
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার রাতে জাপানের সঙ্গে একটি বহুপ্রতীক্ষিত বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান, দুই মিত্র এবং প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারের মধ্যে এই নতুন চুক্তিটি কয়েক সপ্তাহ আগেও অনিশ্চিত বলে মনে হচ্ছিল।
ট্রাম্প রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বলেন, “আমি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য চুক্তিতে সই করেছি ,সম্ভবত জাপানের সঙ্গে এটিই ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুক্তি।” তিনি আরও বলেন, “ওদের সেরা প্রতিনিধিরা এখানে ছিল, আমরা দীর্ঘ ও কঠোর পরিশ্রম করেছি। এটি সবার জন্যই একটি দারুণ চুক্তি।”
চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে জাপানি পণ্যে ১৫ শতাংশ ‘রিসিপ্রোকাল’ শুল্ক ধার্য হবে। বিশেষত, জাপানের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই শুল্ক হার গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশেও প্রযোজ্য হবে যা অন্যান্য গাড়ি রফতানিকারকদের তুলনায় জাপানকে সুবিধাজনক অবস্থানে রাখবে। কারণ এপ্রিল মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্র এই খাতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।
ট্রাম্প আরও জানান, জাপান যুক্তরাষ্ট্রে ৫৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে এবং এর ৯০ শতাংশ মুনাফা যুক্তরাষ্ট্র পাবে।
তিনি Truth Social-এ বলেন, “এই চুক্তির মাধ্যমে কয়েক লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এরকম কিছু আগে কখনও হয়নি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, জাপান এখন গাড়ি, ট্রাক, চাল ও অন্যান্য কৃষিপণ্যসহ আরও অনেক কিছুতে বাজার উন্মুক্ত করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ১৫ শতাংশ রিসিপ্রোকাল শুল্ক প্রদান করবে।”
চুক্তির ঘোষণার পরপরই জাপানি শেয়ারবাজার এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়, বিশেষ করে গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর শেয়ার বৃদ্ধির কারণে নিকেই সূচক ৩.৭% বৃদ্ধি পায়।
জাপানের ট্যারিফ আলোচক রিওসেই আকাজাওয়া এক্স-এ “Mission Accomplished” ক্যাপশনসহ হোয়াইট হাউসে তোলা নিজের একটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে তিনি ট্রাম্প ও জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার পুরোনো বৈঠকের ছবি দেখিয়ে দিচ্ছেন।
ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের আকাজাওয়া বলেন, “জাপান বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে গাড়ি ও যন্ত্রাংশে শুল্ক হ্রাস পাচ্ছে, যেখানে কোনো পরিমাণ সীমা নেই।”
টোকিওতে প্রধানমন্ত্রী ইশিবা বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত থাকা কোনো দেশের জন্য এটি এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন হার। তবে আমরা বিস্তারিত চুক্তিটি গভীরভাবে পর্যালোচনা করব।”
আকাজাওয়া জানান, জাপানের ৫৫০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ মূলত ফার্মাসিউটিক্যালস ও সেমিকন্ডাক্টরের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে জাপানি ব্যবসাগুলোর সমর্থনে ইক্যুইটি ও ঋণ হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে চাল আমদানির পরিমাণও বাড়তে পারে বলে জানান তিনি, তবে জাপানের কৃষিকে ‘বলি’ দেওয়া হবে না।
তবে মঙ্গলবারের এই চুক্তিতে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের মতো খাতগুলো অন্তর্ভুক্ত হয়নি যেগুলো এখনো ৫০ শতাংশ শুল্কের আওতায় রয়েছে। এই বিষয়ে আলোচনা চলমান থাকবে বলে জানান আকাজাওয়া।
এই বাণিজ্য চুক্তি ছাড়াও, ট্রাম্প আরও জানান যে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র একটি গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পে যৌথ উদ্যোগ গঠনের কাছাকাছি রয়েছে, যা আলাস্কায় বাস্তবায়িত হবে।
চুক্তিটির আগে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। গত মাসে ট্রাম্প Truth Social-এ অভিযোগ করেন, “তারা আমাদের চাল নেবে না, অথচ ওদের চালে ঘাটতি আছে।”
তবে মার্কিন পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে জাপান যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৯৮ মিলিয়ন ডলারের চাল কিনেছে এবং চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এই পরিমাণ ছিল ১১৪ মিলিয়ন ডলার।
ট্রাম্পের অভিযোগ, জাপান আমেরিকান গাড়ি নেয় না “গত দশ বছরে আমরা একটি গাড়িও দিইনি”। অথচ জাপান অটোমোবাইল আমদানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের মতে, ২০২৪ সালে জাপান যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৬,৭০৭ ইউনিট গাড়ি আমদানি করেছে।
শেষ পর্যন্ত আলোচনায় গতি আসে যখন মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট টোকিওতে প্রধানমন্ত্রী ইশিবার সঙ্গে বৈঠক করেন এবং পরে এক্স-এ জানান, চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
অর্থনীতিবিদ মেরি লাভলি বলেন, “এই চুক্তি জাপানকে ২৫ শতাংশ শুল্কের হুমকি থেকে রক্ষা করেছে এবং মার্কিন সরবরাহকারীদের তুলনায় প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা দিয়েছে।”
ট্রাম্প প্রশাসনের ভাষ্য অনুযায়ী, জাপানের এই নতুন চুক্তিটি ২০১৯ সালের বিস্তৃত বাণিজ্য চুক্তির ধারাবাহিকতা, যার ফলে অনেক পণ্য শুল্কমুক্তভাবে আমদানি-রপ্তানি সম্ভব হয়।
উল্লেখ্য, জাপান যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় বাণিজ্যিক অংশীদার এবং সবচেয়ে বড় বিদেশি ঋণদাতা। বর্তমানে জাপান যুক্তরাষ্ট্রের ১.১ ট্রিলিয়ন ডলারের ট্রেজারি বন্ড ধারণ করে।
Jahan