
ছবিঃ সংগৃহীত
উচ্চ কোলেস্টেরলের সমস্যা শরীরে কোনো স্পষ্ট উপসর্গ না থাকায় অনেকেই সময়মতো বুঝতে পারেন না যে তারা এক নীরব অথচ মারাত্মক বিপদের দিকে এগোচ্ছেন। এই সমস্যার নাম ডিসলিপিডেমিয়া—একটি প্রচলিত কিন্তু প্রায়ই অবহেলিত স্বাস্থ্যগত জটিলতা, যেখানে শরীরে চর্বিজাত পদার্থের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। এতে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) বেড়ে যায়, ভালো কোলেস্টেরল (HDL) কমে যায় এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে বাড়ে হৃদরোগ, স্ট্রোক ও রক্তনালিতে চর্বি জমে যাওয়ার ঝুঁকি।
এই অসুস্থতা প্রাথমিকভাবে শরীরে তেমন কিছু জানান দেয় না। কিন্তু যখন ধমনিতে কোলেস্টেরল জমে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে, তখন হয়তো দেখা দেয় হঠাৎ বুক ধড়ফড়, ব্যথা, শ্বাসকষ্ট বা উচ্চ রক্তচাপ। এ ধরণের লক্ষণগুলো অনেকেই সাধারণ ক্লান্তি বা স্ট্রেস বলে মনে করেন, যা পরবর্তীতে বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্যমতে, প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে উচ্চ কোলেস্টেরলের কারণে প্রায় ২৬ লক্ষ মানুষ মারা যান এবং প্রায় ৩০ মিলিয়ন মানুষ দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতায় ভোগেন।
এই বিষয়ে হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মুম্বাইয়ের জসলোক হাসপাতালের ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট ডা. নিহার মেহতা বলেন, “ডিসলিপিডেমিয়া একটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য সমস্যা। তবে এর জন্য ওষুধের পাশাপাশি জীবনধারায় পরিবর্তন আনাও অত্যন্ত জরুরি। যারা আগে থেকেই উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন—যেমন ডায়াবেটিস, স্থূলতা বা পারিবারিকভাবে উচ্চ কোলেস্টেরল থাকার ইতিহাস রয়েছে—তাদের অবশ্যই নিয়মিত লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষা করা উচিত।” তিনি জানান, স্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরলের মাত্রা হলো: এলডিএল ১০০ mg/dL-এর নিচে, এইচডিএল পুরুষদের জন্য ৪০ mg/dL ও নারীদের জন্য ৫০ mg/dL-এর বেশি, ট্রাইগ্লিসারাইড ১৫০ mg/dL-এর নিচে এবং মোট কোলেস্টেরল ২০০ mg/dL-এর নিচে রাখা উচিত।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে ট্রান্স ফ্যাট ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট—যেমন ফাস্ট ফুড, ঘি, মাখন, লাল মাংস ও প্রক্রিয়াজাত খাবার। সেইসঙ্গে কমাতে হবে অতিরিক্ত লবণ ও চিনি গ্রহণ এবং পরিহার করতে হবে সফট ড্রিংক ও প্যাকেটজাত স্ন্যাকস। পাশাপাশি সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট হাঁটা বা ব্যায়াম করা, ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকা, ওজন ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং যদি অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, কিডনি বা লিভার জনিত সমস্যা থাকে, তবে নিয়মিত ওষুধ খাওয়া এবং চিকিৎসকের সঙ্গে ফলোআপ রাখা খুব জরুরি।
ডা. মেহতা আরও বলেন, "এই ধরণের সমস্যা এক দিনে তৈরি হয় না, আর সমাধানও এক দিনে সম্ভব নয়। কিন্তু সচেতনতা, রুটিন স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনের মাধ্যমে এই বিপজ্জনক অবস্থা থেকে অনেকাংশেই নিজেকে রক্ষা করা যায়।"
শেষ কথায় বলা যায়, ডিসলিপিডেমিয়া একটি নীরব ঘাতক হলেও, আপনি চাইলে নিজেই হতে পারেন নিজের রক্ষক। খাবারে নিয়ন্ত্রণ, অভ্যাসে সংযম এবং নিয়মিত পরীক্ষা—এই তিনটিই হতে পারে হৃদয়ের প্রকৃত নিরাপত্তা।
মারিয়া