
ছবি: জনকণ্ঠ
পাইকগাছার শিবসা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হলে পাঁচ উপজেলার সাথে নতুন সংযোগ হবে খুলনার। যাতায়াত ব্যবস্থায় আসবে আমূল পরিবর্তন। তবে সেতু নির্মানের কাজ চললেও তা নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করার দাবি স্থানীয়দের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলায় পল্লী সড়ক (সিআইবিআরআর) প্রকল্পের সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। সেতুটি নির্মাণ কাজ শেষ হলে পাইকগাছার পাশ্ববর্তী উপজেলা কয়রা, দাকোপ,বটিয়াঘাটা, তেরখাদা এবং সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার মানুষ বিভাগীয় শহর খুলনার সাথে দ্রুততম সময়ে যাতায়াত করতে পারবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, পাইকগাছা জিসি-লস্কর বাজার, বাইনতলা, বগুড়ারচক, শুড়িখালী, ভান্ডার পোল, গিলাবাড়ী জিসি সড়কে দুই হাজার তিনশত মিটার চেইনজে লস্কর ও গড়ইখালী ইউনিয়নের কড়ুলিয়া গ্রামের শিবসা নদীর উপর প্রায় সাতশত আটচল্লিশ মিটার দীর্ঘ নির্মিত একটি সেতুর কাজ চলমান রয়েছে। সেতুর কাজ প্রায় ৬৩ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। সেতুটির দৈর্ঘ্য প্রায় পৌনে ১ কিলোমিটার ও ৯ দশমিক ৮ মিটার (৩২ ফুট) প্রশস্ত হবে। যার চুক্তিমূল্য একশত বিশ কোটি টাকা। ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিঃ (এনডিই) নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতু নির্মাণের কাজ ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু করে। যা ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বরে শেষ হবে।
স্থানীয় শহিদুল ইসলাম জনকন্ঠকে বলেন, ডাক্তার দেখাতে কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কাজে খুলনা যেতে অনেক সময় লাগে। অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয় এ অঞ্চলের মানুষের। সেতুটি নির্মান হলে এ অঞ্চলের মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হবে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী সোলাইমান গাজী বলেন, ব্রীজ নির্মাণের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। এমনভাবে কাজ যদি চালিয়ে যায় তাহলে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে ব্রীজটি উন্মুক্ত করে দিতে পারবে। ব্রীজের কাজ শেষ হলে এই উপজেলা সহ পাশাপাশি অন্যান্য জেলা-উপজেলার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হবে। এতে করে ব্যবসা বাণিজ্য ও ভালো হবে। তিনি আরো বলেন তাদের ঘেরের (মাছের) ব্যবসা ব্রীজটি হওয়াতে অন্যান্য জেলা উপজেলার সাথে ব্যবসা বাণিজ্য খুব সহজেই করতে পারবেন।
অন্য আরেক ব্যবসায়ী শাহিন গোলদার বলেন, আমাদের প্রতিদিন নদী পারাপার হতে হয়। বিশেষ করে ভাটার সময় নদী শুকিয়ে যায়, তখন পারাপার হতে খুব ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এখন এখানে ব্রীজ নির্মাণ করা হচ্ছে। এই ব্রীজ নির্মাণের কাজ শেষ হলে আমাদের আর ভোগান্তি পোহাতে হবে না। আমরা সহজেই পাইকগাছা শহরে যাতায়াত করতে পারবো। আমাদের সমস্ত ব্যবসা বাণিজ্য পাইকগাছা বাজারে প্রতিদিন বাজারে যাওয়া আসা লাগে। শিববাড়ি ব্রীজ দিয়ে ঘুরে যাওয়া অনেক সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এই ব্রীজের কাজ শেষ হলে সকলের জন্য ভালো হবে।
