
ছবি: সংগৃহীত
কেটলি—প্রতিটি ঘরের অতি পরিচিত একটি উপাদান। চা-কফি ছাড়া তো দিন শুরুই করা যায় না! তবে প্রশ্ন হচ্ছে—একবার ফুটানো পানি কি আবার গরম করা ঠিক? নাকি আগের পানি ফেলে দিয়ে তবেই আবার নতুন পানি গরম করা উচিত?
অনেকেই মনে করেন, একাধিকবার পানি ফুটালে তা স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। বিশেষ করে নানা সূত্রে শোনা যায়—বারবার ফুটানো পানিতে আর্সেনিক, নাইট্রেট, ফ্লোরাইডসহ নানা ক্ষতিকর ধাতু ও লবণ জমে গিয়ে তা বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে।
কিন্তু বাস্তবে বিষয়টি মোটেও এমন নয়। চলুন জেনে নিই বিজ্ঞান কী বলছে।
পানির মধ্যে কী থাকে?
উদাহরণস্বরূপ, অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় পানির সরবরাহকারী সংস্থা Sydney Water-এর তথ্য অনুযায়ী, তাদের সরবরাহকৃত পানির গুণমান জানুয়ারি-মার্চ ২০২৫ সালের মধ্যে ছিল নিম্নরূপ:
- পানি সামান্য ক্ষারীয় ছিল
- দ্রবীভূত কঠিন পদার্থের পরিমাণ এত কম ছিল যে পাইপ বা যন্ত্রপাতিতে কোনোরকম স্কেলিং তৈরি করেনি
- ফ্লোরাইডের মাত্রা দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী ছিল
- পানিটি “নরম” ছিল, অর্থাৎ এতে কঠিনতা ছিল খুবই কম (৪০ মি.গ্রা./লিটার এর নিচে)
পানিতে সামান্য পরিমাণে লোহা, সীসা ও সোডিয়াম ছিল—তবে তা এতই কম যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়। অস্ট্রেলিয়ান ড্রিংকিং ওয়াটার গাইডলাইনের নির্ধারিত সীমার অনেক নিচে এসব উপাদানের মাত্রা ছিল।
বারবার ফুটালে ক্ষতি হয় কি?
পানি ফুটলে শুধু তরল অংশটি বাষ্প হয়ে উবে যায়। পানি থেকে যেসব লবণ বা ধাতব পদার্থ পাওয়া যায়, সেগুলো সাধারণত পানি ফুটালে থেকেই যায়, বাষ্প হয়ে যায় না। তাই ফুটানোতে এসব উপাদানের পরিমাণ তেমনভাবে বাড়ে না।
ধরুন, আপনি সকালে ১ লিটার পানি ফুটিয়ে ২০০ মিলি. দিয়ে চা বানালেন। পরে বিকেলে ওই বাকি পানিটা আবার ফুটিয়ে চা করলেন। দুইবারই যদি পানিটা শুধু ফুটে উঠার পর বন্ধ করে দেন, তাহলে খনিজ বা ফ্লোরাইডের পরিমাণে উল্লেখযোগ্য কোনো পার্থক্য হবে না।
এমনকি যদি ধরে নেওয়া হয় বিকেলে পানিটা বেশিক্ষণ ধরে ফুটে, ১০০ মিলি. বাষ্প হয়ে যায়—তবুও ফ্লোরাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি এত সামান্য হবে (প্রথমবার ০.২০ মি.গ্রা., দ্বিতীয়বার ০.২৩ মি.গ্রা.) যে তা স্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগের কিছু নয়।
সীসার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। পানিতে যদি সীসার মাত্রা ০.০০০১ মি.গ্রা./লিটার হয়, তাহলে ক্ষতিকর মাত্রায় পৌঁছাতে হলে ২০ লিটার পানি ফুটিয়ে ২০০ মিলি. করে ফেলতে হবে—যা বাস্তবে কখনোই ঘটে না।
তাহলে স্বাদে পার্থক্য হয় কি?
স্বাদের দিক থেকে অবশ্য কিছু পরিবর্তন অনুভব করা যেতে পারে। কারণ, বারবার পানি ফুটলে তার মধ্যে থাকা অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যেতে পারে, বা খনিজের সামান্য পরিবর্তনে স্বাদে ভিন্নতা আসতে পারে। তবে সেটা একান্তই নির্ভর করে স্থানভেদে পানির গুণমান এবং ব্যক্তিগত রুচির উপর।
যদি আপনার ব্যবহৃত পানি মূলত নিরাপদ ও পানযোগ্য মানের হয়, তাহলে তা বারবার ফুটিয়েও নিরাপদ থাকে। কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা থাকে না।
সূত্র: দ্য কনভারসেশন।
রাকিব