
ছবি: প্রতীকী
অস্ট্রেলিয়ার ঔষধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বলছে, ভিটামিন বি-৬ অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে স্নায়ুর ক্ষতি সহ নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আমাদের ধারণার চেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়তে পারে।
সম্প্রতি এবিসি নিউজে থেরাপিউটিক গুডস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (TGA) এর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা হয়তো ভিটামিন বি-৬ সাপ্লিমেন্টের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার পরিমাণ কম মূল্যায়ন করেছে। নিরাপত্তার কারণে উচ্চ মাত্রার ভিটামিন বি-৬ সাপ্লিমেন্ট বিক্রিতে নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব রয়েছে।
একজন প্যাথলজিস্ট যিনি অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা রক্তের নমুনায় ভিটামিন বি-৬ পরীক্ষা করেন, তিনি বলছেন, গত মে মাসের তথ্য অনুযায়ী ৪.৫% নমুনায় স্নায়ুর ক্ষতির ‘খুব সম্ভাব্য’ সংকেত পাওয়া গেছে।
ভিটামিন বি-৬ কী?
ভিটামিন বি-৬ বা পিরিডক্সিন শরীর সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাটের বিপাক প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়। মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটার উৎপাদনেও এটির প্রয়োজন, যা মস্তিষ্কের কার্যক্রম ও মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করে।
এছাড়াও, ভিটামিন বি-৬ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে এবং রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সহায়তা করে, যা শরীরের কোষে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়। কিছু গর্ভবতী নারী ভিটামিন বি-৬ সাপ্লিমেন্ট নেন, কারণ এটি গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে বমি ও ক্লান্তি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও পিএমএসের লক্ষণ কমানোর জন্য কিছু নারী এটি ব্যবহার করেন।
তবে অধিকাংশ মানুষের জন্য অতিরিক্ত ভিটামিন বি-৬ সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার প্রয়োজন নেই, কারণ খাদ্য থেকে যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন বি-৬ পাওয়া যায়—যেমন মাংস, সেরিয়াল, ফল ও সবজি থেকে।
কী পরিমাণ ভিটামিন বি-৬ প্রয়োজন?
সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্কের দৈনিক ১.৩ থেকে ১.৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-৬ যথেষ্ট। বর্তমানে, ৫ থেকে ২০০ মিলিগ্রাম ডোজের ভিটামিন বি-৬ সাপ্লিমেন্ট বিক্রি হয়, ২০০ মিলিগ্রামের বেশি ডোজ অবশ্যই ডাক্তারি প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমে নিতে হবে।
অতিরিক্ত ভিটামিন বি-৬ খেলে কী হয়?
অধিকাংশ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভিটামিন বি-৬ প্রস্রাবে বের হয়ে যায় এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। তবে দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ মাত্রায় গ্রহণের কারণে স্নায়ু রোগ (পারিফেরাল নিউরোপ্যাথি) হতে পারে। এতে হাত ও পায়ে ব্যথা, ঝিমঝিম বা দুর্বলতা দেখা দেয়। কীভাবে এটি হয়, এখনও তা পুরোপুরি জানা যায়নি।
সাধারণত সাপ্লিমেন্ট বন্ধ করলে লক্ষণগুলো কমে যায়, তবে কিছু ক্ষেত্রে ৩ মাস থেকে ২ বছর সময় লাগতে পারে পুরোপুরি সুস্থ হতে।
গবেষণায় কী জানা গেছে?
১৯৯০-এর দশকের একটি গবেষণায় ৭০ জন রোগীকে ৫ বছর ধরে দিনে ১০০ থেকে ১৫০ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-৬ দেওয়া হয়, কিন্তু নিউরোপ্যাথির কোনো ঘটনা দেখা যায়নি। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় উচ্চ মাত্রার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি দেখা গেছে।
২০২৩ সালে এক ব্যক্তির ৯৫ মিলিগ্রামের ভিটামিন বি৬ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের পর নিউরোপ্যাথি হয়েছে। একই বছরে, TGA-র ডাটাবেজে ১৭৪টি নিউরোপ্যাথি সংক্রান্ত রিপোর্ট এসেছে।
কোন পরিস্থিতিতে সতর্ক হওয়া উচিত?
যদি আপনি ৫০ মিলিগ্রাম বা তার বেশি ভিটামিন বি-৬ দৈনিক দীর্ঘদিন ধরে (ছয় মাস বা বেশি) ব্যবহার করেন, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ করা উচিত।
তিনটি লক্ষণ বিশেষ নজরে রাখুন:
১. হাত ও পায়ের অনুভূতিহীনতা বা ব্যথা
২. পেশীর দুর্বলতার কারণে সঠিক সমন্বয় ও ভারসাম্যের সমস্যা
৩. পেটে অ্যাসিডিটি এবং বমি বমি ভাব
যদি এই লক্ষণগুলো দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
সূত্র: দ্য কনভারসেশন।
রাকিব