স্থানীয় লস্কর ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম এ প্রতিনিধিকে বলেন, উপজেলার কড়ুলিয়া নদীর উপর ব্রীজ নির্মাণের কাজ শেষ হলে যাতায়াত ব্যবস্থায় আসবে আমূল পরিবর্তন। ব্রীজের কাজ ও দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই ব্রীজের নির্মাণ কাজ করার জন্য মালবাহী যে ট্রাকগুলো এ সড়ক নিয়ে আসছে, সেটা এই সড়কের জন্য উপযুক্ত না। এত ভারী যানবাহন চলাচল এই রাস্তার জন্য একেবারে অনুপযোগী। এছাড়াও বাইনতলা বাজারে মানুষের যাতায়াতের জন্য যে রাস্তা করছে সেটা একেবারেই অনুপযোগী। একটু বৃষ্টি হলে ওই রাস্তা দিয়ে মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে রাস্তা মেরামত করার জন্য জানানো হয়েছিল তারা বলছিলেন বৃষ্টি কমলে রাস্তায় ইট বসিয়ে দিবেন কিন্তু এখনো পর্যন্ত বসানো হয়নি। এছাড়াও ব্রীজের রাস্তা গীলাবাড়ির সাথে সংযুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও সেটা না হয়ে গড়ইখালীর সাথে সংযুক্ত হচ্ছে। এতে লস্করবাসী খুব বেশি উপকৃত হবে না। খড়িয়ার মানুষের এ ব্রীজে উঠতে যত সময় লাগবে তার ভিতরে শিববাড়ি ব্রীজে পৌঁছে যাবে।
অন্যদিকে স্থানীয় সচেতন মহল বলেন, ব্রীজটি নির্মিত হয়ে মানুষের যেমন উপকার হবে তেমন অপকার (ক্ষতি) ও হবে। এই উপজেলায় আরো দুটি ব্রীজ এর পূর্বেও নির্মিত হয়েছে। এটা দিয়ে তিনটি ব্রীজ নির্মাণ করা হবে। নদীতে এত ব্রীজ নির্মাণ করায় নদীর নাব্যতা হারিয়ে ফেলছে , এতে করে আগামী কয়েক বছরে এ নদীতে পলি জমে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকবে না। ফলে এ উপজেলায় বন্যা দেখা দিবে। উপকারের থেকে তখন অপকারটা বেশি হবে।
তদারকি কর্মকর্তা, সজল বিশ্বাস, উপ-সহকারী প্রকৌশলী, পাইকগাছা বলেন, ব্রীজের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২৬ সালের মধ্যে কাজ শেষ হবে। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত সময়ের ভিতরে ব্রীজের কাজ সম্পন্ন করার। তিনি আরো বলেন লস্করের ঐ পাড়ে ব্রীজের গোড়ায় (তিন রাস্তার মোড়ে) একটি গোলচত্বর করা হবে যাহাতে গড়ইখালী, খড়িয়া, কয়রা এবং বড়দাল-আশাশুনির সকলের ব্রীজে উঠতে সুবিধা হবে।
প্রকল্প ম্যানেজার সাহেব আলী জনকন্ঠকে বলেন, ব্রীজের কাজ ইতিমধ্যে তেষট্রি (৬৩) শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।আমরা দ্রুত গতিতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আগামি বছরের মাঝামাঝি সময়ের ভিতরে সকল কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেন দু'পাড়ে তিন একর জমির প্রয়োজন। দু'পাড়ের জমি অধিগ্রহণের জন্য সমস্ত কাগজ পত্র ডিসি অফিসে পাঠানো হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের জন্য ইতিমধ্যে পরিদর্শনেও আসছিলেন।
উপজেলা প্রকৌশলী শাফীন সোহেব জনকন্ঠ প্রতিবেদককে জানান, লস্কর কড়ুলিয়া ব্রীজের কাজের অগ্রগতি ৬৩ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। সেতুটি দৈর্ঘ্য প্রায় পৌনে ১ কিলোমিটার ৯ দশমিক ৮ মিটার এবং (৩২ ফুট) প্রশস্ত হবে। দুই শত চল্লিশ (২৪০)টি পাইলের মধ্যে দুই শত সাতাশ (২২৭)টি সমাপ্ত হয়েছে।আশা করা যায় আগামী বছরের শেষের দিকে কাজ সম্পন্ন হবে। কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহেরা নাজনীন বলেন, ব্রীজটি নির্মিত হলে এই উপজেলার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হবে। এছাড়াও কয়েকটি উপজেলার মানুষ ও উপকৃত হবে। ব্রীজের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ের ভিতরে উন্মুক্ত করা যাবে।
আবির