাক্ষণ ক্লান্তি অনুভব করেন, তবে তা হতে পারে ডায়াবেটিসের ইঙ্গিত। শরীরের কোষগুলো পর্যাপ্ত গ্লুকোজ না পেলে আপনি দুর্বলতা অনুভব করতে পারেন। কফি বা ঘুমিয়েও এই ক্লান্তি দূর না হলে অবশ্যই রক্তের সুগার পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত।

চোখে ঝাপসা দেখা
উচ্চ রক্তচিনি চোখের লেন্স থেকে তরল টেনে নেয়, ফলে ফোকাস করতে সমস্যা হয় এবং চোখে ঝাপসা দেখা দেয়। এটি অবহেলা করলে চোখের রেটিনার ক্ষুদ্র রক্তনালিতে ক্ষতি হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে চোখের মারাত্মক ক্ষতি কিংবা অন্ধত্বের কারণও হতে পারে।

ক্ষত বা কাটা জায়গা শুকাতে দেরি হওয়া
ডায়াবেটিস শরীরে রক্ত চলাচল এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়। ফলে ছোটখাটো কাটাছেঁড়া বা ক্ষত শুকাতে সময় বেশি লাগে, এমনকি কখনও কখনও অবস্থা খারাপও হতে পারে। পায়ের পাতায় ও পায়ে এই সমস্যা বেশি দেখা যায় এবং তা অবশ্যই অবহেলা করা উচিত নয়।

হাত ও পায়ে ঝিনঝিন বা অবশ অনুভব করা
ডায়াবেটিসের প্রাথমিক এবং গুরুতর লক্ষণগুলোর একটি হলো স্নায়ু ক্ষয়, যাকে বলা হয় ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি। এটি সাধারণত আঙুল, পায়ের আঙুল, হাত ও পায়ে ঝিনঝিন, পোড়া-পোড়া ভাব বা অবশ অনুভূতি দিয়ে শুরু হয়। উচ্চ রক্তচিনির কারণে স্নায়ুপ্রান্ত ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে, এবং যদি এটি দীর্ঘ সময় অজ্ঞাত থেকে যায় তবে স্থায়ী স্নায়ু ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।


ডায়াবেটিস নিঃসন্দেহে একটি উদ্বেগজনক জনস্বাস্থ্য সমস্যা। তবে এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকলে এবং তা উপেক্ষা না করলে, জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তাই যদি উপরোক্ত লক্ষণগুলোর মধ্যে কোনো একটি বা একাধিক লক্ষণ আপনার মধ্যে দেখা দেয়, তবে দেরি না করে দ্রুত রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করান এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়াই হতে পারে দীর্ঘস্থায়ী সুস্থতার চাবিকাঠি।

 

 

 


সূত্র:https://tinyurl.com/bd7yp4dm

আফরোজা

×