ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৫ জুলাই ২০২৫, ১০ শ্রাবণ ১৪৩২

কম খেয়েও ওজন না কমলে এই ৩টি স্বাস্থ্যপরীক্ষা করান

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ২৪ জুলাই ২০২৫

কম খেয়েও ওজন না কমলে এই ৩টি স্বাস্থ্যপরীক্ষা করান

ছ‌বি: প্রতীকী

অনেকেই আছেন যারা প্রতিদিন খুব কম খাচ্ছেন, নিয়ম করে ডায়েট মেনে চলছেন, কিন্তু তাও ওজন কিছুতেই কমছে না। এটা অনেক সময় হতাশাজনক হয়ে দাঁড়ায়। অনেকেই ভাবেন, হয়তো চেষ্টা ঠিকভাবে করছেন না বা আরও কম খেতে হবে। কিন্তু সব সময় কম খাওয়াই ওজন কমানোর সঠিক উপায় নয়। বরং এর পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে কিছু স্বাস্থ্যগত কারণ। শরীরের কিছু অভ্যন্তরীণ সমস্যা ওজন কমানোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই কম খেয়েও যদি ওজন না কমে, তাহলে শুধুই খাবারের পরিমাণ নয়, বরং কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে দেখা দরকার। নিচে এমন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার কথা বলা হলো, যেগুলো আপনার ওজন না কমার আসল কারণ বের করে আনতে পারে।

প্রথমত, থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য ঠিক আছে কি না, তা জানা খুব জরুরি। এই হরমোন শরীরের মেটাবলিজম বা বিপাকক্রিয়ার গতি নিয়ন্ত্রণ করে। যদি হাইপোথাইরয়ডিজম অর্থাৎ থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা কমে যায়, তাহলে শরীরের বিপাকক্রিয়া ধীরগতির হয়ে পড়ে। ফলে যতই কম খাবেন না কেন, শরীর সেই শক্তি পুড়িয়ে ফেলার গতি হারায় এবং ওজন কমে না, বরং অনেক সময় বেড়ে যায়। এই সমস্যা পুরুষ ও নারীদের উভয়েরই হতে পারে, তবে নারীদের মধ্যে তুলনামূলক বেশি দেখা যায়। তাই রক্ত পরীক্ষা করে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা জানা দরকার। সাধারণত TSH, T3 এবং T4 এই তিনটি উপাদানের মাত্রা মেপে সমস্যার ধরন নির্ধারণ করা হয়।

দ্বিতীয়ত, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স একটি বড় কারণ হতে পারে ওজন না কমার। আমাদের শরীর যখন ইনসুলিন হরমোনের প্রতি সাড়া দেওয়া বন্ধ করে দেয়, তখন তাকে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বলা হয়। এটি টাইপ-২ ডায়াবেটিসের পূর্বাভাসও হতে পারে। এই অবস্থায় শরীরের কোষগুলো ঠিকমতো গ্লুকোজ গ্রহণ করতে পারে না, ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায় এবং শরীর ফ্যাট হিসেবে তা জমিয়ে রাখে। ফলে ওজন বেড়ে যায় বা স্থির থাকে। এই অবস্থায় যতই কম খাবেন, শরীর গ্লুকোজ ব্যবহার করতে না পারলে মেদ জমতেই থাকবে। ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বোঝার জন্য ফাস্টিং ইনসুলিন এবং HbA1c বা গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট করিয়ে নেওয়া ভালো। সময়মতো ধরা পড়লে ডায়েট ও ব্যায়ামের মাধ্যমে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

তৃতীয়ত, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বা হরমোনাল ইমব্যালান্স ওজন বাড়ার আরেকটি গোপন কারণ হতে পারে। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে পিসিওডি (PCOS) বা পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম এই সমস্যার পেছনে দায়ী হতে পারে। এতে শরীরে অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা মেটাবলিজমকে ব্যাহত করে। মাসিক অনিয়ম, ব্রণ, মুখে লোম গজানো এবং ওজন বেড়ে যাওয়া—এই সবই পিসিওডির লক্ষণ হতে পারে। এ ছাড়া কর্টিসল, প্রোজেস্টেরন ও ইস্ট্রোজেনের ভারসাম্যহীনতাও ওজন কমতে না দেওয়ার পেছনে ভূমিকা রাখে। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এই হরমোনগুলো চেক করা গেলে শরীরের অবস্থা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায় এবং চিকিৎসা নেওয়া সহজ হয়।

ওজন কমানোর চেষ্টা শুধু খাওয়া কমানো বা ব্যায়ামের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। শরীরের অভ্যন্তরীণ যেকোনো জটিলতা ওজন কমাতে বাধা হতে পারে। তাই হঠাৎ করেই ওজন বাড়তে থাকলে কিংবা অনেক চেষ্টা করেও ওজন না কমলে শুধুই নিজের উপর দোষ না চাপিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রাথমিকভাবে এই তিনটি পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভালো। কারণ, সময়মতো সমস্যার ধরন জানা গেলে চিকিৎসাও সহজ হয়, আর আপনি ফিরে পেতে পারেন আপনার কাঙ্ক্ষিত ও সুস্থ শরীর।

এম.কে.

×