
ছবি: সংগৃহীত
চলতি মাসে ভারতের কর্নাটকের এক গভীর জঙ্গলঘেরা গুহা থেকে উদ্ধার করা হয় এক রুশ নারী ও তার দুই শিশুকন্যাকে। ৪০ বছর বয়সী ওই নারীর নাম নিনা কুটিনা। তাকে ঘিরে রহস্য বাড়ছে দিন দিন।
উদ্ধারের সময় নিনা পুলিশের কাছে দাবি করেন, তার পাসপোর্ট হারিয়ে গেছে। কিন্তু তার জিনিসপত্র তল্লাশি করতে গিয়ে একটি পুরনো, মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট পাওয়া যায়। যেখানে দেখা যায়, তিনি ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত একটি ব্যবসায়িক ভিসায় ভারতে ছিলেন।
তবে বর্তমানে তার ও তার ৬ ও ৫ বছর বয়সী দুই মেয়ের ভারতের ভেতরে থাকার কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। বর্তমানে তারা বেঙ্গালুরুর উপকণ্ঠে একটি বিদেশিদের আটক কেন্দ্রে অবস্থান করছেন এবং শিগগিরই তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া ভিডিও সাক্ষাৎকারে নিনা কুটিনা বলেন, “গুহায় বসবাস করে আমরা খুব ভালো ছিলাম। প্রকৃতির সঙ্গে থাকতে পেরে আমাদের শরীর ও মন ভালো আছে।” তার দাবি, গুহার জীবনে কোনো কষ্ট নেই, বরং মানুষের সমাজই এখন বেশি বিপজ্জনক।
তবে তিনি কীভাবে ওই গহীন জঙ্গলে এলেন, কতদিন ধরে সেখানেই ছিলেন কিংবা তার প্রকৃত পরিচয় কী—তা তখনো স্পষ্ট ছিল না। এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও রহস্য থেকেই যাচ্ছিল কুটিনা ও তার সন্তানদের আগমনঘটনার পেছনের কাহিনি।
অবশেষে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে তার পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়, ২২ জুলাই রাতে ভারতের ফরেনারস রিজিয়নাল রেজিস্ট্রেশন অফিস (FRRO) জানায়, নিনার দুই মেয়ের বাবার নাম ড্রোর গোল্ডস্টেন—একজন ইসরায়েলি ব্যবসায়ী। তিনি বর্তমানে ভারতেই অবস্থান করছেন।
ভারতীয় প্রশাসন ইতোমধ্যে গোল্ডস্টেনের সঙ্গে দেখা করেছে এবং তাকে পরিবারটির নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর খরচ বহনের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
২৩ জুলাই এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড্রোর গোল্ডস্টেন জানান, কুটিনা তাকে না জানিয়ে গোয়ায় চলে গিয়েছিলেন এবং এরপর তিনি থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। তিনি আরও বলেন, “আমি মেয়েদের যৌথ অভিভাবকত্ব চাই এবং আমি চেষ্টা করব যাতে তাদের রাশিয়ায় পাঠানো না হয়।”
অন্যদিকে, যখন পুলিশ নিনাকে সতর্ক করে বলেছিল গুহাটি নিরাপদ নয় এবং সাপ ও বন্যপ্রাণীতে ভরা, তখন তিনি উত্তর দেন, “সাপ ও বন্যপ্রাণী আমাদের বন্ধু। বরং মানুষই বিপজ্জনক।”
তার এই মন্তব্যে অনেকেই মনে করছেন, হয়তো অভিমান বা নিরাশা থেকেই নিনা ঘর ছেড়ে সন্তানদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন গহীন জঙ্গলের গুহায়। তার মানসিক অবস্থা ও অতীত জীবন এখন ভারতীয় প্রশাসনের তদন্তের আওতায় রয়েছে।
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=09gam7VnszY
রাকিব