
ছবি: প্রতীকী
টেস্টোস্টেরন একটি গুরুত্বপূর্ণ পুরুষ হরমোন, যেটি শরীরের নানা ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত। এটি শুধু যৌন ক্ষমতা নয়, বরং মাংসপেশি, হাড়ের ঘনত্ব, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামগ্রিক শক্তির জন্যও প্রয়োজনীয়। সাধারণত, পুরুষদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই হরমোনের মাত্রা ধীরে ধীরে কমতে থাকে, তবে কখনও কখনও বয়সের আগেই টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যেতে পারে। এই হরমোনের ঘাটতি হলে শরীরে ও মনে বিভিন্ন রকম পরিবর্তন দেখা দেয়, যা ধীরে ধীরে একজন পুরুষের জীবনযাত্রার উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
টেস্টোস্টেরন কমে গেলে প্রথম যে লক্ষণটি অনেকেই টের পান, তা হলো যৌন ইচ্ছা বা লিবিডোর হ্রাস। স্বাভাবিকভাবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের মধ্যে যৌন আগ্রহ থাকে, কিন্তু টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি হলে সেই আগ্রহ ধীরে ধীরে কমে যায়। এর সঙ্গে দেখা দিতে পারে যৌন অক্ষমতা, অর্থাৎ সহজে উত্তেজিত না হওয়া বা ইরেকশন ধরে রাখতে সমস্যা হওয়া। অনেক সময় সকালে স্বাভাবিকভাবে যেভাবে ইরেকশন হয়, তাও কমে যেতে পারে।
শুধু যৌন ক্ষমতাই নয়, টেস্টোস্টেরনের অভাবে শারীরিক শক্তি কমে যায়। আগে যেসব কাজ করতে কোনো সমস্যা হতো না, এখন সেগুলো করতে কষ্ট হয়। মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পড়ে, শরীর পাতলা হয়ে যেতে পারে, এবং শরীরে শক্তি কমে গিয়ে সবসময় ক্লান্তি লাগে। বিশেষ করে কাজের মাঝখানে হঠাৎ করে ঘুম পেয়ে যাওয়া বা অতিরিক্ত অলস লাগা এই হরমোন কমে যাওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে।
টেস্টোস্টেরন হরমোনের ঘাটতি মানসিক স্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলে। একে অনেক সময় পুরুষদের “ডিপ্রেশন হরমোন” বলেও ব্যঙ্গ করে ডাকা হয়, কারণ এর অভাবে মানসিক উদ্বেগ, হতাশা ও মন খারাপের প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। কোনো কিছুতে আগ্রহ থাকে না, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় এবং ছোট ছোট ব্যাপারে রাগ উঠে যায়। মনোযোগের ঘাটতিও দেখা দিতে পারে, যেমন কেউ কিছু বললে তা ধরে রাখা বা কাজের প্রতি মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে গেলে ঘুমের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। অনেকেই ঘুমাতে পারেন না বা ঘুম গভীর হয় না। আবার কেউ কেউ অতিরিক্ত ঘুমিয়ে ফেলেন, কিন্তু তাতেও ক্লান্তি দূর হয় না। শরীর যেন সারাক্ষণ ঝিমিয়ে থাকে।
শরীরের গঠনেও পরিবর্তন আসে। বিশেষ করে পেটের চারপাশে চর্বি জমে যেতে পারে। যেসব পুরুষ আগে ফিট ছিলেন, হঠাৎ করে তারা দেখতে পান যে পেট মোটা হয়ে যাচ্ছে। কখনও কখনও স্তনের অংশে সামান্য ফোলাভাব বা চর্বি জমার মতো পরিবর্তনও হয়, যাকে চিকিৎসা ভাষায় “গাইনোকোমাস্টিয়া” বলা হয়।
টেস্টোস্টেরন কমে গেলে হাড়ের ঘনত্বও কমে যেতে পারে, ফলে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়ে। এর কারণে হাড় ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়, বিশেষ করে বৃদ্ধ বয়সে। এছাড়া শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে।
আরেকটি লক্ষণ হলো, দাড়ি ও শরীরের লোমের পরিমাণ কমে যাওয়া। হঠাৎ করে কেউ যদি লক্ষ্য করেন যে মুখে দাড়ি পাতলা হয়ে যাচ্ছে বা শরীরে আগে যেসব জায়গায় লোম ছিল তা কমে যাচ্ছে, তাহলে এটি হতে পারে টেস্টোস্টেরন হরমোনের ঘাটতির ইঙ্গিত।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, অনেক সময় এই লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে আসে বলে মানুষ বুঝতে পারে না যে তাদের শরীরে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোনের ঘাটতি হচ্ছে। অনেকেই ভাবেন বয়স বেড়ে গেছে, তাই এমন হচ্ছে। অথচ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে যদি রক্ত পরীক্ষা করা হয়, তাহলে সহজেই টেস্টোস্টেরনের মাত্রা জানা যায় এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়।
টেস্টোস্টেরন কমে গেলে শরীর এবং মনের উপর একসঙ্গে প্রভাব পড়ে। এটি কেবল যৌন স্বাস্থ্য নয়, বরং একজন পুরুষের আত্মবিশ্বাস, শক্তি, আবেগ এবং জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে। তাই শরীরে যদি এসব লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
এম.কে.