
ছবি: প্রতীকী
আগে ধারণা ছিল, ব্রেস্ট ক্যান্সার মূলত ৪০ বছর বয়সের পর নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। কিন্তু এখন চিত্রটা অনেকটাই বদলে গেছে। আধুনিক গবেষণা ও চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, ২৫ বছর পার করলেই অনেক নারীর মধ্যে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি দেখা দিচ্ছে। এটা শুধু শহর কিংবা গ্রাম নয়, সবখানেই বাড়ছে এই রোগের বিস্তার। আধুনিক জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ ও পরিবেশ দূষণ এই ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে কয়েকগুণ।
বর্তমানে অনেক তরুণীই কম বয়সেই বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। এর পেছনে বড় কারণ হচ্ছে অনিয়মিত জীবনযাপন। দিনে ঘুম, রাতে জেগে থাকা, চটজলদি ফাস্টফুড খাওয়া, পর্যাপ্ত পানি না পান করা, মানসিক চাপে থাকা, শরীরচর্চার অভাব—এসব কারণে শরীরের হরমোন ব্যালেন্স নষ্ট হয়ে যায়। আর এই হরমোনের ভারসাম্যহীনতা থেকেই ব্রেস্ট ক্যান্সারের সম্ভাবনা তৈরি হয়। আগে যেখানে বিয়ে হতো ২৫ বছরের মধ্যে এবং সন্তান ধারণ হতো দ্রুত, এখন অনেক নারীই ৩০-এর পরে বিয়ে করছেন এবং সন্তান নিচ্ছেন আরও পরে। এই দেরি করাও স্তন ক্যান্সারের একটি ঝুঁকিপূর্ণ কারণ বলে চিকিৎসকরা মনে করেন।
অনেকেই আবার ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলোকে গুরুত্ব দেন না। যেমন—স্তনে ব্যথা, চাকা অনুভব হওয়া, নিপল থেকে রক্ত বা তরল পদার্থ বের হওয়া, স্তনের গঠন বা আকারে পরিবর্তন হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের সমাজে এখনো স্তন নিয়ে কথা বলা বা শারীরিক যেকোনো সমস্যাকে লজ্জার বিষয় মনে করা হয়। এর ফলে অনেক নারী সময়মতো চিকিৎসা নিতে পারেন না এবং ক্যান্সার যখন গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তখন আর কিছু করার থাকে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন থেকে প্রতিটি নারীকে ২৫ বছর বয়স পার হওয়ার পর থেকেই নিয়মিত স্তনের পরীক্ষা করা উচিত। নিজে নিজেও মাসে একবার হাত দিয়ে স্তন পরীক্ষা করা যেতে পারে। এছাড়া বছরে একবার চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চেকআপ করানো যেতে পারে। যদি পরিবারের কারও ক্যান্সারের ইতিহাস থাকে, তাহলে ঝুঁকি আরও বেশি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সচেতনতা আরও বেশি জরুরি।
আজকাল অনেক তরুণী জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বা হরমোনাল ওষুধ গ্রহণ করছেন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া। এসব ওষুধ হরমোনের ওপর প্রভাব ফেলে এবং দীর্ঘমেয়াদে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাছাড়া প্রসাধনীর অতিরিক্ত ব্যবহার, কেমিকেলযুক্ত ডিওডোরেন্ট বা লোশন ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকা দরকার। শরীরে যেসব রাসায়নিক জমা হয়, তা ধীরে ধীরে কোষে প্রভাব ফেলে এবং ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।
এখন অনেকেই দীর্ঘ সময় বসে বসে কাজ করেন। বিশেষ করে যারা অফিসে বা বাসায় কম্পিউটারের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটান, তাদের শরীর চলাফেরা করে না। এতে শরীরের রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয় এবং দেহে বিষাক্ত পদার্থ জমে থাকে। শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম না করলে দেহে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে যায়, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে বাধা সৃষ্টি করে।
সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যও শরীরের ওপর প্রভাব ফেলে। দীর্ঘদিনের মানসিক চাপ, বিষণ্ণতা বা উদ্বেগ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। যারা নিয়মিত স্ট্রেসে থাকেন, তারা অন্যদের তুলনায় বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। তাই মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখাও জরুরি।
সতর্কতা, নিয়মিত চেকআপ এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই পারে এই ঝুঁকি কমিয়ে আনতে। ২৫ বছর বয়স মানে এখন আর নিরাপদ নয়। সময় এসেছে সচেতন হওয়ার, লজ্জা ও ভয় দূরে রেখে নিজের শরীর সম্পর্কে জানার। কারণ দ্রুত শনাক্ত হলে এই রোগ সম্পূর্ণভাবে নিরাময় সম্ভব। তাই নিজে সচেতন হোন, অন্যকেও সচেতন করুন। জীবন অমূল্য, যত্ন নিন নিজের।
এম.কে.