
ছবি: সংগৃহীত।
সকালে ঘুম থেকে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যদি মুখটা ফোলা দেখেন, তাহলে সেটা মোটেই সুখকর অনুভূতি নয়। এটি হতে পারে অনিদ্রা, অতিরিক্ত লবণ খাওয়া, হরমোনের পরিবর্তন কিংবা স্রেফ মানসিক চাপের কারণে। তবে সুখবর হলো, মুখের ফোলাভাব কমাতে দামি প্রসাধনী বা সেলুন ট্রিটমেন্টের প্রয়োজন নেই—সকালের কয়েকটি সহজ অভ্যাসেই মিলতে পারে কার্যকর সমাধান।
১. ঠান্ডা পানি বা বরফ দিয়ে মুখ ধোয়া:
সকালে মুখে ঠান্ডা পানি দেওয়ার মতো সতেজ অনুভূতি আর কিছুতে পাওয়া যায় না। ঠান্ডা পানি রক্তনালিকে সংকুচিত করে, ফোলাভাব কমায় এবং ত্বককে জাগিয়ে তোলে। মডেল, অভিনেতা থেকে শুরু করে ত্বক বিশেষজ্ঞরাও এই কৌশলের প্রশংসা করেন।
ঘুম থেকে উঠে সরাসরি মুখে ঠান্ডা পানি ছিটিয়ে দিন। যদি ফোলাভাব বেশি হয়, তাহলে একটি বাটিতে ঠান্ডা পানি ও কয়েকটি বরফের টুকরো দিন এবং তাতে মুখ ডুবিয়ে রাখুন ১০–১৫ সেকেন্ডের জন্য। বিরতি নিয়ে আবার করুন। এতে চোখের নিচের ফোলা ভাব কমে যাবে এবং ত্বক টানটান দেখাবে।
আরও একটি কৌশল হলো—ফ্রিজে কয়েকটি স্টিলের চামচ রেখে দেওয়া। সকালে সেগুলো বের করে চোখের নিচে এক–দুই মিনিট চেপে ধরুন। এটি বিনামূল্যে ও তাৎক্ষণিক ফলদায়ক পদ্ধতি।
২. গুয়া শা বা হালকা মুখ ম্যাসাজ:
মুখে ম্যাসাজ করার মাধ্যমে লিম্ফ্যাটিক তরল নিষ্কাশন হয়, যা ফোলাভাবের অন্যতম কারণ। গুয়া শা নামের একটি বিশেষ টুল বা শুধু হাত দিয়েই এটি করা যায়।
মুখের মাঝখান থেকে বাইরের দিকে এবং নিচ থেকে উপরের দিকে হালকা চাপ দিয়ে ম্যাসাজ করুন। গালে, চোয়ালের রেখা ও চোখের নিচের অংশে বেশি মনোযোগ দিন। এতে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং মুখে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা আসে।
গুয়া শা না থাকলেও সমস্যা নেই—হাতেই চলে যাবে। ত্বকে একটু ফেস অয়েল বা হাইড্রেটিং সিরাম ব্যবহার করুন যাতে আঙুল সহজে গ্লাইড করে। পাঁচ মিনিট সময় দিলেই দেখবেন মুখটা অনেক বেশি সতেজ ও গঠিত দেখাচ্ছে।
আরও ভালো ফল পেতে গুয়া শা ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা অবস্থায় ব্যবহার করুন।
৩. ঘুম ভেঙে পানি পান করুন ও সোজা হয়ে বসুন:
সোজা হয়ে বসা এবং ঘুম থেকে উঠে পানি খাওয়ার মতো সহজ অভ্যাস অনেক সময় উপেক্ষিত হয়। সারা রাত চিৎ হয়ে ঘুমানোর ফলে মুখে, বিশেষ করে চোখের চারপাশে তরল জমে ফোলাভাব তৈরি হয়। তাই ঘুমের সময় বাড়তি একটি বালিশ ব্যবহার করে মাথা একটু উঁচু করে ঘুমানো ভালো।
সকালে উঠে কফির আগে একটি পূর্ণ গ্লাস হালকা গরম বা রুম টেম্পারেচারের পানি পান করুন। চাইলে এক টুকরো লেবুও দিতে পারেন। এটি শরীর থেকে বাড়তি সোডিয়াম ও টক্সিন বের করতে সহায়তা করে। হজম প্রক্রিয়াও সচল হয়, যা ত্বকে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
ঘুম থেকে উঠে বিছানায় অলসভাবে শুয়ে না থেকে উঠে হাঁটাহাঁটি বা স্ট্রেচিং করুন—এটিও লিম্ফ্যাটিক নিষ্কাশন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে।
৪. নাস্তা হোক লবণ ও চিনি মুক্ত:
রাতে চিপস বা আইসক্রিম খেয়ে থাকলে সকালে তার প্রতিফলন মুখেই দেখা যায়। সোডিয়াম শরীরে পানি ধরে রাখে আর অতিরিক্ত চিনি প্রদাহ সৃষ্টি করে।
সকালের নাস্তায় প্রক্রিয়াজাত খাবার না খেয়ে হালকা ও পুষ্টিকর কিছু বেছে নিন—যেমন শসা, তরমুজ বা পালং শাক, আদা ও বেরিসমৃদ্ধ স্মুদি। এসব উপাদানে প্রাকৃতিক অ্যান্টি–ইনফ্ল্যামেটরি গুণ রয়েছে, যা শরীরের ভেতর থেকে ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে।
চাইলে দিন শুরু করুন এক কাপ উষ্ণ গ্রিন টি বা ড্যান্ডেলিয়ন হরবাল চা দিয়ে—এটি হালকা ডিটক্স প্রক্রিয়া শুরু করে এবং ফোলাভাব হ্রাস করে।
৫. সকালের নরম ব্যায়াম:
মুখের ফোলাভাব কমাতে সকালের ব্যায়ামের জুড়ি নেই। জিমে যাওয়ার দরকার নেই—শুধু ১০ মিনিটের স্ট্রেচিং, হালকা হাঁটা বা ইয়োগা করলেই চলবে। এটি রক্ত চলাচল বাড়ায় ও লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমকে সক্রিয় করে।
নেক রোল, স্ট্যান্ডিং স্ট্রেচ বা ‘ডাউনওয়ার্ড ডগ’ পজিশন মুখে রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে ফোলাভাব কমায়। সময় থাকলে বাইরে একটু হেঁটে আসুন—শুধু ত্বক নয়, মন-মেজাজও ভালো হবে।
সকালে শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করলে শরীর বেশি অক্সিজেন পায়, যা ত্বককে আরও পরিষ্কার ও উজ্জ্বল রাখে। এই সহজ ৫টি অভ্যাস মেনে চললে প্রতিদিন সকালে মুখে সতেজ ও ফোলা-মুক্ত অনুভূতি পাবেন, তাও সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে।
মিরাজ খান